সুফিয়া কামাল হলের মেয়েদের ডায়েরির পাতায় কি বলে আসলে কি হয়েছিল ?

সুফিয়া কামাল হলের মেয়েদের ডায়েরির পাতায় কি বলে আসলে কি হয়েছিল ?

১০-৪-২০১৮

সুফিয়া কামাল হল থেকে বলছি… (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)

ঘটনার সূত্রপাত আনুমানিক ১২ টার দিকে, সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। এক ফ্রেন্ডের ফোনে ঘুম ভাঙ্গছে, লাফিয়ে উঠে নিচে দৌড় দিলাম। ছয় তলা থেকে নামতে নামতে দেখলাম নিচে অনেক ভিড়। ঠেলে নিচে নামলাম, আপুদের কাছে জিজ্ঞাসা করার বলল তিনদিন ধরেই অত্যাচার চলতেছিল নিরবে,( ৮ এপ্রিল থেকে) যারা পলিটিকালি হলে উঠেছে তাদের উপর, এখন এক মেয়ের পা কেটে দিয়েছে। কেউ ভয়ে মুখ খুলছে না। প্রত্যয় প্রদীপ্ত দুটো মুখোমুখি ভবন। ইফাত জাহান এশা হল প্রেসিডেন্ট প্রত্যেয় ভবনের তিন তলায় থাকেন। ৩০৯ নং রুমে। ঐ রুমেই মেয়েদের গায়ে হাত তোলা সহ নানা ভাবে টর্চার করার ঘটনা টি ঘটে। ওখানে গিয়ে জানতে পারি, হঠাত্ কটা মেয়ের চিতকার শুনে আশেপাশের ফ্লোরের সবাই জড় হয়। পরে অন্য মেয়েরা চিৎকার করে অন্যদের জানায়। কিছু মেয়ে নিচে নেমে আসলে তাদেরকে বলছে “ত্যাঁলাপোকা দেখে চিৎকার দিছে, কিছু হয় নাই।” বলে ওখান থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয় বারবার। কিন্তু ফ্লোরে সিড়িতে রক্ত দেখে হলের মেয়েরা একত্রিত হয়েই অবস্থান নেয় ওখানে। এর মধ্যে এশা ঐ মেয়েদের কে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি তখন জানতে পারি মোর্শেদা( বোটানি ডিপার্টমেন্ট , চতুর্থ বর্ষ ) যে কিনা বর্তমান সহ সভাপতি ছিল সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের ওকে মারা হয়েছে। এটা আমাকে জানায় আতিকা হক স্বর্ণা (উর্দু ডিপার্টমেন্ট , চতুর্থ বর্ষ) উল্লেখ্য আতিকা ও হল ছাত্রলীগের সহ সভাপতি পোস্টেড তখন । ও জানায় ৮ তারিখ রাতে ওকে গালিগালাজ করে অনেক অপমান করা হয় কিন্তু গায়ে হাত তোলে নি। এবং প্রেসিডেন্ট ওকে পর দিন হল ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে বলে। ও ৯ তারিখ সারাদিন হলে ছিল না। ওর সাথে এসব কথা বলতে বলতে.. হলের হাউজ টিউটর ম্যামরা এসে মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় , যাওয়ার আগে মোর্শেদা স্টেইটমেন্ট দিয়ে যায়। এদিকে হলের মাঠে সব মেয়েরা তখন ক্ষ্যাঁপা। এশার বহিষ্কার স্লোগান দিচ্ছিল। এশাকে কিছু মেয়ে মাঠে নিয়ে আসে তখন। তখন সে কোনভাবেই তার অপরাধ স্বীকার করে না। কিন্তু চোখে মুখে খুব ভয় ছিল। আমি দেখেছি কোটা বিরোধী আন্দোলনের জন্য সুফিয়া কামাল হল থেকে যে মেয়ে গুলো ছাত্রীপ্রতিনিধির কাজ করেছে ওরাই ইশাকে প্রোটেক্ট করে রাখছে। যেন ওর গায়ে কেউ হাত তুলতে না পারে।ওরা বারবার বলছিল ইশা কে আঘাত করলেই ছাত্রলীগ সেটা অন্য দিকে নিয়ে যাবে। এটা হতে দেয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত এমনটা হয় ও নাই। এর মধ্যে নিউজ টা ভাইরাল হয় ও অন্যান্য হলের ভাইয়ারাও চলে আসছিলেন হলের সামনে। আসলেন প্রোক্টর স্যার। গণিত বিভাগের লিটন স্যার ও ফার্মেসী বিভাগের লুতফুর স্যার। আরো একজন সাথে ছিলেন নাকে চিনি নাই। ম্যামরা জানতে চাইলো আমরা কি চাই? বললাম এশাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার, ওকে জুতার মালা পরাবো আমরা। যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলন অহিংস আন্দোলন, তাই মারবো না । এর মধ্যে আমরা বুজতে পারলাম প্রক্টোর ও অন্যান্য স্যার রা তাদের কথায় শুধু মাত্র ক্ষমা প্রার্থনা করে ইশাকে ছেড়ে দিতে বলছেন। সহজ কথায় ঘটনার তদন্ত বা বিচার নয় উদ্ধার করতে এসেছেন যেন উনারা। সামনের দিকের সবাই আস্তে করে বলল “ভুয়া” সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল প্রক্টর ভুয়া শ্লোগান। অনেক কথাবার্তার পর এশাকে নিয়ে আসা হলো সবার সামনে মাফ চাওয়ার জন্য, জুতার মালা পড়ানোর জন্য। কিন্তু স্যাররা কিছুতেই জুতার মালা পরাতে দিবেন না। বলছিলেন এটা মানবতা বিরোধী কাজ। মেয়েরা ক্ষেপে গেল, বলল স্যার একটা নির্দোশ মেয়েকে মারধোর করা কি মানবতা বিরোধী নয়? উনারা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ইশা কে নিয়ে সরে পরার চেষ্টায় ছিলেন। তারপর শুরু হল ধাক্কাধাক্কি। এদিকে প্রোক্টর স্যার ও তার সাথের লোকজন এশাকে ঘিরে বাঁচাতে চাইছেন প্রাণপণে। এদিকে দুই ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় আমরা ক্যান্টিনের পিছনের গেট দিয়ে হলে মেইন গেটে চলে আসলাম, যাতে কেউ পালাতে না পারে। ভাইয়ারা তখন বাইরে অবস্থান করছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। কিন্তু তালা লাগানোর আগেই স্যাররা ইশা কে নিয়ে বের হয়ে গেলেন ।মেয়েরা তারপরো চেইন করে ঘিরে ধরলো তাদের । এক পর্যায়ে এশাকে জুতার মালা পড়ানো হলো, হাউস টিউটর ম্যাম ও প্রোক্টর স্যারের কাছ থেকে মৌখিক বিবৃতি নেওয়া হলো। এরপর ম্যামরা হুট করে প্রক্টর এবং এশাকে হাউস টিউটর ভবনের ভিতরে ঢুকিয়ে কলাপসিপল গেট বন্ধ করে দিল। তখন মেয়েরা হাউস টিউটর ভবনের সামনে অবস্থান নিল, আমরা আমাদের দাবি এবং স্লোগান সমানতালে চলাতে থাকলাম। ভিতরে আমরা বাইরে ভাইয়ারা। সুফিয়া কামাল হল থেকে তিনটি দাবি দেওয়া হয়েছে হলে কোন আনুষ্ঠানিক রাজনীতি থাকবে না,
ছাত্রীদের উপর অত্যাচারের বিচার এবং আমাদের ভাইবোনদের উপর অত্যাচারের বিচার করতে হবে। রাত ৪ টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, ভাইয়ারা ফিরে গেছেন। মেয়েরা তাদের দাবি আদায়ে গণস্বাক্ষর করছে।

যে আহত হয়েছেন, তিনি নিরাপদে আছেন। আমরা নিরাপদে আছি। আর একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে মেয়েটার পা এর রগ কেটে ফেলা হয়েছে ( কেননা ভিক্টিমের জবানবন্দী এটাই) যদিও সরকারী হসপিটালের ডক্টর বলেছেন ওর ভেইন বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।( এটিএন নিউজে দেখানো হয়েছে)

১-৪-২০১৮
বিকাল সাড়ে চারটার দিকে হলে প্রোভোস্ট ম্যাম সাধারণ ছাত্রীদের নিয়ে হলের মাঠে বসেন। আমি তখন কোটাবিরোধী আন্দোলনে টি এস সি তে। যা জানতে পারি..ম্যাম বলেছেন হল থেকে ছাত্ররাজনীতি উঠানো হবে না কিন্তু ইশাকে ঢুকতে দিবেন না।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি(প্রকাশে অনিচ্ছুক):
রুমের সামনে মেয়েদের কথা বলা শুনে বাইরে আসি, শুনি ৩ তলা থেকে কোনো মেয়ে চিৎকার দিয়ে বলেছে, “আপুরা আসেন, মেরে ফেল্লো” । এরপর দেখতে দেখতে প্রত্যয় প্রদিপ্ত দুই বিল্ডিঙের মেয়েরাই মাঠে নেমে আসে। পরে সবাই একজোট হয়ে প্রত্যয়ের ৩ তলা, যেটায় নেত্রি এশা থাকে সেখানে যায়। চিৎকার ও সেখান থেকেই এসেছিল। ৩ তলায় দেখা যায় এশার রুমের দরজা বন্ধ। কতজন মেয়ে এশার রুমের ভেতরে ছিল বা তখন এশা ছাড়া কেউ ভিতরে ছিল কিনা তা জানি না। মেয়েরা বাইরে থেকে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। পরে, এত ভিড়ে কি হলো টের পাইনি তবে এশার রুমে মেয়েরা অবশেষে ঢুকতে পারে। সব মেয়েরা হুড়মুড় করে ভেতরে ঢোকার কারনে রুমের ভেতর কে কে ছিল সেটা ঠিকমতো কেউ বলতে পারছেনা। ভিড় কিছুটা কমলে ৩তলা থেকে ২ তলার এক্টা রুম পর্যন্ত রক্তের ফোঁটা দাগ দেখা যায়। পরে দেখা যায় বোটানির ৪র্থ বর্ষের মেয়ে মুরশিদার পা কেটে গেছে। মুরশিদা এশার রুমের দরজা ভাঙ্গার সময় জানালায় লাথি দেয় জানালা ভাঙ্গতে, তখন ওর পা কেটে যায় (কনফিউশন আছে আসলে কিভাবে পা কাটে, অনেকেই বলছে মুরশিদা প্রথমে বলেছিলো এশারা পা কেটেছে কিন্তু পরে ভয়ে আর সে কথা বলে নাই। এটা সত্য হতে পারে কারণ মুরশিদা যে ভয় পাচ্ছিলো আমি নিজে দেখেছি, ও বার বার বলছিলো, “আমার চেহারা দেখাবেন্না, আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব আপ্নারা নিতে পারবেন না”)। আরেক মেয়ের নাকি হাত ভেঙ্গে গেছে (শুনেছি)। এর মধ্যে ম্যাডামদের ডেকে আনা হলো, তারা মুরশিদাকে পাশের সরকারি কর্মজীবী হাসপাতালে নিয়ে গেল। অনেক কাহিনির পর এশা রুম থেকে মাঠে আসলে কিছু মেয়েরা ওকে মারতে চেষ্টা করে, নেতৃত্বে থাকা মেয়েরা এশাকে আড়াল করে ২ তালায় নিয়ে যায় কারন ওরা চায়নি ছাত্রলীগ এশাকে মারা নিয়ে কোনো ইস্যু বানাক। তারপর এশাকে হল ছাড়তে বলা হয়। এশা প্রথমে রাজি না হলেও পরে অবস্থার গুরুত্ব দেখে রাজি হয়। কিন্তু তারপর নাটক আর তালবাহানা শুরু করে , নেতৃত্বে থাকা মেয়েরা চরম ধৈর্য নিয়ে এশাকে বুঝাতে থাকে হল ছাড়ার জন্য আর মেয়েদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য। মেয়েদের দাবি ছিল এশাকে মাফ চেয়ে কান ধরে উঠ বস করতে হবে আর জুতার মালা গলায় দিতে হবে। চূড়ান্ত নাটক করে, মেয়েগুলার ধৈর্যের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে অবশেষে এশা নিচে নামে প্রোক্টর আসলে। প্রোক্টরের সামনে মেয়েরা আবার এশাকে মাফ চাইতে বলে, এশা পুরাটা সময় অস্বীকৃতি জানায় মাফ চাইতে বা মেয়েদের অন্য দাবী মেনে নিতে। প্রোক্টর সামহাউ এশা কে হলের গেটের দিকে পাঠাতে সক্ষম হয় (এত ভীড়ে কিছু দেখা যায় না)। মেয়েরা প্রোক্টরকে ঘিরে ধরে রেগে। এইদিকে এশা হলের বাইরে বের হতে পারেনা, মেয়েরা ঘিরে ধরে ওকে জুতার মালা পরায়, কান ধরে মাফও চাওয়ায়, কিছুটা মার ও খায় এশা, কিন্তু নেতৃত্বে থাকা মেয়েরা যতটা সম্ভব ওকে বাঁচানোর ট্রাই করে। এরপর ম্যাডাম রা মিলে এশাকে তাদের বিল্ডিঙে নিয়ে ঢুকায়। এশা এখনো সেখানেই আছে। ওকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মেয়েদের দাবি এশাকে স্থায়িভাবে বহিষ্কার করা হোক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

মুরশিদা এবং অন্য মেয়েদের থেকে শোনাঃ
এশা অনেক আগে থেকের মেয়েদের উপর শারীরিক ও মানসিক টর্চার করতো। অশ্লীল ভাষায় গালি দিতো, মারতো। গত ৩ দিন ধরে এশা রুমে যেয়ে যেয়ে মেয়েদের মেরে আসছিল। মুরশিদা সহ আর অনেক মেয়ের গায়েই মারের কালো দাগ পরে গেছে। মেয়েরা অনেকদিন ধরে ক্ষোভ পুষে রাখতে রাখতে কালকে সবাই একসাথে খেপে গেছে। মুরশিদা এখন ভাল আছে, ওর লোকাল গার্ডিয়ানের বাসায় আছে।

নিউ ভিডিও রগ কাটা এশাকে ''জুতার মালা'' পড়ানোর

রগ কাটা নেত্রী 'ইফফাত আরা এশা'র গলায় ''জুতার মালা'' পড়ানোর আর একটা স্পষ্ট ভিড়িও। ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগে হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহানকে জুতার মালা উপহার lIffat Jahan Isha #reformBDqouta #ReFormQouta_BD

Posted by Crime Patrol – Bengali on Wednesday, April 11, 2018