বার্মিংহামের এজবাস্টনের মাঠে বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে ওঠা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য।
কিন্তু প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন এবং এবারের ফেভারিট দল – ভারত।
সে কারণে, দল যাতে মনস্তাত্ত্বিক চাপে না ভোগে তার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের কোচ এবং অধিনায়ক। তারা খেলোয়াড়দের বলার চেষ্টা করছেন – চাপটা আমাদের নয়, বরঞ্চ ভারতের।
কোচ হাতুরুসিংহে মঙ্গলবার বার্মিংহামে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন । তিনি সেখানে বলেন, সেমিফাইনালে ওঠাই অনেক বড় অর্জন। এখন আর তাদের হারানোর তেমন কিছু নেই। “আমি দলকে বলছি চাপ-মুক্তভাবে খেলতে…এটি কোনো বিগ ম্যাচ নয় বরঞ্চ বিগ অপরচুনিটি (সুযোগ), সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে যেতে হবে শুধু।”
আজ (বুধবার) সাংবাদিকদের কাছে একই কথা বলেছেন অধিনায়ক মাশরাফি মোর্তাজা। “আমরা কোনো চাপে নেই, বৃহস্পতিবার আমরা আট দশটা ম্যাচের মতই খেলবো।”
কিন্তু ইংল্যান্ডের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লীগের সেমিফাইনাল এবং প্রতিপক্ষ যেখানে ভারত সেখানে চাইলেই কি বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ভারমুক্ত থাকতে পারবেন?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক এবং আইসিসির কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিবিসিকে বলেন, ম্যাচে চাপ থাকবেই, এড়ানো যাবেনা, “কিন্তু ভারতকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বাংলাদেশের।”
“এটা কোনোভাবেই ওয়ান সাইডেড (একতরফা) ম্যাচ হবেনা। বাংলাদেশে এখন একটা কমপিটিটিভ দল। এমনকি ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ দলের বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বেশি।”
তাছাড়া, মি বুলবুল বলেন, নিউজিল্যান্ডের সাথে যেভাবে বাংলাদেশ সেদিন জিতেছে, সেটি অন্য কোনো দলের পক্ষে হয়তো সম্ভব ছিলোনা। “সেমিফাইনালের ম্যাচটি যে কোনো দিকেই যেতে পারে।”
তবে রেকর্ড এবং র্যাংকিং-এ বাংলাদেশের চাইতে ভারত অনেক এগিয়ে। এখন পর্যন্ত একদিনের ম্যাচে ৩৩ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল এবং তার ২৬টিতেই জিতেছে ভারত।
কলকাতার ক্রিকেট সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য বলছেন, সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বদলে বাংলাদেশকে পেয়ে হাঁফ ছেড়েছে ভারত। “যদিও বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে এবং এটি সেমিফাইনাল ম্যাচ, ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই, চাপ আছে, কিন্তু ভারত ফেভারিট।”
কিন্তু ভারতের অধিনায়ক ভিরাট কোহলি বলেন, কোনোভাবেই বাংলাদেশকে খাটো করে দেখছেননা তারা।
বুধবার বার্মিংহামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন – বাংলাদেশ এখন যে কোনো দলের জন্যই ‘ডেঞ্জারাস'(বিপজ্জনক)। গত চার-পাঁচ বছরে তারা তাদেরকে প্রমাণ করেছে।
কোহলি খুব ভালোভাবেই জানেন, অঘটন ঘটানোর ক্ষমতা ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের এবং সেই ক্ষমতা তাদের বাড়ছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারতকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড বেরিয়ে গিয়েছিলো বাংলাদেশের কাছে হেরে।
শুরুতে যে দলকে কোনো ক্রিকেট বিশ্লেষক ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেননি সেই পাকিস্তান বুধবার কার্ডিফের মাঠে এক নম্বর ফেভারিট ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেছে।
বৃহস্পতিবার বার্মিংহামের দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও যে আরেকটি অঘটন ঘটবে না এবং রোববার ওভালের মাঠে চূড়ান্ত যুদ্ধটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে না হয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে হবে না – সে কথা এই মুহূর্তে কেউ হলফ করে বলতে পারবে না।