ভাষা শহীদদের স্মরণে সিডনিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

ভাষা শহীদদের স্মরণে সিডনিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্ এর উদ্যোগে ১৯শে ফেব্রুয়ারী, রবিবার সন্ধ্যায় ইংগেলবার্ন কমিউনিটি হলে ‘৫২ এর ভাষা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণের মাধ্যমে ‘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটির সার্বিক পরিচালনায় থাকেন নাজমুল খান এবং সেলিমা বেগম ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডঃ লুৎফর রহমান এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলা শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করার মাধমে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুষ্ঠান শুরু করেন।

শুরুতেই লিভারপুল সাটারডে কমিউনিটি বাংলা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের দলটি আসে বাংলা প্রসার কমিটির তত্ত্বাবধানে এবং রুমানা সিদ্দিকীর পরিচালনায়। দেশীয় পোশাকে পুঁথি পাঠে অংশ নেয় ঐহিক,রঙ্গন, রাইক,রাইম,প্রহর , রায়ান ও ইনান। একক ও যৌথভাবে গান পরিবেশন করে তাসফিয়া, ঈশান, মাহিরা, ফাহমিদা ,রিদোয়ান ও লিওঁ। নৃত্য পরিবেশন করে নুসাবা ও আবৃত্তি করে ঐহিক। খুবই গোছানো এই পর্বটি ছিল সকলের কাছে উপভোগ্য।

এরপর রোকসানা বেগমের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সিডনির বুকে সবচেয়ে পরিচিত ছোট বন্ধুদের সাংস্কৃতিক দল “কিশালয় কচিকাঁচা”, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা ভিত্তিক ছড়া, নাচ ও গানের পরিবেশনা ছিল এক কথায় অনবদ্য। ইংরেজী ভাষাভাষী সমাজের মধ্যে বেড়েঁ উঠা বাংলাদেশ কমিউনিটির শিশুকিশোরদের মাতৃভাষায় বিশুদ্ধ উচ্চারণে ও স্বগৌরবে ছড়া, কবিতা আবৃত্তি, যৌথ কন্ঠে দেশের গান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছে আবহ বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে।
এই পর্বের শেষ দিকে বিষয়ভিত্তিক বিবেচনায় পুরস্কার পায় বাংলাদেশ নিয়ে চিত্রাঙ্গনে আদ্রিতা, রানিয়া, সুমেরা, জানান, সাফিনা ও জয়া।
বাংলা ভাষা চর্চায় প্রহর ও রঙ্গন, কিবোর্ডে আনন্দ ও একক সঙ্গীতে লিওঁ। এছাড়াও কবিতায় ঐহিকের প্রশংসা করা হয়। পুরস্কার বিতরণ করেন প্রফেসর ডঃ লুৎফর রহমান, এম পি অনুলাক চান্টিভং,ডঃ রফিকুল ইসলাম, মাহমুদ হোসেন, আব্দুল জলিল ও কামরুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ম্যাককুয়ারি ফিল্ড আসন থেকে নির্বাচিত এম পি অনুলাক চান্টিভং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান এবং ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা বিনম্রভাবে স্বরণ করেন। তিনি আরো বলেন “তাদের আত্নত্যাগর বিনিময়েই আজ সারা পৃথিবীতে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ নিয়ে গান পরিবেশন করেন রুনু রফিক, মাছুদ হোসেন মিঠুন, লুৎফা খালেদ, সীমা আহমেদ , শারমিন পাপিয়া, রোকসানা বেগম, আনিসুর রহমান ও সাজ্জাদ আনাম চৌধুরি । এছাড়া “কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” কবিতাটি আবৃত্তি করেন রুমানা সিদ্দিকী। তবলায় ছিলেন সাকিনা আক্তার এবং মন্দিরায় ছিলেন লোকমান হাকীম।
সাউন্ড সিস্টেম পরিচালনায় ছিলেন মাছুদ হোসেন মিথুন ও সাজ্জাদ আনাম চৌধুরি। আপ্পায়নে ছিলেন কাজী আশফাক ও ইয়াকুব আলী এবং খাবার সরবরাহ করেন ‘বোম্বে গ্রীল’।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন  ডঃ রফিকুল ইসলাম, মাহমুদ হোসেন এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধা শাহাদাৎ হোসেন ।

সবশেষে সমবেত কন্ঠে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত শেষ করার পর , “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি “এবং “মোদের গরব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা ” গান পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি টানা হয়।

বাংলাদেশী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ও পেপার পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।