নির্মল চক্রবর্তী :গান নিয়ে ভারতের জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘সা রে গা মা পা’র অন্যতম প্রতিযোগী অদিতি মুন্সী। ২০১৫ সালের ‘সা রে গা মা পা’ অনুষ্ঠানে কীর্তন গান গেয়ে শুরু থেকেই সবার নজরে আসেন অদিতি। ছিলেন ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত। অদিতির গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন লাখো দর্শক। পেয়েছেন খ্যাতি। এই রিয়্যালিটি শো শেষ হওয়ার পর গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অদিতি।
অদিতি’র জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনা’র বাগুইআটির দক্ষিণ পাড়ায়। ছোটবেলাতে বাবা মায়ের হাত ধরে বেড়ে ওঠা আর একান্নবর্তী পরিবারের আবহাওয়াতে কাটিয়ে দেওয়া এত্তোগুলো বছর। ছোটবেলাতে বাবার কাঁধে চড়ে প্রথম পুজো দেখতে যাওয়া কোলকাতাতে | তারপর বড় হয়ে কলকাতাকে চেনা শপিং আর গানের সুবাদে। এছাড়া বাগুইআটির দক্ষিণ পাড়া’র সেই বাড়িটাকে ঘিরে, বাবা মা ভাই বোন আর আত্মীয় স্বজন নিয়ে অদিতি’র গান গাইবার দিনগুলোর শুরু |
অদিতি’র যবে থেকে বোঝার মতো বয়স হয়েছে, তখন থেকেই শুনে আশা বাড়িতে কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনও নজরুলগীতি, কখনও বা ভক্তিমূলক গান। রাগাশ্রয়ী গানও ছিল তাদের নিত্য সঙ্গী | ছোটবেলাতে বাবা’র সাথে গান গাইতে গাইতে আর গান শুনতে শুনতে গানের জগতে পথচলা | গানকে ভালোবেসে পথ চলা | অদিতি’র পড়ালেখার শুরু দমদম পার্কের আদর্শ বিদ্যাবিথিতে। তার পর অন্নদাসুন্দরী বালিকা বিদ্যালয়। তার পর কৃষ্ণপুর আদর্শ বিদ্যামন্দির থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা | অদিতি বাংলা ভজন, কীর্তনের এতটাই ভক্ত যে পড়ালেখা শেষ করেছেন কীর্তনে মাস্টার্স করে | খুব অবাক করা একটা সাবজেক্ট কিন্তু গানকে অন্তরের ভেতর থেকে ভালো না বাসলে কি আর এতদূর পথচলা।
অদিতি’র গান-বাজনার হাতেখড়ি তার মায়ের কাছে। অদিতি’র গান শেখ নিয়ে বেশ মজার কথা বললেন শিল্পী নিজেই | গান শিখতে শিখতেই অদিতি’র মায়ের বিয়ে হয়ে যায়। হারমোনিয়াম নিয়ে তার মা চলে আসেনা শশুর বাড়ি । অদিতি’র জন্মের পর তার মা বেশ খুশি গলাতে বলেছিলেন, আমার হারমোনিয়ামটা এবার কাজে লাগবে। তখন সে ভাবে ঠিক বুঝত না অদিতি। ওর মা হারমোনিয়াম বাজাত। আওয়াজ বেরতো একটা। এটাই ছিল খুব আনন্দের। তার পর সারেগামা শেখা। এর পর খুব ছোটবেলা থেকেই স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বেশ কিছু দিন তালিম, ভয়েস ট্রেনিং । তাঁর কাছে অদিতি শিখেছেন ক্লাসিক্যাল এবং ভজন । তারপর গান শিখতে শুরু করেন শুভ্রকান্তি চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। এরপর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন পুরাতনী বাংলা গান নিয়ে। এই গান তিনি শিখেছেন তিমিরবরণ ঘোষের কাছে। তার পর গান শেখার শুরু তার গুরুমা সরস্বতী দাসের কাছে।
অদিতি’র সবচাইতে বেশি ভাল লাগে এটা ভেবে যে, মানুষ অদিতিকে শিল্পী বা সেলিব্রিটি হিসাবে ভালবাসে না। তারা তাকে ভালোবাসে ঘরের মেয়ে হিসেবে। মঞ্চে থাকাকালীন বা মঞ্চ থেকে নামার পরে মানুষ ওকে যে ভাবে আশীর্বাদ দেয়, ভালবাসে তা দেখে ওর কেনই জানি মনে হয় যেন ওর ঘরেরই লোকরা ওকে আর্শীর্বাদ করছে।