ফজলুল বারী:সিডনি থেকে ডারউইনে গিয়ে পৌঁছেছে প্রিয় প্রজন্ম দ্বীপ-তিথি। বিমান বন্দরে তাদের অভ্যর্থনা জানায় আরেক বাংলাদেশি প্রিয় প্রজন্ম দম্পতি অভিজিত-সঞ্চিতা। সিডনিতে থাকতে গাড়ি চালাতোনা অভিজিত। সিডনির ট্রেন-বাসের বিস্তর ব্যবস্থা থাকায় গাড়ি চালানো ছাড়াই সে চলতে পেরেছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এক প্রান্তের রাজ্য নর্দান টেরিটোরির রাজধানী ডারউইনে ট্রেন-বাসের বিস্তর ব্যবস্থা না থাকায় অভিজিতকে সেখানে গাড়ির হুইল ধরতেই হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা শেষে এখনও অভিবাসনের সুযোগ আছে। সিডনি-মেলবোর্নে ভিড়বাট্টা বেশি থাকায় অভিবাসনের জন্যে তুলনামূলক কম ব্যস্ত শহরগুলোয় চলে যাচ্ছে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা। অভিজিত যখন ডারউইন যায় তখন ফেসবুকে পরিচিত তারেক নামের সেখানকার একটি ছেলেকে অনুরোধ করলে সে তাকে বিমান বন্দরে রিসিভ, বাসায় নিয়ে খাইয়ে দাইয়ে এরপর তার জন্যে ঠিক করা বাসায় নিয়ে তুলেছে। এখন দ্বীপ-তিথি যখন গেলো এই কাজটা করলো অভিজিত-সঞ্চিতা। বিদেশে এটাই আমার প্রিয় প্রজন্ম নেটওয়ার্ক। এক বাংলাদেশি প্রিয় প্রজন্ম হাত ধরে সহযোগিতা করে আরেকজনকে। এভাবেই বিদেশে আমাদের বাংলাদেশটা শুধুই বড় হচ্ছে।
আমি একটা ক্যাম্পেন করি সব সময়। তাহলো আপনার সন্তানকে পড়াশুনার জন্যে বিদেশে পাঠান। এর কারনগুলো এখানে লিখবো। এক সময় বাংলাদেশের পত্রিকায় ‘উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ যাত্রা’ শিরোনামের একটি বিজ্ঞাপন ছাপা হতো। ‘অমুকের পুত্র অমুক, অমুকের নাতি অমুক উচ্চ শিক্ষার্থে অমুক দেশের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করিয়াছেন। সময়ের অভাবে তিনি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দেখা করিয়া যাইতে না পারায় আন্তরিকভাবে দূঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। সকলের দোয়া প্রার্থী।‘ এখন আর কারও পড়াশুনা বা বিদেশ যাত্রা উপলক্ষে এ ধরনের বিজ্ঞাপনের ধারা চালু নেই। এক সময় জমিদার বা গ্রামের সম্পন্ন ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেরা আইন বা চিকিৎসা শাস্ত্রে পড়াশুনার জন্যে বিদেশ তথা বিলাত যেতেন। পড়াশুনা শেষে দেশে ফিরে তারা আইন বা চিকিৎসা পেশায় যোগ দিতেন। এখন বিদেশ যেতে শুধুমাত্র ধনাঢ্য হওয়া লাগেনা। পর্যটন যেমন একটি শিল্প, ইন্ডাস্ট্রি। শিক্ষাখাতও দেশে দেশে এখন একটি শিল্প। বাংলাদেশে প্রায় বিভিন্ন দেশের এডুকেশন ফেয়ার হয়। সবাই চায় তার দেশে বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা করতে আসুক।
বাংলাদেশের ধনাঢ্য অভিভাবকদের আমি একটা কথা বলি তাহলো সৎ উপার্জনের ক্ষেত্রে তারা নিশ্চয় অস্ট্রেলিয়ার অভিভাবকদের চেয়ে বেশি ধনাঢ্য নন। বাংলাদেশের অভিভাবকরা সন্তানের পড়াশুনার খরচ-হাতখরচ সব দেন। সামর্থ্যে না কুলালে দুর্নীতি করে হলেও দেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অভিভাবকরা ভাবতে পারেননা সন্তানদের পড়াশুনার খরচ দেবেন অথবা সন্তানরাও সেভাবে ভাবেনা। সবাই কাজ করে পড়াশুনা এবং নিজের রাহা খরচের ব্যবস্থা করে। আপনার সন্তানকেও চিন্তায় স্বাবলম্বী করুন। তাতে সে সংগ্রামী এবং আত্মবিশ্বাসী হবে। এখন বিদেশে পড়াশুনা করতে উৎসাহ কেনো দেই তা বলি। দেশে আমরা একেকজন নানান কিছু। ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের নেতা অথবা দাপুটে সাংবাদিক! নাম শুনলেই আশেপাশের লোকজন থরথর কাঁপে! এই আমরাই বিদেশ গেলে নিজেদের ওজন করতে শিখি। ঘটে মাল কী আছে তা বুঝতে পারি। অতএব নিজেদের আত্ম জিজ্ঞাসার প্রয়োজনেও সুযোগ পেলে সবার দেশের বাইরে যাওয়া উচিত।
অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে পড়াশুনায় যেতে প্রথম যোগ্যতা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা তথা আইএলটিএস স্কোর। এই স্কোর সহ অনলাইনে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করা যায়। বাংলাদেশে কাজের বাজার থাকুক আর না থাকুক যা খুশি তাই পড়াশুনা করা হয়। বিদেশে পড়তে গেলে সে দেশে অভিবাসন চাইলে যে বিষয়ের চাহিদা আছে শুধু তাই পড়ার চেষ্টা করা উচিত। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা করতে অভিভাবকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দেখানো জরুরি। ব্যাংকে জমা টেক্সপেইড ৩০-৩৫ লাখ টাকা দেখাতে হয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী একটি সেমিস্টারের টিউশন ফী জমা দিয়ে যায় বা এদেশে আসে। এতে করে বিমান ভাড়া সহ ১২-১৩ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী দ্বিতীয় টিউশন ফী থেকে শুরু করে সব খরচ কাজ করে ব্যবস্থা করে।
বিদেশে ছাত্রদের প্রথম কাজ মানে ক্লিনিং-কিচেন হ্যান্ড বা দোকান কর্মচারী। যে কোন কাজের ব্যাপারে পজিটিভ হলে কাজ পাওয়া যায়। যারা কাজ বাছে তাদের কাজ পেতে দেরি হয়। প্রথম কাজটা সাধারনত যাদের সঙ্গে থাকা হয় তাদের মাধ্যমে হয়। একজন কাজ দিতে পারে, কিন্তু কাজটা করতে হয় তাকে। কাজটা ধরে রাখতে হয় তাকে। স্পোকেন ইংলিশে যে ভালো তার কাজ হয় দ্রুত। কাজের প্রথম দিনই নিজেকে স্মার্টভাবে উপস্থাপন জরুরি। আগে দর্শনধারী, পরে গুনবিচারী। নিজেকে স্পিডি, সময়ানুগ, হাসিমুখ এবং ইতিবাচক হিসাবে প্রদর্শন করা জরুরি। আপনি ধীরগতির, হাসিমুখ না, চেহারায় বিধবস্ত, আপনার চাকরি হবেনা। কাজের লোক মনে হলে জানতে চাইবে কবে কবে কাজ করতে পারবে। কাজের লোক মনে না হলে বলবে তোমার ফোন নাম্বার দিয়ে যাও, পরে জানাবো। এরমানে কাজ হয়নি।
নতুন ছেলেমেয়েদের আমরা এখানে কাজ খুঁজে পেতে সহায়তা করি। নতুন যে কাউকে কেউ যদি প্রথম এক মাস একটু সাপোর্ট দেয় তাহলে এরপর তারা একা একা চলতে পারে। এই সহযোগিতা আমরা করি। এক বাংলাদেশি আরেক বাংলাদেশিকে করে। অস্ট্রেলিয়ায় কোন কোন বিষয়ে পড়তে আসা উচিত তা জানতে এই ওয়েব লিংকে রিসার্চ করুন https://www.aptechvisa.com/australia-immigration/australia-combined-skilled-occupation-list । পড়াশুনায় আসার নিয়মকানুন জানতে রিসার্চ করুন এই লিংকে https://www.studyinaustralia.gov.au/। কেউ যদি মনে করেন পড়শুনার নামে আসবেন কিন্তু পড়াশুনা করবেননা, তারা অস্ট্রেলিয়ায় আসবেননা। পড়াশুনায় নিয়মিত না থাকলে, ক্লাস-পরীক্ষায় নিয়মিত-সন্তোষজনক না থাকলে স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছাত্র এদেশে যেমন নিজের খরচে পড়ে তেমনি পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করে।