ছোটবেলায় জাপানী রূপকথার একটা গল্পের বই পড়েছিলাম, যেখানে রাজকন্যা ছিল চেরীফুলের মত সুন্দর! বইয়ের পাতায় পাতায় ছিল গোলাপী আর সাদা ছোট ছোট চেরীফুল। বসন্তের এক বিকেলে এই চেরীফুলের বাগানেই রাজকন্যার দেখা হয়েছিল এক সামুরাই যোদ্ধার সাথে। বীরের মৃত্যু হয় সেই প্রেমিকের আর রাজকন্যাও এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ঐ চেরী গাছের নীচেই অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে। ক্ষণিক প্রহরের প্রেম কিন্তু তার গভীরতা সময় ও কালের সীমান্তকে অতিক্রম করে সেই গল্পে, যেন চেরী ফুলের সৌন্দর্যের মতই। খুব অল্প সময়ের জন্য ফোটে এই ফুল, মাত্র সপ্তাহখানেক। তারপরই ঝরে যায় কিন্তু তার মাধুর্য বিমোহিত করে লাখো হৃদয়, দীর্ঘ সময়!
গল্পের সেই চেরীফুল স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হল এবার। গত শনিবার গিয়েছিলাম S&R Orchard Blossom Festival এ। কালামুন্ডা সিটির ওয়ালিস্টন সাবার্ব।পার্থ শহর থেকে মাত্র আধা ঘন্টার ড্রাইভ। গন্তব্যে পৌঁছে দেখি পাহাড়ের উপত্যকায় সারি সারি চেরীফুলের গাছ। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছে, কার পার্কের স্পট খুঁজে পাওয়াই দুরূহ! একটু দূরে দূরেই ভলেন্টিয়াররা দাঁডিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে পার্কিং এর দিকনির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছে। টিকেট কেটে ঢুকলাম আমরা বাগানে। যুবা-বৃদ্ধ-কিশোর-শিশু সবাই যেন ছবি তোলায় ব্যস্ত। যুগল ছবি, একক ছবি, গ্রুপ ছবি। ক্ষণজন্মা মাধূরীকে ক্যামেরাবন্দী করার আপ্রাণ প্রয়াস!
ছবি তোলার জন্য সুন্দর কিছু প্রপসও ছড়ানো আছে বাগানে। বাহারী ছাতা, ফুলের ঝুড়ি বসান সাইকেল, ভাইওলিন, বিশাল এক পিয়ানোও দেখলাম বাগানের মাঝে। বাচ্চাদের একটা দল টুংটাং বাজাচ্ছে মন্দ না। বাচ্চাদের একটিভিটিসও আছে প্রচুর। পনি রাইড, ট্রাক্টর রাইড, এনিম্যাল ফিডিং, জাম্পিং ক্যাসেল তার মধ্য উল্লেখ করার মত।
পিকনিক ম্যাট বিছিয়ে বসলাম আমরা চেরীফুলের সারির মাঝে। প্রচুর ফুড ট্রাক আছে, যেখানে বিক্রী হচ্ছে হরেক রকম স্ট্রিট ফুড। আইসক্রিম আর ফেইরী ফ্লসের দোকানের সামনেই বাচ্চাদের লম্বা লাইন। নির্বাণ কিনল ডাক ফেসের ফেইরী ফ্লস, সোজা বাংলায় হাওয়াই মিঠাই। আমরা নিলাম মেক্সিকান চিকেন সালসা। ঘরে বানান আপেল-জ্যুস বিক্রি করছিল এক দোকানী, অপূর্ব স্বাদ। ফল ও ফুলের গাছের চারাও বিক্রি হতে দেখলাম বেশ।ছবিও তুললাম কিছু। আর দেখলাম ফুলে ফুলে মৌমাছির ওড়াউড়ি। বিকেল গড়াতেই বেরিয়ে এলাম আমরা বাগান থেকে। বুকের মাঝে গেঁথে নিলাম চেরীফুলের সৌন্দর্য!