ছোটবেলায় ঈদের আনন্দই ছিল অন্যরকম। চাঁদরাতে গ্রামের বড় ভাইয়েরা পিকনিকের আয়োজন করতো। গ্রাম ও বাজার থেকে চাঁদা তুলে সারা রাত মাইকে ঈদের গান শুনিয়ে এই আয়োজন চলতো। আমরা ছোটরা ঐ রাতে ঈদের উত্তেজনায় প্রায় সারা রাত ঘুমাতে পারতাম না। ফজরের নামাজের আগে আগে আমরা উঠে পিকনিকের খাওয়া দাওয়ায় শরীক হতাম। বিরাট ঈদগাহে নামাজের পর নুতন জামাকাপড় পড়ে দল বেঁধে শুরু হতো গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের বাসায় বাসায় ঘুরে বেরিয়ে সালামি নেয়া। সন্ধ্যার পরে সবাই একত্রে জড় হয়ে সেই সালামির টাকা পয়সা গোনা।
এখন দেশের পরিস্থিতি বদলে গেছে। চাঁদ রাতে মাইকে ঈদের গান শোনা যায়না। আজকাল ঘরে ঘরে সবাই যে যার মতো ইদ করে। মহল্লা ভিত্তিক মসজিদে ঈদের নামাজ হয়। দুই তিন গ্রামের মানুষ এখন আর ঈদগাহে জড় হয়না। ঈদের আগের শেষ রাতে কর্মজীবী মানুষরা ক্লান্ত হয়ে গ্রামে ফিরে। তারপর তড়িঘড়ি করে ঈদের নামাজ পরে দেয় ক্লান্তির লম্বা ঘুম। সেই ঘুম ভাঙ্গে পড়ন্ত বিকেলে। সন্ধ্যায় ক্লান্তির আড়মোড়া ভেঙ্গে ঈদের দিন শেষ হয়।
ছোটবেলার সেই ঈদের আনন্দ আমরা কিন্তু প্রবাসেও বয়ে এনেছি। বিদেশে ঈদের সপ্তাহ খানের আগের থেকেই ঈদের কেনা কাটা ও জল্পনা কল্পনা শুরু হয় কবে ঈদ হবে এই নিয়ে। ঈদের আগের দিন বন্ধুরা ফোন করা শুরু করে ঈদের তারিখ জানতে। চাঁদ রাতে মসজিদে ঈদের ঘোষণা হলে আমি সাথে সাথে স্ত্রীকে ফোনে জানিয়ে দেই। সে ফোন করে অন্য ভাবীদের জানায়। চাঁদ রাতেই মহিলারা ঈদের দিনের সময় ভাগাভাগি করে নেয় কে কখন বাসায় থাকবে আর কখন বেড়াতে বের হবে। যারা রাতে কাজ করে তারা ঈদের খবর পেয়ে বাসায় ফিরে এসে রান্নার কাজে স্ত্রীর সাথে হাত লাগায়। সকালে নামাজের পর শুরু হয় ঈদের বেড়ানো। পালা করে চলে এই দেখা সাক্ষাৎ। চলে ফোন করে আসা যাওয়া।
যাদের সাথে ঈদের দিন দেখা হয়না তারা যেতে বলেন ঈদের পরের দিনগুলোতে। সেখানেও চলে শিডিউল ক্রাইসেস, মান অভিমান ও দেয়া নেয়া। প্রবাসেও ঈদের পরের এক সপ্তাহ ঈদের আমেজ লেগে থাকে।
নাইম আবদুল্লাহ(লেখক ও সাংবাদিক)