নাইম আবদুল্লাহ: ‘বিগেস্ট মর্নিং টি’ মরণব্যাধি ক্যানসার নিরাময়ের ব্যয়বহুল রিসার্চের জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি সেবামূলক সংগঠন। প্রতি বছর মে মাস ছিল গুড মর্নিং বাংলাদেশের জন্য সিডনি ক্যানসার কাউন্সিলের তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ স্মরণীয় মাস। সারা অস্ট্রেলিয়াব্যাপী স্কুলের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যেমন বিভিন্ন প্রোগ্রাম করে, চকলেট বিক্রি করে পয়সা তুলে তেমনি বড় বড় কোম্পানির মালিকরাও চা-চক্রের আয়োজন করে এ মহৎ কাজের জন্য। এমনকি বাসায় বাসায় এর নামে টিনের বাক্সে খুচরো পয়সা জমা করে ক্যানসার কাউন্সিলের ফান্ডে জমা দেন অনেক পরিবার।
সিডনিতে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ মানবিক কাজে সাড়া দিয়েছেন প্রায় প্রথম থেকেই। গত ১৫ বছরের মতো এবারেও মে মাসের ১, ৮, ১৫ এবং ২২ তারিখের চার রোববারে বাংলাদেশি স্টাইলে সিডনিতে আয়োজিত হলো ‘বিগেস্ট মর্নিং টি’। নিউ সাউথ ওয়েলস ক্যানসার কাউন্সিলের জন্য অর্থ সংগ্রহে প্রবাসী বাংলাদেশি কম্যুনিটির এ মহতী উদ্যোগের কথা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংসদের পার্লামেন্টেও উল্লাস আর করতালির মাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছে।
২০০১ সালের শুরুতে এ প্রোগ্রামটি সিডনির পশ্চিমাঞ্চল ব্ল্যাক টাউনে মাত্র ৮০০ ডলার সংগ্রহ করে যাত্রা শুরু করে। গত বছর ২০১৫ সালে সর্বমোট সংগ্রহের পরিমাণ এক লাখ বিশ হাজার ডলারের বেশি। এই বিশাল সংগ্রহের প্রায় পুরোটাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্যবদ্ধতা, নিঃস্বার্থ ও নিরন্তর প্রচেষ্টার ফসল।
এ মাসে সিডনির চার ভেন্যুতে চার রোববারে আয়োজিত হচ্ছে এ সকালের নাস্তার আয়োজন ‘গুড মর্নিং বাংলাদেশ’ এ ব্যানারে। শহরের পশ্চিমাঞ্চল ব্ল্যাকটাউন এবং ইঙ্গেলবার্নে দুটি, মধ্যাঞ্চল লাকেম্বায় একটি এবং পূর্বাঞ্চল ম্যাস্কট সাবার্বে আর একটি। প্রতিটি জায়গাতেই সকাল ৯টা থেকেই প্রতিটি অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ অংশগ্রহণকারী আর ক্রেতা দর্শকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
সদ্য ভাজা পরোটা, সদ্য হাড়ি থেকে নামানো ভাজি, মাংস আর গরম গরম ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, সিঙ্গারা, বিফ পেস্ট্রির গন্ধে মুখরিত থাকে প্রতিটি সেন্টার। এ ছাড়াও ছিল মিষ্টি প্রিয় বাঙালিদের হরেক রকমের মিষ্টি চমচম, জিলাপি, রসগোল্লা, রসমালাই, মুখ পাখন, পাটি সাপ্টা, তেলের পিঠা, নারিকেলের পিঠা ইত্যাদি। এ সব খাবারের আয়োজনে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন স্থানীয় মহিলা সমাজ। তারা সবাই শতভাগ উৎসাহ আনন্দ নিয়ে এই ফান্ড রেইজিং অনুষ্ঠানের মহৎ উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করেন।
প্রতিটি আয়োজনে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা ছাড়াও ক্যানসার কাউন্সিলের পরিচালক মণ্ডলির বিশিষ্টজনরা বাংলাদেশিদের উৎসাহ যোগাতে, ধন্যবাদ জানাতে আসেন।
অনুষ্ঠানগুলোতে স্থানীয় বাংলাদেশি নেতাদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে সম্মিলিত ও নিঃস্বার্থ অংশগ্রহণের কথা। তারা বলেন, দল- মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবার সার্বিক অংশগ্রহণ এবং তার সফল ফলাফল প্রমাণ করে আমরা চাইলেই দেশের জন্যও অনেক বড় বড় জনহিতকর কাজের অর্থ সংগ্রহ করতে পারি।
এই রকম সুন্দর সফল আয়োজন অন্যদের জন্য অনুকরণযোগ্য।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকায় আহসানিয়া ক্যানসার হাসপাতালের কথা উল্লেখিত হয়। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের বিরাট অবদানে আহসানিয়া ক্যানসার হাসপাতালের কার্যক্রম অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। গরিব দুখী ক্যানসার রোগীদের বিনা অর্থে সেবার কাজ চলছে পুরদমে। ‘বিগেস্ট মর্নিং টি’ এর অন্যতম আয়োজক ড. আব্দুল হক এবং ডাক্তার আয়াজ চৌধুরী অস্ট্রেলিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহসানিয়া ক্যানসার হাসপাতালে অবদানের কথা গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, ভবিষ্যতেও যেন আমরা এরকম কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে পারি। সেজন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান।