青春 ( সেইশুন ) -জাপানীজ ” নীল বসন্ত “

青春 ( সেইশুন ) -জাপানীজ ” নীল বসন্ত “

青春 ( সেইশুন ) শব্দটার চায়নিজ বর্ণগুলোর সরাসরি বঙ্গানুবাদ করলে অর্থ দাড়ায় ” নীল বসন্ত ” । জাপানীজরা শব্দটা দিয়ে জীবনের একটা নিদিষ্ট সময়কে বোঝায়। যেটা কিনা সবার জীবনে একবারই আসে । জাপানীজ অভিধান ঘেটে ওটার প্রকৃত অর্থ বের করার চেষ্টা করলাম । অর্থ দেয়া আছে youth । আচ্ছা ইয়থ এর ডেফিনেশন কি? বয়সের কোন রেন্জটা পরে ? ইংরেজি অভিধানে ইয়ুথ এর রেন্জ খুজলাম ।

কাঠখোট্টা জবাব । “the time of life between childhood and maturity ” । ম্যাচুরিটী কখন আসে ? অনলাইন বাংলা ডিকসনারীতে খুজলাম । একটা লজ্জাজনক শব্দ ” যৌবন ” স্ক্রীনে ভেসে উঠল । যৌবন শব্দটার লজ্জাজনক মিনিংটাই বেশী শুনেছি । আর শুনেছি ” এখন যৌবন যার যুদ্বে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ” । কালারফুল বসন্তের কোন ছোঁয়া দেখিনা যৌবন শব্দটায় । হয় লজ্জা না হয় দুরন্তপনা । অবশ্য দুরন্তপনা দিয়ে জীবনটাকে রঙ্গীন বসন্ত বানানো যেত । ভয়কাতুরে মাহবুব ( বন্ধু তারিকের ভাষায় ) এর দুরন্তপনা দেখানোর সাহস ছিল না ।

জাপানীজরা যৌবন আসাটাকেই একটা প্রাপ্তি মনে করে । যেখানে বিপরীত লিঙ্গের অঙ্গভঙ্গি শরীরে দোলা দিবে, দোপাট্টা উরনে লাগি করবে ( জাপানীজদের দোপাট্টা নাই ) । ওরা একটা শব্দ ব্যবহার করে এই সিসুয়েশনটা ব্যাখ্যা করতে ” 胸キュン ( মুনে কিউন ) ” । মুনে হল বুক আর কিউন এর কোনো মিনিং নাই ( যতটুকু জানি ) । সোজা বাংলায় বললে বলা যায় বুকের ধরফরানি ( ভাল অর্থে , ভয় পেয়ে না ) । সেইশুন কি আমার জীবনে এসেছিল ? ছেলেকে সেইশুন এর অর্থ জিজ্ঞেস করলাম ( ও কিনা আমার জাপানীজ টি চার ) । ছেলে বলল ” জীবনের রঙ্গীন বসন্তের সময়টা ” । একধাপ এগিয়ে বলল, ” আব্বু, জীবনের যে সময়টা কচি আপলের মত টসটসে থাকে” ( টসটসে বলে নাই কেননা ঐ শব্দটার মানে ওর জানা নেই ) । বললাম তোমার জীবনে এসেছে ? ” হাইস্কুলের জন্য বয়সটা একটু আরলি হয়ে যায়। কলেজে উঠলেই আসতে পারে ” লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে যোগ করল ।

আমি আমার জীবনের কালারফুল বসন্তটাকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে উঠলাম । আমাদের যৌবন হয় পীথাগোরাসের সুত্র মুখুস্থ করে শেষ হয়েছে না হয় বড়দের ডান্ডার ভয়ে সেই সময়ের বসন্তের কোকিলগুলো সাইবেরিয়ায় যেতে বাধ্য হয়েছে। বুক যে ভাললাগার কারনে উধাল পাথাল করে নাই তা নয় । সেটা প্রতিপক্ষকে জানানোর সাহস কন্ঠনালীর হয়ত ছিল না কিংবা পারিপাস্বিক চাপে কন্ঠনালীতেই রয়ে গেছে । মুখফুটে বলা হয়নি । দুর থেকে দেখতে দেখতে ভাললাগার মানুষটিকে মা হতে দেখেছি । জীবনের প্রথম প্রেমের সমাপ্তি হয়েছে নিজেকে মামা বানিয়ে ।

পড়াশুনা করতে করতে তো যৌবনের বারোটা বাজিয়েছি কিংবা যৌবনের সময়টাকে অদৃশ্য শক্তির ডিলে মেশিন দিয়ে অটোমেটিক ডিলে বানিয়েছি । ভাল লাগার যে বিষয়গুলো কলেজ জীবনে আসার কথা ছিল সেগুলো এসেছিল ভার্সীটির বুড়ো বয়সে । ভালো লাগার জিনিসগুলো রঙ্গীন থাকলেও কিছু কিছু কালার হয়েছিল ফেইড । ১৬-১৭ তে যা হবার কথা ছিল সেগুলো হয়েছে ২৩-২৪ এ । ৬০ বছরের গড় আয়ুর জীবনে ২৪ বছর পেরুনোর আগেই ৮ বছর লেট । গড় আয়ু কিন্তু লেটের খাতায় নাম উঠাচ্ছে না ।

জীবনযুদ্ধে নেমেই এক ধাক্কা! বেকারত্ব নামক শব্দটা কানের কাছে একটু বেশীই বাজে । না বাজলেও আশেপাশের লোকজন একটু বেশীই বাজায় । যৌবনের বুকের ধরফরানীটা টেনশনের ধরফরানীতে রুপ নেয়। অনেকের ধরফরানীটা কমলেও বিপির ধরফরানীর সার্টিফিকেট দেন ডাক্তার সাহেব । মাংসের হাড় চিবিয়ে সেগুলো থেকে ক্যালসিয়াম বের করার শক্তি থাকে না দাতে। ব্লাডে সুগার বেড়ে যাওয়ায় চোখের ভক্ষন দিয়ে মিস্টির স্বাদ নিতে হয় । দেখতে দেখতে লাইফ টাইমের বাউন্ডারীতে পৌছেতে হবে । যৌবন লেটে আসলেও জীবন যুদ্ধের যবনিকা পতনের সময়ে কিন্তু লেট নাই ! মধ্য বয়সে এসে জাপানীজ টি ভিতে “মুনে কিউন ” সংক্রান্ত নাটকগুলো দেখে কানের কাছে বাজতে থাকে

Give me some sunshine

Give me some rain

Give me another chance I wanna grow up once again

( মোঃ মাহবুবর রহমান , তোত্তরি, জাপান )
( মোঃ মাহবুবর রহমান , তোত্তরি, জাপান )