আগে একটা ব্যাপার আমাকে অল্প অল্প যন্ত্রনা দিত, দিনে দিনে এই ব্যাপারে যন্ত্রনা বাড়ছে তাই যন্ত্রনা ভাগ করার চেষ্টা!! নারীকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে উঁচুমানের, ভালোবাসায় ভরপুর, নিখুঁত, শ্রদ্ধেয়, পূজ্যতুল্য এতো বিশেষণ ব্যবহারের অন্তর্নিহিত কারণ এখনো বুঝে না উঠতে পারার যন্ত্রনা।
সুদূর সুদূর প্রাচীনকালে সমাজে কার ভূমিকা কি হবে ঠিক কে করেছিল? পুরুষ নিশ্চয়! সেইসময় শিক্ষার সুযোগ কারা পেয়েছিলো? পুরুষ তাই না!! নীতি নিয়ম তৈরির দায়িত্ব কার হাতে ছিল? পুরুষ তাই না! কর্তৃত্ব কার হাতে ছিল? পুরুষ তাই না! এখন যেমন সারা পৃথিবীতে কোনটা জায়েজ কাজ আর কোনটা না সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব কার? আমেরিকার!! আর সেই সুযোগে সারা পৃথিবীতে যা ঘুষ বলে ধিকৃত তা নিজের দেশে লবিং নাম চালু রাখছে কারা? আমেরিকা!! কত অবৈধ কাজ শুধুমাত্র যুক্তি দিয়ে (গ্রহণযোগ্য হোক আর না হোক) বৈধ করার চেষ্টায় এরা সার্থক হয়েছে এ নিয়ে আরেক রচনা লেখা যাবে ….. তুলনা দেয়ার কারণটা হচ্ছে নিজের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টাতে কে কি করতে পারে তার একটা ধারণা দেয়া!!
প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন গল্প, কবিতা, উপন্যাস, খনার বচন ইত্যাদির মাধ্যমে মেয়েদের যা শিখানো হতো এবং এখনো হচ্ছে তা হলো মেয়েদেরকে রূপে, গুনে, শিল্পকলায়, কলাকৌশলে, ভালোবাসায়, ঔদার্য্যে, দান-খয়রাতে ভরপুর, উচ্চ পর্যায়ের ধার্মিক এক প্রজাতি হতে হবে। ইদানিংকালে মাধ্যম হিসাবে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞাপন, মিডিয়া, সিনেমা এবং নারীদের দক্ষতার তালিকায় যুক্ত হয়েছে শিক্ষা, ফ্যাশন, কর্ম, উঁচু পদবি ইত্যাদি! এই যে আমাদের “উপরে উঠিয়ে নিচে নামিয়ে দেয়া হলো” আমরা আমাদের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে তা কি বুঝতে পারছি, কি জানি?!
আর পুরুষের ভূমিকা নির্ধারিত হলো এই ভাবে, পুরুষের ক্ষেত্রে রূপ বা শিল্পকলা তেমন জরুরি না যতটা মেয়েদের ক্ষেত্রে। মেয়েরা কলাকৌশলে পারদর্শী হবে তবে তা সংসারে (যার নাম হবে কুটনামি) আর পুরুষের পরিধি হবে বাহিরে (যার নাম হবে কূটনীতি)! আরো নির্ধারিত হলো, পুরুষের ক্ষেত্রে সংসারে বা জীবনে ভালোবাসা অল্প খরচ করাও জায়েজ কারণ বাকিটা দেয়ার জন্য তো নারীরাতো আছেই, সবার জীবনে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব যে তাঁদের। ছেলেমেয়েদের মানুষ করার দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মায়ের কারণ ওই যে “মায়ের চেয়ে বড় কেহ নাই” এই বলে গান বানায়ে তো নারীদের মাথায় জায়গা দেয়া শেষ, যা নারীকে উৎসাহ দেয়ার জন্য অবশ্যই যথেষ্ট!! সবকিছুতে নারী superior কিন্তু এর পরে সংসারের কর্তা, সমাজের কর্তা এবং দেশের কর্তা কে? জবাবটা কৌতুককর!!
এই বিষয়টা নিয়ে বলা বেশ কঠিন, তাও বলছি – ওইযে সনাতন কাল থেকে নারীকে উপরে উঠায়ে পায়ের নীচে রাখা হচ্ছে সেইটা বোঝার এবং তা থেকে বের হয়ে আসাটা জরুরি হয়ে গেছে …. সংসারে শান্তি আনতে নারীর ৭৫% ভালোবাসা দিতে হবে পুরুষ ২৫% দিলেই চলবে, এইটা বলে নারীদের উপর যে চাপটা তৈরী করা হচ্ছে সেই চাপ সরিয়ে ফেলার সময়ে হয়ে গেছে ….. যে স্বামী বৌকে ঐশ্বরিয়ার মতো হতে বলবে সেই স্বামীকে অভিষেক বচ্চন না হলেও সালমান খান হতে বলার সামর্থ্য অর্জনের সময় হয়ে গেছে …. জামাইরা পরকীয়া করলে বা ২ – ৪টা বিয়ে করলে সহ্য করা যায়, কারণ মেয়েদের সহ্য শক্তি বেশি সেই শক্তি বিসর্জন দেয়ার সময় হয়ে গেছে।
আমাদের আসলে উপরে উঠার বা পায়ের নিচে থাকার দরকার নাই বা কারো সমকক্ষ হওয়ার চেস্টারও দরকার নাই। সাধারণ জীবন কাটানো মানুষ হতে পারলেই চলবে! আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আশা – আসুন Confident নারী হিসাবে Independent জীবন কাটাই, দেবী হিসাবে জীবন পার না করেও শান্তিতে থাকি (তবে দেবতা খুঁজে পেলে দেবী হয়ে যেতে পারা যায়)!!