গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার অভাবনীয় জয়ের অন্যতম নায়ক রঙ্গনা হেরাথ।

গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার অভাবনীয় জয়ের অন্যতম নায়ক রঙ্গনা হেরাথ।

অনলাইন ডেস্কঃ ১৬ আগস্ট ২০১৫

গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার অভাবনীয় জয়ের অন্যতম নায়ক রঙ্গনা হেরাথ। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বাড়ছে ৩৭ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনারের ধার!

উড়তে থাকা বেলের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন রোহিত শর্মা; বুঝতেই পারছিলেন না ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে স্টাম্পে চুমু খেলো বল। প্রথম ইনিংসে লড়াই করে অর্ধশতক করা ঋদ্ধিমান সাহা বিভ্রান্ত হয়েছেন চতুর এক ফ্লাইটে। ভারতের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। কিন্তু দারুণ ফ্লাইট আর টার্ন ও বাউন্সে আত্মসমপর্ণ করতে হয়েছে তাকেও। শনিবার গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারতীয় ড্রেসিং রুমের পথে হতভম্ব সব মুখের মিছিল। রঙ্গনা হেরাথের স্পিন ফাঁদে ধরাশায়ী হয়ে ফিরছিলেন একের পর এক ব্যাটসম্যান!

বাঁহাতি স্পিনের জাদুতে আচ্ছন্ন করে একটির পর একটি শিকার ধরেছেন হেরাথ। ইনিংস পরাজয়ের কবল থেকে শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধার করে লড়ার মতো রান এনে দিয়েছিল দিনেশ চান্দিমালের অসাধারণ এক ইনিংস (১৬৯ বলে অপরাজিত ১৬২)। ১৭৫ রানের লিডকে যথেষ্ট বানিয়ে ছেড়েছে হেরাথের স্পিন। ৪৮ রানে তিনি নিয়েছেন ৭ উইকেট, ভারতের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনে যা সেরা বোলিং। ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের হেডলি ভেরিটির ৪৯ রানে ৭ উইকেট ছিল আগের সেরা। হেরাথের স্পিনে ভারত হেরেছে ৬৩ রানে। লক্ষ্য যখন ১৭৬, এই ব্যবধান তো বেশ বড় পরাজয়ই!

এই টেস্ট শুরুর আগের দিন কুমার সাঙ্গাকারার কণ্ঠে ছিল হেরাথের প্রশংসা। গলে শেষ টেস্ট খেলতে নামা লঙ্কান গ্রেট ক্যারিয়ারে পেছন ফিরে তাকিয়ে একটা পর্যায়ে বলেছিলেন হেরাথের কথা, “রঙ্গনা হয়তো সেভাবে আলোচনায় উঠে আসে না, কিন্তু অসাধারণ এক ক্রিকেটার সে।” গল টেস্টের চতুর্থ দিনে হেরাথ আরও একবার প্রমাণ দিলেন, কেন তিনি অসাধারণ। বাঁহাতি স্পিনের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে প্রিয় মাঠে সাঙ্গাকারাকে উপহার দিলেন দারুণ এক জয়।

মুরালি-উত্তর যুগে হেরাথই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ম্যাচ উইনার। একজন মুত্তিয়া মুরালিধরন ছিলেন বলে তারুণ্যে খুব বেশি সুযোগ পাননি হেরাথ। কিন্তু ৩০ পেরিয়েও যেন হারাননি তারুণ্য। মুরালির অবসরের পর যখন সুযোগ এল, হারানো সময়টাকে পুষিয়ে দিতেই যেন হেরাথের মাঝে দেখা গেল প্রচণ্ড উইকেট-ক্ষুধা! বলতে গেলে একাই টেনে চলেছেন শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ।
মুরালিধরনের জমানায় ২২ টেস্ট খেলে ৭১ উইকেট ছিল হেরাথের, ৫ উইকেট ৪ বার। ২০১০ সালের জুলাইয়ে মুরালির অবসরের পর বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া স্পিনার হেরাথ। গত ৫ বছরে ৩৯ টেস্টে নিয়েছেন ১৯৯ উইকেট! এই সময়ে তার চেয়ে বেশি উইকেট আছে শুধু দুই ইংলিশ পেসারের। তবে দুজনই খেলেছেন অনেক বেশি টেস্ট, ৫৯ টেস্টে ২৪৮ উইকেট জেমস অ্যান্ডারসনের, ৫৫ টেস্টে ২২৫ উইকেট স্টুয়ার্ট ব্রডের। হেরাথের সমান ৩৯ টেস্টে ১৯১ উইকেট পেয়েছেন ডেল স্টেইন। শ্রীলঙ্কার হয়ে তো মুরালির অবসরের পর ৫০ উইকেটের বেশি নেই আর কারও। হেরাথের পরে ২৪ টেস্টে ৫০ উইকেট নিয়ে অনেকটা পেছনে থেকে দুইয়ে সুরঙ্গা লাকমল।

গলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে হেরাথ ছাড়িয়ে গেছেন বাঁহাতি স্পিনের এক কিংবদন্তিকে – অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা বাঁহাতি স্পিনার ভারতের বিষেণ সিং বেদি। আদর্শ বাঁহাতি স্পিনারের সব উপকরণ মিলিয়ে যাকে অনেকে মনে করেন বাঁহাতি স্পিনের শেষ কথা। ৬৭ টেস্টে ২৬৬ উইকেট ছিল বেদির। হেরাথের এখন ২৭০ উইকেট ৬ টেস্ট কম খেলেই।

বাঁহাতি স্পিনে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেটের রেকর্ড আগে থেকেই ছিল হেরাথের। সেই রেকর্ড এবার সমৃদ্ধ করেছেন আরও একটু। ২২ বার নিলেন ৫ উইকেট। ২০ বার ৫ উইকেট নিয়েছেন ৩০০ উইকেট (৩৬২) পাওয়া একমাত্র বাঁহাতি স্পিনার নিউ জিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেটোরি।

বয়স ৩৫ বছর হওয়ার আগেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল কত কত ক্রিকেটারের! হেরাথ ৩৫ পূর্ণ করার পর ১৪ টেস্টে নিলেন ৭০ উইকেট!
গল টেস্টের চতুর্থ ইনিংসের আগে বেশ কিছু সময় অবশ্য একটু অনুজ্জ্বল ছিলেন হেরাথ। আগের ৬ ইনিংস মিলিয়ে পেয়েছিলেন মাত্র ২ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে তো একাদশেও জায়গা হারিয়েছিলেন, কিছুদিন আগেও যা ছিল অভাবনীয়। হাঁটুর চোটও বেশ ভোগাচ্ছিল। গুঞ্জন উঠছিল, বয়স বুঝি অবশেষে পেয়ে বসল হেরাথকে। মেঘে মেঘে বেলা তো কম হলো না, ৩৭ পূর্ণ করেছেন সেই গত মার্চে।

গলে তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিলেন সেসব গুঞ্জন। হাঁটুর চোট সঙ্গী ছিল এই টেস্টেও। কিন্তু জিতলেন সেই চোট, জিতলেন সংশয়। বাঁহাতি স্পিনের অপূর্ব প্রদর্শনীতে জানিয়ে দিলেন, বয়স কেবলই একটা সংখ্যা! ( সুত্রঃ  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)