চেনা ফরম্যাটে আত্মবিশ্বাসী তামিম

চেনা ফরম্যাটে আত্মবিশ্বাসী তামিম

অনলাইন ডেস্ক: ০৯ জুলাই ২০১৫

সাধ্যের বাইরে থাকা টি-টোয়েন্টি সিরিজটি গেছে। এখন দুয়ারে এসে উপস্থিত সাধ্যের মধ্যেই থাকা ওয়ানডে সিরিজ। আগের দিন সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাট ব্যর্থতা দিয়ে শেষ করার পর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার টানা উপসংহারটি ছিল অনেকটা এমনই। কাল তাঁর দলের ওপেনার তামিম ইকবালের কণ্ঠেও অভিন্ন সুর।

টি-টোয়েন্টি সিরিজটি শেষ হওয়াতে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাসও ফেললেন তিনি, ‘আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটেও তো খুব কম টি-টোয়েন্টি খেলি। কেউ বলতে পারবে না যে বছরে অন্তত পাঁচ-ছয়টি ম্যাচও খেলি। এমনও হয়েছে যে বছরে মাত্র একটি এ রকম ম্যাচ খেলেছি। দল হিসেবে আমরা তাই এই ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারিনি।’ কিন্তু আগামীকাল থেকে যখন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর অপেক্ষা, তখন যেন ‘কমফোর্ট জোন’-এ চলে আসার উত্তেজনায়ই ফুটতে শুরু করলেন তামিম, ‘ওয়ানডে আমরা নিয়মিত খেলি। এই ফরম্যাটে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করি। তা ছাড়া যেহেতু এই ফরম্যাটে খুব ভালোও খেলছি, তাই আমি নিশ্চিত যে আমরা খুব আত্মবিশ্বাসীও থাকব।’

টি-টোয়েন্টি সিরিজ ভুলে তাই ওয়ানডেতেই এখন মনপ্রাণ সঁপে দেওয়ার তাগিদ এ বাঁহাতি ওপেনারের, ‘কেউই কোনো দিন চায় না হার দিয়ে সিরিজ শুরু করতে। এটা ঠিক যে অন্তত একটি টি-টোয়েন্টি জিতলে আত্মবিশ্বাস আরো ভালো জায়গায় থাকত। হেরেছি যখন, তখন খারাপ লাগা তো আছেই। তাই বলে যা হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে ভেবে ড্রেসিংরুমের পরিবেশ গুমোট করে ফেলতে চাই না। কারণ আমরা জানি, যে ফরম্যাটে আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী, সেই ফরম্যাটের খেলাই আসছে।’

ওয়ানডে মানেই গত কিছুদিনে তৈরি হওয়া দারুণ সব রোমাঞ্চকর গল্প। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে প্রথমে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ। এরপর একই সম্ভাবনার মুখে দাঁড়িয়েও ভারতের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত সিরিজ জয় ২-১-এ। তামিম তাই অবলীলায় বুক ফুলিয়ে বলে দিতে পারেন, ‘ওয়ানডের জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুতও। গত এক বছর ধরে ভালো পারফর্ম করছি। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির চেয়ে খেলোয়াড়রা এই ফরম্যাটটা বোঝেও ভালো। এ জন্য ওয়ানডেতে আমাদের সাফল্যের হারও অনেক বেশি।’

টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতাও ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডেতে পুষিয়ে দেবেন বলে বিশ্বাস তামিমের। শেষ হওয়া দুই ম্যাচের সিরিজে ব্যাটসম্যানদের জন্য মনে রাখার মতো কিছুই নেই। না আছে কারো কোনো ফিফটি, না আছে কোনো পঞ্চাশ পেরোনো পার্টনারশিপ। কিন্তু এই ব্যর্থতাতেই ব্যাটসম্যানদের ভালো করার বিশ্বাস চূর্ণ হয়ে যাবে বলে মনে করেন না বিস্ফোরক এ ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে নিজেদের পারফরমেন্সেও থাকতে হবে তুঙ্গে, ‘গত এক বছর ধরে বাংলাদেশ দল খুব ভালো ব্যাটিংও করছে। এখন দুটো হারের কারণে যদি আত্মবিশ্বাস ধসে যায়, তাহলে তো হবে না। ওয়ানডে সিরিজে আমাদের খুব ভালো খেলতে হবে। ওদের ব্যাটিং এবং বোলিং লাইনআপ, দুটোই খুব শক্তিশালী। কাজেই আসছে সিরিজে আমাদের খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’

টি-টোয়েন্টি সিরিজ অনায়াসে জিতে গেলেও ওয়ানডের বাংলাদেশ যে অন্য রকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হতে চলেছে, সেটি মাথায় রাখছে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরও। দলের প্রতিনিধি হিসেবে গতকাল সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে সে কথা বলে গেলেন ডানহাতি পেসার রায়ান ম্যাকলারেনও, ‘বাংলাদেশের মাটিতে ওদের বিপক্ষে খেলাটা সত্যিই খুব কঠিন হবে। ওদের বিপক্ষে ভালো করতে তাই আমাদের ধারাবাহিকতার সঙ্গে নিজেদের কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করতে হবে।’ এই কাজগুলো তাঁদের করতে হবে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে ছাড়াই। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্লো ওভার রেটের জন্য নিষেধাজ্ঞা পাওয়ায় এই সিরিজের একটি ম্যাচ এমনিতেই খেলা হতো না তাঁর। সন্তান-সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে পুরো সিরিজের জন্যই ছুটি দিয়ে দেওয়ায় স্বস্তি বাংলাদেশ শিবিরেও।

নানা দিক থেকেই এর সুবিধা তুলে ধরতে পারলেন তামিমও, ‘ডি ভিলিয়ার্সের মতো একজন ক্রিকেটার না থাকলে শুধু বাংলাদেশ কেন, অস্ট্রেলিয়াও স্বস্তি পায়। উনি এমন একজন ক্রিকেটার, যিনি একাই প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে জানেন। আবার অনেক সময় দলগুলো তাঁকে বেশি মনোযোগ দেওয়ায় এর ফায়দা তুলে নেন দলের অন্যরা। ভিলিয়ার্স না থাকায় এ ব্যাপারটি তো অন্তত হবে না। তাঁর না থাকা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক ব্যাপার।’ সেই সঙ্গে ওয়ানডে সাফল্যের আত্মবিশ্বাস যোগ করে তামিম এ ঘোষণাও দিয়ে দিতে পারলেন যে, ‘আমরা ওয়ানডেতে যেভাবে গত কিছুদিন খেলে আসছি, সেভাবে খেলতে পারলে ম্যাচ জেতা অবশ্যই সম্ভব। সিরিজ জিতব কি না, সেটি পরের ব্যাপার।’ (সুত্রঃ কালের কণ্ঠ,০৯ জুলাই ২০১৫)