খালেদা জিয়া বিএনপির সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস

খালেদা জিয়া বিএনপির সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস

ফজলুল বারী:এ যেন অনেকটা ডিম আগে না মুরগি আগে বিতর্কের মতো প্যারোল না জামিনে মুক্তির বিতর্ক চলছে খালেদা জিয়াকে নিয়ে। পরিবার বলেছিল তারা যে কোন উপায়ে মুক্তির মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপার্সনকে চিকিৎসার জন্যে বিদেশ নিয়ে যেতে চায়। তখন থেকেই প্যারোলের বিষয়টি সামনে চলে আসে। সরকারও নিজের মতো করে লেখা ভাষায় প্যারোলে মুক্তি দিতে চায়। জেলখানায় অসুস্থ খালেদা জিয়া যেন এখন সরকারেরও গলার কাঁটা! কিন্তু খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চান কিনা তা পরিবারের যারা দেখা করতে যান তারা ছাড়া আর কেউ তা নিশ্চিত জানেনা। এই দেখা সাক্ষাৎ অনুসরন করা গোয়েন্দারা জানতে পারেন। বিএনপি চায় জামিনে মুক্তি। দলটির আইনজীবী নেতারা মঙ্গলবার আবার হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন। এই আবেদনের ভবিষ্যত কী হবে তা সহজে অনুমেয়। কারন সর্বোচ্চ আদালত আপীল বিভাগে এরমাঝে জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

কিন্তু এটি সত্য খালেদা জিয়ার সুস্থ হতে তাঁর কারামুক্তি মুক্তি দরকার। মুক্ত পরিবেশ তাঁকে সুস্থ করবে। বার্ধক্যের পাশাপাশি তাঁর যে সব শারীরিক সমস্যা,  এগুলোর মুখস্ত কিছু চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী চালু আছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেও এসব চিকিৎসা খালেদা জিয়াকে দেয়া হচ্ছে অথবা তা তিনি তা গ্রহনে অনীহা জানাচ্ছেন। একেতো অপছন্দের জেল জীবন, এর উপর হাসপাতালের নামটাই তাঁর অপছন্দের। ওখানকার শীর্ষ ডাক্তারদের দেখলেই সম্ভবত তাদেরকে তাঁর আওয়ামী বাকশালী মনে হয়! এরজন্যে ডাক্তারদের তিনি সহজে দেখা দেননা! বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এখানে রাজনৈতিক দলের নামে ডাক্তারদেরও নাম হয়! আওয়ামী লীগের ডাক্তার, বিএনপির ডাক্তার! এমন পরিচয়ে তারা মিডিয়ায় কথাও বলেন!

আর পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিক দেখলেই বলেন, এখানে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছেনা। এতোদিন ধরেতো এখানে থাকলেন, কিন্তু অগ্রগতি কই। দিন দিনতো তাঁর অবস্থাতো খারাপই হচ্ছে। জেলখানায় তিনি শাড়ি পরে হেঁটে হেঁটে গিয়েছিলেন। এখন তিনি একা নিজে দাঁড়াতে পারেননা। তাঁর হাত দুটি বেঁকে যাচ্ছে। এভাবে চললেতো তাঁকে আমরা জীবতাবস্থায় বাসায় নিয়ে যেতে পারবোনা। মোটামুটি পরিবারেরও যেন বক্তব্য জেলখানায় খালেদা জিয়ার খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে চলার কথা ছিলো! জেল জীবন যে কারোরই কাম্য নয়, ওখানে গেলে সুস্থ মানুষও যে অসুস্থ হতে বাধ্য এটিই যে এই বয়সে আর্থাইটিজ-ডায়াবেটিকসের রোগী খালেদা জিয়ার আসল অসুখ।

খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার বোনের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্যে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের ডাক্তারদের কাছে পত্র লিখেছেন। এই পত্র লেখা নিয়ে অনেকে ভুল ধরেছেন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে তাঁর এই ভাই নেপথ্যে বিমান মন্ত্রনালয় দেখতেন। তার দাপটে কাঁপতো অনেক কিছু! বিমানের সব বড় কেনাকাটা-নিয়োগ তার মর্জি ছাড়া হতোনা। বোনের ক্ষমতা চলে যাবার পর সুফি সাহেবের মতো তিনিও চলে গেছেন নেপথ্যে। তার এই পত্র লেখার পিছনে একটা বুদ্ধি কাজ করেছে। বিদেশে যে কোন রোগীকে নিয়ে যেতে দেশের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বোর্ডের সুপারিশপত্র লাগে। শামীম ইস্কান্দার হয়তো মনে করেছিলেন পত্রপাঠ চিকিৎসকদের এ কাজটি এগিয়ে রাখার অগ্রগতি হয়ে থাকবে। টু ডে অর টুমোরো এটাতো লাগবেই। কিন্তু তাঁর বোন ক্ষমতায় থাকা মানে তিনিও ক্ষমতায় ছিলেন। যে চিকিৎসা দেশে সম্ভব সে সুপারিশপত্র সরকারি নির্দেশনা ছাড়া তারা দিয়ে দেবেন, এমন তিনি ভাবলেন কী করে?

এরমাঝে আরেক ঘটনা ঘটেছে। ‘বিএনপিপন্থী দুই নিরপেক্ষ পন্ডিতনমন্য’ সম্প্রতি দুটি লেখা লিখেছেন। এদের মধ্যে একজন আবার ওহী পেয়েছেন লিফটের মধ্যে! দুই লেখার সারকথা হচ্ছে প্যারোল মানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক আত্মহত্যা। দোষ স্বীকার করে প্যারোলের আবেদন করতে হবে। আপোষহীন নেত্রী মরে যেতে পারেন। কিন্তু দোষ স্বীকার করতে পারেননা। খালেদা জিয়া শুধু বিএনপি না এমন অনেকের কাছে সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস! রাজহাঁসটা প্যারোলে মরে গেলে ‘তাহা হইতে বিশুদ্ধ রাজনৈতিক ডিম কী করিয়া আসিবে?’  এই দুই লেখা পড়ে নড়েছড়ে বসেছেন দল এবং পরিবার। বোন সেলিমা ইসলাম এক টিভি চ্যানেলকে ফোনে বলেছেন তারা কারও কাছে প্যারোলের আবেদন করেননি। প্যারোল মানেতো দোষ স্বীকার। সেলিমা আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল মানবিক কারনেও মুক্তির কথা বলেছেন। মির্জা ফখরুল ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করায় খুব রাগ করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।

ছোট দলের এই বড় নেতা সারাক্ষন ভয়ের মধ্যে থাকেন কখন না আবার আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলে-টিলে যায়! আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলে গেলে এই নেতার মাইক-ফ্লোর সব হারানোর ভয়। কোন একদিন ধানের শীষে এমপি হবার আশায় মুখিয়ে আছেন জিয়ার আমলে গ্রেফতার হওয়া এই নেতা। বিএনপির নেতাদের কথা বলার বিশেষ দুটি মাধ্যম আছে। আবাসিক নেতা হিসাবে স্বনামখ্যাত রুহুল কবীর রিজভি কথা বলেন অফিসের ব্রিফিং’এ। মির্জা ফখরুল জিয়ার মাজার জিয়ারতের মুনাজাত শেষে কথা বলেন। মঙ্গলবার এমন একটি মুনাজাত উত্তর ব্রিফিং’এ মি

ফজলুল বারী
fazlulbari2014@gmail.com

র্জা ফখরুল বলতে চেয়েছেন ওবায়দুল কাদেরকে তিনি ফোন করেননি। বা এটা এভাবে বলার কী হলো? ডিমটা মাটিতে পড়ার আগে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মির্জা ফখরুল যে তাঁকে ফোন করেছিলেন সেই ফোনালাপের রেকর্ডও তাঁর কাছে আছে! অতএব ‘মাহমুদুর রহমান মান্না এখন বলিতে পারিবেন, ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করিতে সাবধান! রেকর্ড রাখিয়া দিবে!’ যেমন গনভবনের সংলাপের খাওয়া দাওয়ার ছবি মিডিয়ায় দেখে বিরক্ত মান্না বলেছিলেন, ‘কী বেহায়া দল রে বাবা, খাওয়ায় আবার মিডিয়াতে ছবিও দেয়! বিএনপির খাওয়াদাওয়ার কোন ছবি কেউ দেখেনা!’

এই হলো ডিম আগে না মুরগি আগে, প্যারোল না জামিন স্বপ্নের খালেদা জিয়ার মুক্তির সর্বশেষ । প্যারোল অথবা আন্দোলনে সরকারকে বাধ্য করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। প্যারোলে দলের শরম। আন্দোলনে সরকারকে বাধ্য করার সামর্থ্য বিএনপির নেই। আওয়ামী লীগ যখন বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতো তখন মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরীদেরও পিটিয়ে রাস্তায় শুইয়ে দেয়া হতো। বিএনপির দিকে লাঠি তুললেই ‘একদলীয় শাসনের পুলিশ খালি মারে, ব্যথা দেয়’ বললে তারা কাঁদতে শুরু করে দেয়! তবে একটা অগ্রগতি হলো, খালেদা জিয়া এভাবে জেলে থাকায় দলের অনেকের কাছে তিনি ‘ম্যাডাম’ থেকে ‘মা’ হয়েছেন। কিন্তু ‘বক্তৃতা-শ্লোগানের এই মায়ের হাতের রান্না’ খাওয়ার কোন সৌভাগ্য অথবা স্মৃতি এ দলের কোন নেতা-কর্মী বা এই ‘সন্তানদের’ নেই। মায়ের হেঁশেলে সন্তানদের প্রবেশাধিকার থাকে। বড়জোর অফিস পর্যন্ত পৌঁছা যেতো ম্যাডামের’। এরজন্যে ‘এই মায়ের জেলজীবন’ নিয়েও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন আবেগ-ক্রোধ সৃষ্টি করতে পারেনি। তেমন আবেগ-ক্রোধ সৃষ্টি হলে কী সরকারের সাধ্য তাকে আটকে রাখে?