শীত মানেই খেজুরের রস, নলেন গুড়।
আর তারপর, নলেন গুড়ের রকমারী মিষ্টি ।
পুরোনো দিনের গল্প যদি লিখতে বসি তবে হয়তো এমন হবে-
কোন এক গাঁয়ের বিনোদিনী’র বানানো নলেন গুড়ের সন্দেশ খেতে ভালবাসতো অনেকেই। খাঁটি দুধ দিয়ে বানানো হতো ছানা, তারপর সেই ছানা দিয়ে পরম যত্নে বিনোদিনী সন্দেশ বানাতো ,আশেপাশের সবাইকে খাইয়ে রুপোর থালায় কয়েকটা সন্দেশ আলাদা করে রাখতো। থালায় সন্দেশ সাজিয়ে সঙ্গে কিছু লাল গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে দীঘির পাড়ের ছোট বাগানটির পাশে বসে অপেক্ষা করতো। প্রতিক্ষা ছিলো তার অতিথির জন্যে, সকলকে আড়াল করে নিজেকে একটু সাজিয়ে নিতো সে। খোঁপায় গুজে নিতো কিছু সুগন্ধি ফুল, হাতে দুগাছি সোনার চুড়ি আর পায়ে নুপুর পরে নিয়ে চলে যেত দীঘির পাড়ে। কখনো বা অতিথির দেখা মিলতো কখনো বা অতিথি আসতো না। সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলে অপেক্ষার ভারে ক্লান্ত বিনোদিনী ধির পায়ে দিঘীর জলে সন্দেশ গুলো ডুবিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরতো। অতৃপ্ত চাওয়ার সলিল সমাধি হতো।
এবার আসি আধুনিক দিনের গল্পে-
আধুনিক বিনোদিনীরা রুপার থালায় সাজায় না, সিরামিকের নানা ঢং এর জ্যামিতিক গঠনের বাটিতে ফেলে রাখে কয়েক টুকরো সন্দেশ, দু চারটে গোলাপ পাপড়ি ছিটিয়ে দিয়ে ধুমধাম ছবি তুলে নেয়। অপেক্ষার কাতরতার সময় আজকাল মেলে কোথায় ? শখের পালে হালকা হাওয়া লাগিয়ে কিছুটা নাও ভাসায় তারপর মিশে যায় জীবন স্রোতে।
সময়ের বহতায় রুপোর থালার ব্যবহার বদলায়, যান্ত্রিক জীবনে দীঘির পাড়ে বসে অপেক্ষার বিলাসীতা থাকেনা। মনের গহীনের নিরেট চাওয়া রয়ে যায় অবিচল। শখের খাবার তৈরির আনন্দ, পরিবেশনের সুখ আর অতৃপ্ত বাসনার করুণ রাগিনীতে কোন পরিবর্তন আসেনা… বিনোদিনীদের মনের দীঘিতে বাস করে এক অনুরাগী হংস। শ্বেত শুভ্র হংসটি ভেসে চলে নিরন্তর, নিঃশব্দে !!