ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দিনগুলি !!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের দিনগুলি !!

শহীদুল্লাহ হলশহীদুল্লাহ হল

যুদ্ধ করে হলে উঠার পর কয়েকজন বড় ভাই পাই। একসময় উনারা ছাত্রলীগ করতেন। জীবন যুদ্ধে নামবেন নামবেন করেও নামছেন না ভয়ে। হল জীবনের মতো এতো শান্তির জীবন আর কই আছে। তেমন কোন চাহিদা নাই। তিন বেলা খাবার এদিক সেদিক দিয়ে যোগাড় হয়ে যায়। রুমে সীট দুটো থাকলেও মোটামুটি ১০/১২ জন পালাক্রমে ঘুমাতাম। একপক্ষ রাতে কার্জন হলে ঘুরতো সকালে আলো ফুটলে ঘুমাতে আসতো। তবে দেশের কোথাও ছাত্রদল-ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল-ছাত্রদল বা ছাত্রদলের সাথে কোথাও কারো মারামারি হলে আমরা হলে যেতাম না। আমাদের একমাত্র রুমটিকে পরে পেতাম লন্ডভণ্ড অবস্থায়। প্রথম বছর ভাংচুরের পরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে জিনিস কেনার পর বারবার নিয়ে যায় দেখে আর কখনো কিছু কেনা হয় নাই। বড় ভাইদের মাঝে ফাহিয়ান ভাই, রুবেল ভাই আর সুজিতদা খুব মজার মানুষ ছিলেন। তৎকালীন জাসদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রেজা ভাই আমাদের রুমে আড্ডা দিতেন। হলের ছাত্রদলের সভাপতি মোজাম্মেল ভাই ছিলেন বেশ নিরীহ প্রকৃতির। উনিও আমাদের রুমে আড্ডা দিতেন। প্রায় রাতেই টুয়েন্টি নাইন খেলতাম। ছাত্রদলের সভাপতিকে এক পক্ষে দিয়ে সবাই এক হয়ে হারাতাম। আর বাজি থাকতো চানখারপুলে খাওয়ানো। মোজাম্মেল ভাই হেরে খাবারের বিল দেওয়ার সময় কটমট করতেন। যদিও মাঝে মাঝে উনাকেও জিততে দিতাম। না হলে আবার না হতাশ হয়ে রুমেই না আসেন !!

একবার ফাহিয়ান ভাই এক গল্প বললেন। এক জীন নাকি ছাত্রবেশে হলে থাকতো। সবার সাথে পড়াশুনা করতো। একদিন সব বন্ধুরা তাদের রুমে ঘুমায়। রাতে ওই জীনরুপি ছাত্রটি নাকি ঘুম থেকে উঠে লাইটের সুইচ টিপতে হাতটা লম্বা করে ফেলে। এটা দেখে ফেলে আরেক বন্ধু। সাথে সাথে সবাইকে ডেকে তুলে। জীনটি বুঝতে পারে সে ধরা পড়ে গেছে। জীনটি উধাও হয়ে যায়। এটা শোনার পর কতদিন রাতে তাকিয়ে থেকেছি কারো হাত লম্বা হয় কিনা দেখতে। মাঝে মাঝে নিজের হাতটাকেও লম্বা বানাতে চেয়েছি দুরের সুইচ অন অফ করার জন্য। জীনদের কতো না শান্তি !!

সুজিতদা চমৎকার মানুষ ছিলেন। দেখতে অনেকটা গোপাল ভাঁড়ের মতো। কেউ টাকা চাইলে পকেট খালি করে সব দিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য করতে কার্পণ্যবোধ করতেন না কখনো। একটু অলস প্রকৃতির ছিলেন বলে কোন কাজে সুবিধা করতে পারছিলেন না। উনার অভ্যাস ছিল রাতে মশারীর ভিতর সিগারেট খাওয়া। আমরা সবাই খুব অপছন্দ করলেও উনি কোন কেয়ার করতেন না। সিগারেটের ছাই কোন অ্যাসট্রেতে ফেলতেন না। অ্যাসট্রে রাখতে আবার উঠতে হবে বলে। সিগারেট শেষ হয়ে গেলে বা ছাই ফেলার সময় হলে মশারির ভিতর দিয়ে বাইরের দিকে ঠেলে ধরতেন। আগুনে পুড়ে মশারি ফুটা হয়ে ছাই বাইরে পড়তো। আমরা কিছু বললে বলতেন ” আরে রাখো মিয়া। এই ফুটা আছে দেখেই তো ছাত্রদল সব নিলেও মশারিটা নেয় না। বোঝো কিছু ?? ” । সুজিত দা ঠিকই বলেছিলেন ছাত্রদল কখনোই এই ফুটা মশারিটা নেয় নাই। খুব মিস করি এই বড় ভাইদের। অনেক না পাওয়া অত্যাচার আর প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এদের স্নেহ ছিল অবিচল। দিনদিন পৃথিবী যত ক্যালকুলেটিভ হচ্ছে এই অল্প সময়ের ভালবাসার মানুষগুলিও হারিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে স্নেহ ভালবাসার সেই অকৃত্রিম বন্ধন !!

জহির আহমেদ
জহির আহমেদ