হানামির সিজন মানে ফুল দেখার মাস আসলেই জাপানের পরিবেশ যেমন এক নতুন রুপ নেয় , জাপানীদের মন মানসিকতাতেও আসে ব্যাপক পরিবর্তন । মানুষরুপী রোবটগুলোও সত্যিকার মানুষের আচরন করতে থাকে । অন্য সময় যে করে না তা নয় তবে রোবটের আচরন কিছুটা হলেও পরিলক্ষিত হয় ।
এপ্রিল মাসের কয়েকটা দিন তাই ওরা হাসি ঠাট্টা মজাক মাস্তি করে কাটায় । কয়েকদিন বন্ধু বান্ধব কলিকদের সাথে এবং দুএকদিন পরিবারের সাথে । হানামি শব্দটার অর্থ ফুল দেখা হলেও এটাকে জাপানীর শুধু চেরি ( ওদের ভাষায় সাকুরা ) ফুল দেখাকে বোঝায় । তার মানে ওরা অন্য সময় ফুল দেখে না ? তা নয় । ফুল মনে হয় ওদের রক্তের সাথে মিশে আছে । তাইতো সুপার মার্কেটের একটা কর্নার দখল করে ফুল ।
নিত্যদিনের আনাজপাতির মত ফুল ও ওদের একটা অপরিহার্য পন্য । শুধু ফুল দেখে একদিন কাটানো যাবে এমন হাজার হাজার পার্ক এরা বানিয়ে রেখেছে। সিজেনাল ফুলগুলোর সাথে শোভা পায় হরক রকম ফুল সেইসব পার্কে। সিটিগুলো শুধু সিজনাল ফুল যেমন টি উলিপের গার্ডেন বানিয়ে আকৃষ্ট করে অন্য সিটির লোকদের । flower arrangement ( ওদের ভাষায় ইকেবানা 生け花 ) এর টেকনিক ওরা ডে কেয়ার সেন্টার থেকেই শিখা শুরু করে ।
মোদ্দা কথা জাপানের মানুষ আর ফুল একে অপরের পরিপুরক । ফুল দেখা যেহেতু এদের ক্যালচার তাই অফিস আদালত , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোও এই ফুল দেখে সময় কাটানোর রীতিটা চর্চা করে । গতকাল ছিল আমাদের অফিসের হানামি । চেরি ফুল দেখার সময় হিসেবে একটু লেট বৈকি । গাছে এখন ফুলের চেয়ে পাতাই বেশী । তাতে কি ? এটা তো একটা লক্ষ্য মাত্র । আসল উদ্দেশ্য তো স্ট্রেস ফ্রি একদিন । যেখানে প্রিন্টারে শব্দের যায়গাটাকে ঝিঝি পোকার শব্দ দখল করবে, ব্লাক কফির মজাটা বিয়ারের কৌটা দিয়ে সেড়ে নিবে ।
কাজের চাপে জড়োসড়ো হয়ে থাকা জুনিয়ারটি কথার মারপ্যাচে বোল্ড করে দেবে সিনিয়রকে । সফটওয়ারের বাগ খোজার চেয়ে খাবার প্লেটে উড়ে এসে জুড়ে বসা বাগকে নিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরবে । গতকাল সে রকমই একটা দিন কাটল । চেরি ফুল ছিল না তাতে কি ? হানামির জন্য ফুলের স্বর্গেই যে বেছে নিয়েছিল আমাদের অফিস !
(মোঃ মাহবুবর রহমান তোত্তরি, জাপান, ,লেখক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)