বাবা নামের দুই অক্ষরের শব্দটির মাঝে যে মায়া,মমতা,ভালবাসা আর আবেগ জড়িয়ে আছে, তার সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না। একজন মানুষ বাবা হওয়া মাত্রই দায়িত্ববোধের যে বেড়াজালে তিনি বন্দী হন তা থেকে তিনি কখনও মুক্ত হন না হতে চান না। একজন চরম ভোগবাদী মানুষও পিতা হওয়া মাত্রই হয়ে উঠেন সন্তানের চিন্তায় নিমগ্ন এক ভিন্ন মানুষ। চরম স্বার্থপর একজন মানুষও পিতৃত্বের কাছে নিঃসন্দেহে স্বার্থহীন।
বাবার খাতায় নাম লেখানো মাত্র একজন ব্যক্তির পুনর্জন্ম
ঘটে। তার চরিত্রের অনান্য দিকগুলো পরিবর্তন নাও হতে পারে কিন্তু পিতৃত্ব যেখানে উপস্থিত সেখানে তার চরিত্রে সামান্য কালিমা লেপনও সম্ভব না। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে খারাপ মানুষ অনেক থাকলেও খারাপ বাবা একটাও নেই। একজন পিতা তার সন্তানের জন্য তার নিজের জীবন বাজী রাখতেও কার্পণ্য করেন না। আমি একটি ঘটনা জানি যেখানে গুরুতর অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসায় বাবা মা তাদের সর্বস্ব ব্যয় করে। বিদেশে সফল অস্রপচার শেষে সন্তান বাবা মায়ের সাথে দেশে ফিরে আসে। সন্তান পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেও কিছুদিনের মধ্যেই সেই প্রিয় পিতা চলে যান চিরঘুমে। সেই সন্তানের মত আমিও বিশ্বাস করি এই স্নেহময়ী পিতা পরম করুণাময়ের কাছে নিজের জীবনের বিনিময়ে সন্তানের প্রান ভিক্ষা চেয়েছিলেন। সেই সন্তানের হৃদয়ে এখনও বাজে তার পিতার স্পন্দন, তার অন্তর প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে যায় বাবার উষ্ণ পরশ।
একজন সন্তানের জীবনের প্রথম ও শেষ নায়ক তার বাবা। নায়কীয় সব গুণাবলি না থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়ের মণিকোঠায় বাবার স্থায়ী আসন কখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। আমার মেয়ের ধারণা দুনিয়ার তাবদ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা, আমার পুত্রের জিজ্ঞাসা কে বেশি শক্তিশালী মেঘ না বাবা? যদিও সে নিশ্চিত বাবার শক্তির কাছে সব কিছু নস্যি। আমার নিজের বাবা সম্পর্কেও আমি একই ধারণা নিয়ে বড় হয়েছি আর এই পরিণত বয়সে এসে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি হলফ করে বলতে পারি উপরোক্ত ধারণাগুলি পোষন করে না এমন সন্তান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে।
পিতার নির্দেশিত পথে হেঁটে চলা একজন সন্তানের জন্য কতটা নিরাপদ তা নিয়ে নিশ্চয়ই একজন চরম অবিবেচকও সন্দেহে প্রকাশ করবে না। বাবার আদেশ নির্দেশ যাদের শিরোধার্য তাদের মানসিক শক্তি জীবন চলার পথের যেকোনো দুর্যোগকে মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে।পিতার আদেশ অমান্য করে জীবনে সফল হয়েছে এমন মানুষ একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সন্তানের জীবনে বাবার প্রভাব সৃষ্টিতে শারীরিক উপস্থিত সব সময় প্রয়োজন হয় না। প্রবাদ আছে “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরাই অন্তরে”। বাবা সাথে না থাকলেও তাঁর বিশ্বাস সন্তান লালন করে গভীর মমতায়। আমার বন্ধু রুমেন সম্প্রতি আমাদের ছেড়ে গেলেও তার কন্যা ও পরিবারকে বলে গেছে, তার বাড়ীতে কোনও অতিথি এসে যেন খালি মুখে ফেরত না যায়। সন্তানকে দেওয়া অনান্য অসাধারণ শিক্ষার মত এটিও তাদের চরম দুঃখ আর বেদনার সময়ও সমান ভাবে চর্চিত হচ্ছে। এখনও কেউ তাদের বাড়ীতে গিয়ে খালি মুখে ফিরে আসে না।
আমার এক সহকর্মী একবার আমাকে বলেছিলেন, বহ আগে পরপারে চলে যাওয়া তার পিতা এখনও যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাকে সহায়তা করেন। সেই সহকর্মীর মত আমিও বিশ্বাস করি সন্তানের ভালবাসা উপেক্ষা করে একজন পিতা কখনও দূরে থাকতে পারেন না। সার্বক্ষণিক ছায়া হয়ে সন্তানের আনন্দে সাফল্যে তিনি হাসেন, তাদের দুঃখে বেদনায় তিনি ভারাক্রান্ত হন।
জীবন চলার পথে সন্তানকে একা ফেলে বাবারা কখনও যান না যেতে পারেন না।
বিশ্ব বাবা দিবসে পৃথিবীর সব বাবা আর সন্তানদের প্রতি রইল আমার হৃদয় নিঙরানো শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।