বাঙালী জাতির সবচেয়ে বড় অর্জন – মহান স্বাধীনতা।বাঙালীর শৃঙ্খল মুক্তির দিন। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালী ।এই দিনটির কথা স্মরণ করে বাংলাদেশ থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে সিডনির বুকে সমবেত হয় বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ানরা।
গত ২৪ শে মার্চ সন্ধ্যায় সিডনি বাঙালী কমিউনিটি ইন্কের আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পালিত হয় মহান স্বাধীনতা দিবস।
স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল অস্ট্রেলিয়ায় বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের সংগঠন ‘কিশোর সংঘে’র সমবেত কণ্ঠে দেশের গান। শিশু-কিশোরদের দল ‘কিশলয় কচিকাঁচা’র বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মৌলিক গানের পরিবেশনা সকলকে মুগ্ধ করে। কিশোর সংঘের পরিচালনায় ছিলেন সীমা আহমেদ এবং ‘কিশলয় কচিকাঁচা’র পরিচালনায় ছিলেন রোকসানা রহমান।
এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান তরুণের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিয়ে মৌলিক গান পরিবেশন করেন ‘সংগীতধারা’।পরিবেশনায় অংশ নেন মহিন আবরার, অমিত বরন সাহা , আব্দুল আজিজ ,রোকসানা রহমান, মিজানুর রহমান, ও আনিসুর রহমান।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একক গান গেয়েছে ছোট্টবন্ধু ঈশান তারিক।
এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে চ্যানেল ফেডারেল এমপি এনি স্ট্যানলি এবং বিশেষ অতিথিঃ হিসেবে ছিলেন স্ট্যাট এমপি অনুলাক চান্টিভং।
এনি স্ট্যানলি সিডনিতে বসবাসরত বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান শিশু-কিশোরদের মাঝে দেশীয় অতিহ্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে ঊল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার জন্য সিডনি বাঙালী কমিউনিটির প্রশংসা করেন।
স্ট্যাট এমপি অনুলাক চান্টিভং সিডনীতে শহীদ মিনার স্থাপনের এবং আন্তজাতিক মাতৃভাষা পালনের পক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত করেন ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের বরেণ্য শব্দসৈনিক শিমুল মুস্তাফা মঞ্চে আসেন। প্রথমেই ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি তার পরিবেশনা শুরু করেন।
শিমুল মুস্তাফা এক এক করে বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা কবিদের কবিতার লাইনগুলো আবৃত্তি করে শোনান। তার আবৃত্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’, , সুনেত্রা ঘটকের ‘রচনা রবীন্দ্রনাথ’,নির্মলেন্দু গুনের ‘আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি’, ‘তোমার চোখ এতো লাল’, হেলাল হাফিজের ‘কষ্ট নেবে কষ্ট’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাঁশি’, জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ এবং হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’। এছাড়াও শিমুল মুস্তাফা সাথে দ্বৈত আবৃত্তিতে অংশ নেয় ঐহিক তারিক ও নুশরাত জাহান স্মৃতি এবং গানে কণ্ঠ মেলান আরেফিনা মিতা।
শিমুল মুস্তাফা কবিতার মাঝে বলেছেন মধ্যবিত্ত বাঙালির কথা, সংগ্রামের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা, বাংলার মায়ের কথা, বাবার কথা। মন্ত্রের মত মুগ্ধ করে রেখেছিলেন উপস্থিত শ্রোতাদের। প্রবাসে এমন পরিবেশনা দুর্লভ।
শিমুল মুস্তাফা উপস্থিত শিশু-কিশোরদের পিতামাতার উদ্দেশ্যে বলেন বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সময়ের পার্থক্য ছাড়া আর কোন দূরত্ব নেই। তিনি বলেন, সিডনি-বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক প্রবাসে নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় যেভাবে উৎসাহিত করছে তা প্রশংসার দাবিদার। তিনি আরও বলেন এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এবং প্রয়োজনে আগ্রহী শিশু-কিশোরদেরকে বাংলা উচ্চারণ শিক্ষার জন্য যতটুকু সহায়তা প্রয়োজন তা তিনি করবেন।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কবিতা আবৃত্তিতে বিশেষ সাফল্যের জন্য ঐহিক তারিক, অনুভা আহমেদ, ঈশান তারিক , আদ্রিতা রহমান, রায়ান হক ও জাহিদ তাইসির কে সার্টিফিকেট প্রদান করেন শিমুল মুস্তাফা।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন রোকসানা রহমান।
অনুষ্ঠানে যন্ত্রে সহযোগিতা করেন – লোকমান হাকিম (মন্দিরা), সাকিনা আক্তার (তবলা)।
মঞ্চসজ্জায় ছিলেন এরিস, সঞ্চার ও অশ্রু।
শব্দ নিয়ন্ত্রনে ছিলেন :আত্তাবুর রহমান ।
পোশাক এবং সাজসজ্জায় সহায়তা করেন বিলকিস খানম পাঁপড়ি ও পূরবী পারমিতা বোস।
মিডিয়াতে সার্বিক সহায়তা করেন কাজী সুলতানা শিমি।
প্রচারে ছিলেন শাহেদ রহমান ও শাহীন আক্তার স্বর্ণা।
আপ্যায়নে ছিল লিটল ইন্ডিয়া।
অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন ক্যাম্পবেলটাউন ফার্মেসী ও মাইরিয়ালিটি রিয়েল এস্টেট।
অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন অজয় দত্ত ও সেলিমা বেগম।