আমরা ও আমাদের ছেলেমেয়েরা

আমরা ও আমাদের ছেলেমেয়েরা

“নাকিমুসি ” ছিল ফুকুহারা আইয়ের নিক নেম । শরীরের উচ্চতা টেবিল টেনিসের টেবিলের উচ্চতার সমান হওয়ার আগেই পিংপং খেলা শুরু করেছিল মায়ের হাত ধরে । মা কাম কোচ হওয়ায় সিভিয়ার ছিল টেবিল টেনিসের প্রাকটিসে । যে বয়সে মায়ের হাতে ভাত খেতে খেতে মায়ের কোলেই ঘুমিয়ে পরার কথা ছিল সেই বয়সেই মাথায় লাল ব্যান্ড বেধে মায়ের নককে ফিরিয়ে দিতে দিতে হয়ত প্রতিজ্ঞা করেছিল অলিম্পিকে খেলার ।

মায়ের স্ম্যাসকে ঠি কমত ফেরাতে না পেরে কিংবা কচিমনের ক্লান্তিকে অভারকাম করতে না পেরে চোখের পানি ও নাকের পানি বের করার দৃশ্য এখনো মাঝে মাঝে প্রচার হয় অনেক চ্যানেলে । সাফল্য কিংবা ব্যার্থতা দুটোতেই আমরা দেখি ফুকুহারা আইয়ের কান্না । তাইতে জাপানের অনেকেই ফুকুহারা আইকে ভেসকান্দুরা বলে চেনে । নাকিমুসি নিকনেমটাও ঐ কান্নাকাটির ভিডিওগুলোর বদৌলতে । তবে বেশীর ভাগ মানুষই ওকে আই চান বলে ডাকে । জাপানীরা নামের শেষে সান যুক্ত করে সন্মান দেখায় । তবে চান যুক্ত করে ডাকা মানেই ধরে নেয়া যায় সেখানে ভালবাসা আছে ।

জাপানীতে ‘আই’ মানে ভালোবাসা । সাথে ‘চান’ যুক্ত করে সবারই ভালবাসায় সিক্ত হচ্ছে আইচান । ছোটো বড় সবাই আইচান বলেই ডাকে । এত ভালবাসার পাবার কারন আছে । জাপানে মহিলাদের মডার্ন টেবিল টেনিসের পথিকৃত বলা চলে ওকে । পরপর চারবার অলিম্পিকে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয় । পদক খুব একটা দিতে পারে নাই জাপানকে । তাতে কি ? পিংপং বুমটা আনার পিছনে যে ওর অবদানই বেশী । উচিমুরা কোহেই তেমনি আর একটা পরিচিত নাম জাপানে । জাপানের জিমন্যাস্টিক্সের ইতিহাস অনেক পুরানো তাইতো ওর নামটা আই চানের মত ফ্যামাস না । তবে জিমন্যাস্টিক্সের দুনিয়ায় ও স্টার ।

নাদিয়া কোমানিচির নাম যেমন আমরা জেনেছিলাম পাঠ্যপুস্তক থেকে আমাদের পরবর্তী জেনারেশন হয়ত উচিমুরার নামও জানবে টেক্সটবুক থেকে । বাবা মার জিমন্যাস্টিক্স ক্লাবটাই যে আজ ওকে জাপানের নক্ষত্র বানিয়েছে । কিতাজিমা হল জাপানের সুইমিং ওয়াল্ডে আর একটা নক্ষত্র । অলিম্পিকে স্বর্ণ অনেক আছে জাপানের । তবে কিতাজিমার আবির্ভাবের পর থেকেই জাপানের সুইমিং ফেডারেশন পদকের আগাম হিসাব নিকাশ করেই টিম পাঠায় অলিম্পিকে ।

সিডনীতে ওর সাতার দেখে সাতারে অজ্ঞ আমার মত মানুষও ভবিষ্যৎবানী করতে দিধাবোধ করে নাই । সেটার প্রমান ও রেখেছে বেইজিং ও এথেন্স অলিম্পিক আসরে । ওকে মডেল মেনে সুইমিং শুরু করা জাপানীজ সাতারুরা আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার সাতারুদের পদকে ভাগ বসাচ্ছে । ওর শিষ্য হাগিনোরা বিজয়স্তম্ভে একইসঙ্গে জাপানের দুখানা পতাকা উড়াতে সাহায্য করছে । টেনিস দুনিয়ায় নিসিকরী নতুন মুখ হলেও ওকে চেনে না এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা যাবে জাপানে । ৯৬ বছর পর জাপানকে টেনিসের অলিম্পিক পদক দিয়ে সেটার সংখ্যাও মনে হয় জিরোর কাছাকাছি চলে এসেছে ।

টেলিভিশনের চ্যানেলগুলো ওর বর্তমান সাফল্যের রহস্য ভেদ করতে যাওয়াতে আমরা জানছি ওর অক্লান্ত পরিশ্রমের নমুনা । বাবা মায়ের ইচ্ছাটাকে পুরনে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য দেখাচ্ছে না । এরকম হাজার হাজার জাপানীজদের নাম চলে আসবে খেলার দুনিয়ায় । ইচিরো সুজুকি তেমনি একটা নাম । বেসবলের দুনিয়ায় কামিসামার ( গড ) সমকক্ষ ঐ নামটি। সংকল্প , ইচ্ছা ও পরিশ্রম আজ ওকে ঐ আসনে বসিয়েছে । কয়েক বছর আগেও অলিম্পিকের পদকতালিকায় জাপানের নাম হ্যারিকেন দিয়ে খুজতে হত এখন ওরা পদকতালিকায় শীর্ষে যাবার কমপিটিশন করে । সেটাও হয়ত দেখব একদিন । একদিনে এদের অবস্থান এত উপরে উঠে নাই । ছোট ছোট ইচ্ছে ( বাবা মায়েদের সাথে সরকারের ) , সেটার বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ আজ জাপানকে এখানে এনেছে ।

টেকনোলজী, শিক্ষাও ওরা পাল্লা দিচ্ছে বিশ্বের সাথে । আমাদের দেশের বাবামায়েরা অসত পথে উপার্জনের পয়সায় ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে জঙ্গী বানাচ্ছে । সরকার জঙ্গীর অর্থ বোঝার মুরদ হয়নি কোমলমতি শিশুদের দিয়ে মানব বন্ধন করে জঙ্গী ঠেকাচ্ছে । ক্রিকেট দুনিয়ায় কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজের নাম আসতো না যদি না ওর বড় ভাই ওকে মটরসাইকেলে করে ট্রেনিংয়ে না নিয়ে যেত । মোস্তাফিজরা এমনি এমনি গজায় না । পরিশ্রম লাগে, ধর্য্য লাগে । সেটা বাবা মায়েরা তো করবেই সাথে সরকারের সদিচ্ছা লাগবে । বিকেএসপি দুএকজন সাকিবের জন্ম দেয় । অন্য সাকিবদের খুজতে হবে ।

আমাদের দেশের ধনীরা ছেলেমেয়েদের ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বানানোর জন্য নিজেরা তো সময় দেয় সাথে কাজের বুয়া থেকে গাড়ীর ড্রাইভারদেরকে ও দিতে হয় । কোচিংয়ে দৌড়াদৌড়ি করে পরীক্ষার আগে বেশী করে সাজেশন(? ) পাবার আশায় । ফলাফল অল প্লাশ । জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই যে মাইনাস যুক্ত হচ্ছে সেটার খবর না রাখছে বাবামা না রাখছে সরকার ।

গোল্ডেন এ পাওয়া ছেলেটে একদিন গোল্ডেন মার্কা হাতের লেখা চিরকুটে পরিবারকে জানালো জীবনের সন্ধানে বের হচ্ছে । একঘেয়েমি জীবনে সে বোর ফিল করছে । মানুষকে বিভৎস ভাবে খুন করে সে এক ঘেয়েমী দুর করতে চায় । আমরা ওকে জঙ্গী নাম দিলাম । বাবা মায়েরা থানায় মিসিং ডায়েরী করে দায়িত্ব শেষ । অনেকেই আবার লাশ নিতে অপরগতা দেখাই । তেলাপোকার মুখাউপাঙ্গের ডিসেকসন করে ডাক্তার হবার প্রাকটিস করাই । ফ্রিজের নিচে আমাদের খাবারের উচ্ছট্ট টুকু খেয়ে বেচে থাকার আকুল প্রচেষ্টার তেলাপোকা দেখিয়ে জীবনের মুল্য শিখাই না ।