“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার” – একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন

“লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার” – একুশের চেতনা’র বৈশ্বিক প্রাতিষ্ঠানিক দর্শন

(১ম পর্ব- “দার্শনিক ভিত্তি”)

ইউনেস্কোর গবেষণা মতে দ্রুত বিশ্বায়নের পাশাপাশি প্রতি পনের দিনে পৃথিবী থেকে একটি করে ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। ভয়াবহ এই ধারা অব্যাহত থাকলে একবিংশ শতাব্দীর শেষে বিশ্বের তাবৎ ভাষার সংখ্যা দাঁড়াবে বর্তমানের অর্ধেকে। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে মুছে যাবে বর্তমানে ব্যবহৃত প্রায় ৩,০০০টি ভাষা। আগামী দিনগুলিতে বহুভাষার প্রাচুর্যতাপূর্ণ সুন্দর এই বিশ্ব সমাজ, সভ্যতা, শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে বহুবিধ প্রতিকূলতার সন্মুখীন হবে। ভাষা অবক্ষয়ের ভয়াবহ এই প্রভাব থেকে সারাবিশ্বের ভাষাসমূহকে রক্ষা করতে ঝুঁকিপূর্ণ ভাষাসমূহ সংরক্ষণে সকল ভাষাভাষীদের নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চায় উদ্ভুদ্ধকরণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সনে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ত্রিশতম অধিবেশনে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনে সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। ‘ভাষা’ সময় ও স্থানের সাথে পরিবর্তনশীল এবং সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীই যেকোন ভাষার বাহক, ভাষাভাষীর মাধ্যমেই একটি ভাষার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, গড়ে উঠে সংস্কৃতি, কৃষ্টি। যেকোন ভাষার নিয়মিত ব্যবহার এবং বাহক ছাড়া ভাষার অস্তিত্ব বা প্রচলন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়, তবে সংরক্ষণ সম্ভব। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপনের ইউনেস্কোর এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রত্যেকটি ঝুঁকিপূর্ণ ভাষাভাষী নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চা এবং রক্ষায় অনুপ্রাণিত হবে, বিশ্বসমাজ অবক্ষয়মুখী ভাষা সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় যত্নশীল হবে; এই বিশ্বাস থেকেই আন্তর্জাতিক এই দিবস উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে অন্যান্য আন্তর্জাতিক দিবসগুলি উদযাপনের ন্যায় শুধুমাত্র বছরের একদিন মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে অবক্ষয়মান মাতৃভাষাসমূহের অবক্ষয়ের ভয়াবহ এই ধারা রোধ করা সম্ভব নয়। অবক্ষয়মান ভাষা রক্ষায় জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীদের মাতৃভাষা চর্চায় গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সাহায্যকারী সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক এবং সাহায্যকারী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাবস্থা, যার মাধ্যমে ভাষা চর্চার প্রতি সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীর আগ্রহ সৃষ্টিসহ ভাষা সংরক্ষণে সমন্বিত স্থায়ী অবকাঠামো সারা বছরব্যাপী কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করবে।  এবং, প্রয়োজন ইউনেস্কোর গবেষণালব্দ তথ্যানুযায়ী ভয়াবহ অবক্ষয়ের গতিরোধে বিশ্বব্যাপী প্রাতিষ্ঠানিক গনসচেতনতা সৃষ্টির সম্মিলিত কার্যকরী কৌশল, সমন্বিত পরিকল্পনা এবং সামগ্রিক প্রচেষ্টা।

বিশ্বায়নের জোয়ারে প্লাবিত ভাষা অবক্ষয়ের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটসমূহের অনিবার্য বাস্তবতা এবং এই ভয়াবহ অবক্ষয়রোধে গৃহীত ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তের আলোকে পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে সক্রিয় এবং অর্থবহভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে মাদার ল্যাংগুয়েজেস কন্সারভেশন(এমএলসি)মুভমেন্ট ইন্টারন্যাশন্যাল প্রণীত কৌশলগুলির মধ্যে বিশ্বের সর্বত্র প্রচলিত লাইব্রেরী ব্যবস্থার সাথে লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা স্থানীয় সকল ভাষা সংরক্ষণের একটি সার্বজনীন সার্বক্ষণিক সাহায্যকারী প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল। বিশ্বব্যাপী প্রচলিত লাইব্রেরী প্রথার সাথে লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার সংযোজনের ব্যবস্থা একটি বাস্তবায়নসম্মত বৈশ্বিক প্রায়োগিক কার্যকরী দর্শন। যা বর্তমান লাইব্রেরী ব্যবস্থাপনার প্রচলিত সেবামূলক প্রথা- তথা প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের সাথে সামান্য সংযোজন/সম্প্রসারণের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব। উদ্ভাবিত একুশে কর্নার দর্শনের প্রভাব প্রতিফলিত হবে সকল সমাজ ব্যবস্থার সর্বস্তরে বিস্তৃত, গভীরে প্রোথিত এবং দীর্ঘসূরী। যার মাধ্যমে স্থানীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণে সকল ভাষাভাষীকে সরাসরি সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে মাতৃভাষা সমূহের প্রাতিষ্ঠানিক সংরক্ষণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। স্থানীয় সকল ভাষাসমূহের নিবন্ধিকরণ, পারস্পরিক যোগসূত্র সৃষ্টি, সংশ্লিষ্ট গবেষণা এবং সংরক্ষণে একটি বৈশ্বিক সাধারণ ধারা প্রবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বিশ্বের সর্বত্র একই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি সৃষ্টির মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীর নিত্য-নিয়মিত অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করাই লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার দর্শন প্রবর্তনের ধারণা সংকলিত হয়।

সভ্য সমাজে একটি “লাইব্রেরী”- একাধারে একটি সমাজের সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির ঐতিহাসিক দর্পণ, এবং সেরেস্তা বা লেখ্যাগার। লাইব্রেরী প্রথায় (প্রতিষ্ঠানে) যুগ-শতাব্দী প্রাচীনকালের সংগৃহীত এবং সংরক্ষিত তথ্য, শিল্প-সাহিত্য, সামাজ-সংস্কৃতির উন্নয়ন বিবর্তনের প্রামান্য দলিল, নথিপত্র ইত্যাদি সাধারণের ব্যবহার বা ধার করার সেবামূলক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা রয়েছে। যা মানব সভ্যতা-শিক্ষার ধারাকে আদিকাল থেকে অনন্ত ভবিষ্যতের সাথে সংযুক্ত করেছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখান অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রায় ১০কোটি মানুষ নিয়মিতভাবে শুধুমাত্র ৩৫০ হাজার পাবলিক লাইব্রেরীর সেবাগ্রহন করে থাকে। লাইব্রেরী সেবাব্যবস্থার চারটি শাখা(একাডেমিক, পাবলিক, স্কুল এবং বিশেষ লাইব্রেরী)মিলিয়ে এই সেবা গ্রহণকারীদের মোট সংখ্যার চেয়ে অনেক গুণ বেশী। উদাহরণ সরূপ শুধু অ্যামেরিকার   ১১৯,৪৮৭টি লাইব্রেরীর মধ্যে ৯৮,৪৬০টি স্কুল লাইব্রেরী রয়েছে। রাশিয়া, চীন এবং ভারতের প্রত্যেক দেশেই ৫০ হাজার করে লাইব্রেরী, এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহে ২৩০ হাজার লাইব্রেরী নিয়মিত সেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৫৩২টি স্থানীয় সরকারী প্রশাসনের অধীনে ১৭১৬টি লাইব্রেরী এবং ৮টি জাতীয় ও স্টেটের অধীনে ১৭টি লাইব্রেরী পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে লাইব্রেরীর সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশী, তন্মধ্যে বাংলাদেশ লাইব্রেরী এসোশিয়েশনের সাথে নিবন্ধিত লাইব্রেরীর সংখ্যা ৩,৫০০। আধুনিক লাইব্রেরী সেবাপ্রথায় সাধারণত ব্যাবহারকারী, কারিগরি, কম্পিউটার এবং প্রশাসনিক এই চারটি শ্রেণী ভিত্তিতে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। লাইব্রেরীর প্রধান সংগ্রহ, সম্পদ তথা সামগ্রিক সেবার বিষয়- ভাষা, সাহিত্য এবং তথ্য ভিত্তিক, সেবা গ্রহণকারীদের ব্যবহার কেন্দ্রিক। অধিকিন্তু লাইব্রেরী সমূহের পারস্পরিক আন্তঃযোগাযোগ সেবামূলক ব্যবস্থার সুযোগ এই সেবামূলক ব্যবস্থাকে মানুষের অনেক কাছাকাছি পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রচলিত চিরাচরিত সামাজিক সেবাপ্রথার সাথে লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার দর্শনের সংযোজন ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষা সংরক্ষণে সহজেই সকলের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করেতে সক্ষম।

লাইব্রেরী বিশ্বসমাজ, সভ্যতা, শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রসার, সংগ্রাহক, সংরক্ষক এবং যেকোন স্থানীয় সমাজের উত্থান-উন্নয়নের প্রতিকৃতী। যা মূলত সামাজিক উত্তরণের ধারাবাহিকতা এবং প্রসার, সম্প্রসারণ ও যোগসূত্র স্থাপনে সারা মানবজাতির সেবায় বিশ্ববিস্তৃত নিবেদিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী লাইব্রেরীর প্রচলিত কার্যক্রমের সাথে সহজেই বাস্তবায়ন করা যায় এমন একটি সমন্বিত কৌশল সারাবিশ্বে মাতৃভাষা অবক্ষয়ের ভয়াবহতার ধারারোধে লাইব্রেরী প্রথা অত্যন্ত কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ ভুমিকা রাখতে পারে।  বদ্ধমূল এই বিশ্বাসের আলোকে প্রণীত “লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার দর্শন” সারাবিশ্বের মাতৃভাষা অবক্ষয়ের ভয়াবহতার ঝুঁকিরোধে বিশ্বের সর্বত্র পরিচালিত লাইব্রেরী প্রথার কার্যকরী ব্যবহার তথা সংগ্রহ-সেবার সামান্য সম্প্রসারনের মাধ্যমেই সম্ভব। যা অচিরেই ইউনেস্কো ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের সারাবছরব্যাপী প্রস্তুতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে উন্নীত লাইব্রেরী ব্যাবস্থাক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার স্থাপনার দর্শনের উদ্ভাবন প্রচলিত লাইব্রেরী ব্যবস্থাকে কার্যকরীভাবে আরও গণমুখী এবং গণসম্পৃক্তকরে ব্যাবহারের উদ্ভাবিত একটি প্রায়োগিক, কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ কৌশলী দর্শন।  যেকৌশল বাস্তবায়নের ফলে একদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের গুরুত্ব ও প্রচারণা বছরব্যাপী সম্প্রচারে উজ্জীবিত থাকবে, অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীদের ভাষাচর্চার সুযোগ এবং সংরক্ষনে সংশ্লিষ্ট ভাষাভাষীসহ লাইব্রেরী সেবার সাথে সম্পৃক্ত কর্মী এবং ভাষা বিষয়ক পেশাজীবীদের সকলকে উৎসাহিত করা, এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি স্থানীয় লাইব্রেরীর অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সকল ভাষার বর্ণমালা সমূহের সংগ্রহ এবং সংরক্ষন নিশ্চিত হবে, যা পরবর্তীতে লাইব্রেরী সেবাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা গবেষণায় কাজ সহজতর হবে। ইউনেস্কোর গবেষণার উপর ভিত্তি করে সারাবিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষাসমূহ রক্ষার লক্ষ্যে গণসচেতনতা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে ঘোষিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার স্থাপনার দর্শনই হবে মাতৃভাষা সংরক্ষণের সম্প্রচারের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি। প্রচলিত লাইব্রেরী প্রথার সাথে একুশে কর্নার স্থাপনার দর্শন বাস্তবায়নে ইউনেস্কোর প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে সকল সদস্য রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চা এবং রক্ষায় বিশ্বব্যাপী ব্যপক গণসচেতনতা সৃষ্টি সহজতর করবে, যা বছরব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্যকে প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়নের কার্যকরী সম্প্রচার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।

লাইব্রেরী সমাজ, সভ্যতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির প্রামান্য দলিল দস্তাবেদ ইত্যাদি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ কেন্দ্র। একটি সমাজের সভ্যতা শিক্ষা সংস্কৃতির ক্রমোন্নয়নের ধারা এবং সমাজ বিবর্তনের প্রতিচ্ছবি লাইব্রেরীর সংগ্রহশালার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। মূলত সংগ্রহশালার মুখ্যসংগ্রহ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রচারিত গ্রন্থ, ঐতিহাসিক প্রামান্য দলিল, বিশিষ্ট লেখকের প্রকাশনা, বুদ্ধিজীবী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবনালেখ্য, ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান, আর্ট, শিল্পকর্ম ইত্যাদি। এসব কিছুই কোন না কোন একটা ভাষার মাধ্যমেই সাধারনের ব্যবহার উপযোগী করে সংগৃহীত হয়ে লাইব্রেরী সেবাপ্রথায় যুক্ত হয়। কালের বিবর্তনে প্রজন্মান্তরে যা পাঠকের জ্ঞান মেধাকে সমৃদ্ধ করে সমাজ ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। আধুনিক বহুজাতিক বা বহুভাষাভাষী ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রচলিত পাবলিক লাইব্রেরীগুলিতে সম্ভাব্য সকল ভাষাভাষীর ভাষার বই/গ্রন্থ সংগ্রহ এবং সেবাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি সর্বসাধারণের ভাষা সংস্কৃতি কৃষ্টিকে বহুজাতিক সমাজব্যবস্থায় টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয় বাস্তব প্রচেষ্টা। বিশেষ করে বিশ্বায়নের এই যুগে অভিবাসনের উন্মুক্ত সুযোগের ফলে বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের কাছে লাইব্রেরী ব্যবস্থার এই সুযোগ-সুবিধা মানব সভ্যতা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে বিশ্বের সর্বত্র বিস্তৃত একটি ইতিবাচক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপ্ত বিশাল এই প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত সকল ভাষাভাষীর বিশাল জনগুষ্টির সাথে মাতৃভাষা সংরক্ষন প্রক্রিয়ায় সেবাদানের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতকরণের কৌশলের সমন্বয়তা মাতৃভাষা অবক্ষয়ের ভয়াবহতা কাটিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মাতৃভাষা সমূহকে অনিবার্য বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা করা বা দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব। “লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার দর্শন”এর উদ্ভাবন এবং বিশ্বব্যাপী কার্যকরী বাস্তবায়ন ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মাধ্যমে বিশ্বায়নের সাথে নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চা এবং সংরক্ষনে সকল ভাষাভাষীকে সারাবছরব্যাপি উৎসাহ যোগানোর বাস্তবভিত্তিক প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা প্রদান করবে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন এর দীর্ঘসূরী নিত্যদিনের প্রক্রিয়ার কাফেলায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত হবে, সংরক্ষিত হবে নিজ নিজ মাতৃভাষা।

(চলবে)

(২য় পর্বঃ দার্শনিক উপাদান)

লেখক পরিচিতিঃ নির্মল পাল; ইমেইলঃ nirmalpaul@optusnet.com.au

প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপারশনঃ             এমএলসি মুভমেন্ট ইনটারন্যাশন্যাল ইনক

প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নকারী দলনেতাঃ      পৃথিবীর প্রথম “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্মৃতিসৌধ”

প্রকাশিত গ্রন্থঃ                           “বিশ্বায়নে শহীদ মিনার”

বৈশ্বিক দর্শনঃ                            “লাইব্রেরীতে একুশে কর্নার”, (স্থানীয়