ওই রাজাকারেরাই আমাদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিল : ববিতা

ওই রাজাকারেরাই আমাদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছিল : ববিতা

অনলাইন ডেস্ক: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫

বাঙালি জাতির গৌরবের মাস ডিসেম্বর। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই মানচিত্রে আমাদের প্রণম্য মুক্তিযোদ্ধা তারকাদের সংখ্যাও কম নয়। প্রতিবছর বিজয়ের মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে শিল্পী-কুশলীদের লেখা বা স্মৃতিগদ্য ছেপে থাকি। এ বছরে পুরো মাসজুড়ে তারকাদের বয়ানে থাকবে তাদের দেখা যুদ্ধকালীন খণ্ডচিত্র। এ নিয়েই পুরো ডিসেম্বরের আয়োজন ‘সেই সময়’। আজ লিখেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী ববিতা

যুদ্ধের শুরুতেই আমরা এক মহাসঙ্কটে পড়ি। আমি তখন গেণ্ডারিয়াতে থাকতাম। সুচন্দা আপা জহির ভাইয়ের সাথে ভারতে চলে যায় তখন। তাদের ভারতের যাওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে ছিল এক ম্যাচ ফ্যাক্টরী। সেখানে কিছু রাজাকার ছিল, তারা আর্মিদের জানিয়ে দেয় সুচন্দা আপা ও দুলাভাইয়ের ভারত যাওয়ার খবর। ওই রাজাকারেরাই আমাদের বাড়িটি চিনিয়ে দিয়েছিল।
প্রায়ই আর্মিরা বাসায় আসতো। তারা ভাবতো, আপা-দুলাভাই বোধহয় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে অথবা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করছে। তখন আমি কেবলমাত্র ফিল্মে কাজ শুরু করেছি। আর্মিদের এই আসা-যাওয়া নিয়ে পারিবারিকভাবে অনেক সমস্যা শুরু হয়। প্রতিদিনের আতঙ্ক!
আমাদের বাড়িটা বিশাল বড় ছিল। বাড়ির সামনে বিশাল বড় একটি গেইট। যে কারণে আমরা তিনতলা কিংবা দোতলা থেকে গেইট এবং গেইটের বাইরে দেখতে পেতাম কে আসছে বা কে যাচ্ছে। যখনই আমরা বুঝতাম আর্মির গাড়ি আসছে তখনই আমাদের বাড়ির পেছন দিক দিয়ে একটি গোপন গেইট ছিল সেই গেইট দিয়ে দৌড়ে পাশে একটি সরু গলিতে ঢুকে পড়তাম। সেই গলি দিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যেতাম।
আর্মিরা বাড়িতে এসে আব্বুকে জিজ্ঞেস করতো, ‘লার্কিয়া কাহাহে, মুক্তি কাহাহে, বড়া লার্কি কাহাহে, ছোটা লার্কি কাহাহে।’ আব্বুু বলতো, ‘বড় মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে, সে তার স্বামীর সাথে। আর ছোট মেয়ে চলচ্চিত্রের কাজে ঢাকায় নেই।’ এ রকম অনেকবার হয়েছে। আব্বু একই কৌশল অবলম্বনে আর্মিদের বিদায় করেছে।
যুদ্ধের আগে আমাদের দেশে যদি কোনো বিদেশি কিংবা বড় কোনো ফেস্টিভ্যাল হতো তখন আমাদের পাত্তাই দেওয়া হতো না, সবকিছুতেই ছিল পাকিস্তান। একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান হলেও অ্যাওয়ার্ড পেতো পাকিস্তানি শিল্পীরা। আমাদের বলা হতো না, নেওয়া হতো না, সব দিক দিয়েই আমরা অবহেলিত ছিলাম। তাই আজকের এই স্বাধীনতার অনুভব শুধুই ভৌগলিক না। অনেক দিক দিয়ে বিজয়ের।

এতো কষ্ট করে স্বাধীন হয়েছি আমরা, এখন দেশটাকে গড়ার দায়িত্ব এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের। আমরা তো আজ আছি, কাল থাকবো, আবার একদিন ছেড়ে চলে যাবো। এভাবে বাংলাদেশের গৌরবময় এই মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষীরাও চলে যাবে। মুক্তিবাহিনী কিভাবে দেশকে স্বাধীন করেছে তা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি। তাই আমি এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের বলবো, অনেক কষ্টে এই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। তারা যেন একে ধরে রাখতে পারে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এটাই তাদের দায়িত্ব। (সুত্রঃ ইত্তেফাক )