ফজলুল বারী: শিখরা বিশ্বাস করে মানবজাতি দু’ভাগে বিভক্ত। শিখ ও অশিখ! প্রতিটি মানব শিশু পৃথিবীতে শিখ হিসাবে জন্ম নেয়। তার চুল কাটার পর সে অশিখ হয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিও সেভাবে আওয়ামী লীগ-অআওয়ামী লীগ এমন দু’ভাগে বিভক্ত।
আরও স্পষ্টভাবে বললে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষে দু’ধারায়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূলধারা আওয়ামী লীগ। এছাড়া এখানে আরও কয়েকটি বড়নেতার ছোট দল আছে যেগুলোও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দল।
এমনকি ডক্টর কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারের দলগুলোও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের। কিন্তু তেলে আর জলে যেমন মিলেনা তাই বিএনপির সঙ্গে গিয়েও তারা তাই কোন শক্তি হিসাবে দাঁড়ায়নি। কারন সেখানে মূল বিএনপি দলটি এখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের মূলধারা।
সে জন্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-ফাঁসির পর এই দল-জোটের নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়াহীন চুপ করে থাকতে বলা হয়। এমন কোন অস্পষ্ট রাজনৈতিক গ্রুপ মানুষের সামনে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে দাঁড়ায়না।
আবার ১৪ দলের দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হলেও আওয়ামী লীগের পরাক্রমশালী অবস্থানের কারনে তাদের অবস্থান ম্রিয়মান। সেখানে অনেক ছোটদলের বড়নেতা আছেন। কিন্তু তাদের কারও দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মূলধারা নয় বা হবেওনা।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী তথা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজনীতির মূলধারা বিএনপি। সেখানে আরেকটি বিএনপি তথা বিএনপির বিকল্প ধারা গড়ার অনেকগুলো চেষ্টা হয়েছে। তা সফল হয়নি। একটি বিএনপি শক্তিশালী থাকতে আরেকটি বিএনপি দাঁড়ায়না।
বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের মূলধারা বলাতে অনেকে ক্ষুদ্ধ-বিরক্ত হতে পারেন। কারন এর প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকদের অন্যতম, একজন সেক্টর কমান্ডার এবং একজন খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে জিয়া কোন পরিস্থিতিতে গিয়েছিলেন, যুদ্ধের সময় তার কি ভূমিকা ছিল তা অনেক প্রশ্ন-বিতর্ক আছে-থাকতে পারে। কিন্তু তিনি যে মুজিবনগর সরকার স্বীকৃত-বেতনভূক্ত একজন সেক্টর কমান্ডার-মুক্তিযোদ্ধা তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই। কিতাবে তখন তা ঠিক লেখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আগে পরে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন-বিতর্ক আছে-থাকতে পারে। কিন্তু জিয়া যে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তা নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।
কিন্তু জিয়ার রাজনৈতিক মিশনটি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য-আদর্শ বাস্তবায়নের উদ্দেশে ছিলোনা। সেটি হলে জিয়ার দলেরও শ্লোগান হতো জয় বাংলা। যেটি মুক্তিযুদ্ধের মূল শ্লোগান। পাকিস্তান জিন্দাবাদের মতো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ-আদর্শের দল হয়না। জিয়া সে চেষ্টাও করেননি।
সেভাবে বিএনপিতে মেজর হাফিজের মতো অনেক মুক্তিযোদ্ধা যোগ দিলেও এখনও থাকলেও বিএনপি কোন মুক্তিযুদ্ধের ধারার রাজনৈতিক দল নয়। জিয়ার অধীনে কাজ করা মেজর হাফিজের মতো অনেক মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার পরে সোজা-সাপ্টা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে তার রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তখন আওয়ামী লীগের ছত্রখান অবস্থা। নতুন মৌসুমী রাজনীতিকরা কখনও কোন ছত্রখান রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়না। আওয়ামী লীগের পোড়খাওয়া নেতাকর্মীরা মরে গেলেও একজন জেনারেলের নতুন দলে পাওয়া যাবেনা বা তাদের দিয়ে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বলানো যাবেনা।
তাই জিয়া তখন রাজনৈতিক দল গঠনের সহজ পথ দালাল আইন বাতিল করে কারাগারে থাকা যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের সঙ্গী করে নিয়েছিলেন। তাই জিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল শাহ আজিজের মতো ঘৃনিত এক মুসলিম লীগার।
এই শাহ আজিজুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বলতে পাকিস্তানিরা জাতিসংঘে পাঠিয়েছিল। এমন বাংলাদেশের জন্মবিরোধী লোকজনের ঘুটাঘুটা দল মুক্তিযুদ্ধের দল হয়না।
ঠিক একইভাবে জিয়াকে হত্যার পর এরশাদ বিএনপির মতো আরেকটি দল গঠন করেছিল। একই রকম দুটি দল বাজারে শক্তিশালী থাকেনা। সে কারনে আরেকটি বাংলাদেশ জিন্দাবাদের দল জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকায় বিএনপি দূর্বল হয়ে পড়েছিল।
ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের মতো বিএনপির শতশত নেতাকর্মী তখন বিএনপি ছেড়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়। আবার বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে মওদুদ আহমদগং বিএনপিতে ফিরে এলে জাতীয় পার্টি দূর্বল হয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের পরিচয়ে মৃত্যুবরন করার স্বপ্নে এরশাদের ক্ষমতার ভাগের লোভে যাওয়া মিজানুর রহমানরাও আবার আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। আব্দুর রাজ্জাকরাও ফিরে আসেন। কারন তারাও চেষ্টা করে দেখেছেন মিজান আওয়ামী লীগ বা মহিউদ্দিন-রাজ্জাকের বাকশাল দিয়ে আওয়ামী লীগের মূলধারা করা যায়নি।
ঠিক একইভাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা গঠন করে দেখেছেন বাংলাদেশ জিন্দাবাদ বললেও এটি বিএনপির বিকল্প হয়নি। মহাখালীর রেললাইন ধরে দৌড়ানি দেয়ার দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়ে যায় বলে তিনি আর বিএনপিতেও ফিরে যেতে পারেননি।
আওয়ামী লীগের দয়ায় ছেলে মাহী বি চৌধুরীকে এমপি করতে পাবার সুখ বুকে নিয়ে তিনি আপাতত আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলেও মানসিক শান্তিতে নেই। কারন মনে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ রেখে চিৎকার করে জয় বাংলা বলা যায়না। বিএনপির ওখানে অলি আহমদের দলটিরও একই কারনে না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা।
এরশাদের দলের অপভ্রংশ আন্দালিব রহমানের পার্থ’র বিজেপি, জাতীয় পার্টি(জাফর) ঠিক একইভাবে তৃতীয় ছাগ শিশুর মতো বিএনপির সঙ্গে আছে। বিএনপির সঙ্গে থেকে কোনদিন যদি ধানের শীষে একটি-দুইটি এমপি হওয়া ছাড়া তাদের জীবনের আর কোন আশা-স্বপ্ন নেই।
বাংলাদেশে সম্প্রতি আরেকটি জামায়াতে ইসলামীর আবির্ভাব ঘটেছে এবি পার্টি! এটির প্রান ভোমরা বিলাতে পালিয়ে যাওয়া ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাক। সাবেক জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধীদের হেড উকিল ব্যারিষ্টার রাজ্জাকের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তদন্ত শুরু হলে তিনি বিলাতে পালিয়ে যান।
সেখানে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের জন্মের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের এক বিশাল হাতি মাপের সংস্কারপন্থী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন! প্রশ্ন রেখেছেন জামায়াত কেনো একাত্তরের ভূমিকার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেনা।
কিন্তু ব্যারিষ্টার রাজ্জাক আপনি কী আপনার একাত্তরের ভূমিকার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? আপনি যে যুদ্ধাপরাধীদের হেড উকিল সেজেছিলেন, বিলাতে পালিয়ে যাবার পরেও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক লবিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কাজ করছিলেন, এরজন্যে কী ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? অতএব এবি পার্টির গোড়ায় গলদ।
নতুন দলের আহবায়ক সোলায়মান চৌধুরীরও একাত্তরে তার এলাকায় বাংলাদেশ বিরোধী রাজাকারি ভূমিকা ছিল। ফেনীতে জেলা প্রশাসক থাকার সময় তিনি সে জেলা থেকে আওয়ামী লীগ নির্মূলের ব্যর্থ চেষ্টা করেন।
এখন এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে কী ফেনীতে নামতে দেবে? তার এলাকার লোকজনওতো তাকে রাজাকার হিসাবেই চেনে।
বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদে সোলায়মান চৌধুরী সচিব পর্যন্ত হয়েছেন। কখনো খালেদার উপদেষ্টা কখনও পেয়েছেন জামায়াতের বিশেষ দায়িত্ব! একই অঙ্গে তার কতরূপ! আবার পত্রিকায় ঘোষনা দিয়ে জামায়াত ত্যাগও করেছেন! এমন পরীক্ষিত স্বাধীনতা বিরোধী সাবেক জামায়াত নেতার নেতৃত্বে নতুন জামায়াত জমবেনা।
নতুন দলের সদস্য সচিব জামায়াতের সাবেক নেতা মুজিবুর রহমান মঞ্জু। আরেক নেতা তাজুল ইসলামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাবেক সাথী। যুদ্ধাপরাধীদের উকিল হিসাবে আদালতে-মিডিয়ার সামনে অনেক পরিশ্রম করেছেন। ফাঁসির পর খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বলেছেন শহীদ!
এরপর যখন তার কিছু বিষয়ে তদন্ত শুরু হলে হঠাৎ আদালতে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এমন চিহ্নিত ব্যক্তিকে নিয়ে আরেকটা জামায়াত জমবেনা। নতুন বোতলে পুরাতন মদ কেউ খাবেনা। মদ যারা খায় নতুন আসলটাই খায়।
এ দলের এখন পর্যন্ত আরও যাদের নাম জানা গেছে তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের সাবেক নেতা। আর ভূতের মুখে রাম নামের মতো হঠাৎ তারা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের নীতি আদর্শের কথা!
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মন্ত্রইতো জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। আপনাদের শ্লোগান কী জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু? ধর্ম নিরপেক্ষ আদর্শের একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন ছিল মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য।
এসব সাবেক জামায়াত-শিবির নেতাদের কী জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান দেয়া বা ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা সম্ভব? মেজেন্ডা রঙের একটি মুজিবকোট পরলেই কী রঙ পাল্টানো সম্ভব মুজিবুর মঞ্জু?
এসব বর্নচোরাদের নেতৃত্বে আরেকটি জামায়াত বা জামায়াতের ছদ্মবেশী কাজকর্ম জমবেনা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দলতো বহুদূর। যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের আন্ডা-বাচ্চাদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের দল হয়না।
দেশের আমজনতাকে এরা এতোটা বোকাসোকা ভাবার দুঃসাহস পেলো কী করে। মাঠে নামার চেষ্টার আগে তাদের দৌড়ের পথগুলো চিনে রাখতে হবে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রিয় প্রজন্ম এটিকে এরমাঝে আলবদর পার্টি নামে ডাকতে শুরু করেছে। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ‘আমার বাংলাদেশ’ বইটির প্রচ্ছদে ভেসে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া!
নতুন দলের নেতাকর্মী কারা হবে? নিশ্চয় এরাও জামায়াত-শিবির থেকে আসা লোকজন বা তেমন ভাবাপন্ন। তারা জামায়াতের মূলধারা ছেড়ে এখানে কেন আসবে। এরমাঝে সে প্রশ্ন উঠে গেছে।
কারন এখন বাংলাদেশের যে কোন চিপার কোথাও যদি জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের কোন বৈঠকের খবর পাওয়া যায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের সবাইকে গণগ্রেফতার করে।
এরপর মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দেয় ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে হানা দিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে’, ‘সেখানে তারা জঙ্গী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল,’ ‘তাদের কাছ থেকে জঙ্গী পুস্তক, ককটেল, ককটেল নির্মানের সরঞ্জামাদি উদ্ধার’ করা হয়েছে, ইত্যাদি।
যেখানে ‘পুরাতন জামায়াতের অফিস’ তালাবদ্ধ, সেখানে ‘নতুন জামায়াতের অফিস’ খোলা! এরা ঘোষনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও তাদের কেনো গ্রেফতার করা হলোনা?
এরজন্যেই কী তারা নিজেরা নিজেরা বলতে শুরু করেছে তারা কিংস পার্টি না, তারা সরকারের বা জামায়াতের বি টিম না ইত্যাদি?
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনার নাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এরচেয়ে বড় কোন রাজনৈতিক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটবেনা। এবি অথবা আলবদর পার্টির আব্বা-আম্মারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনার আত্মস্বীকৃত প্রতিপক্ষ।
মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান থেকে শুরু করে সবকিছু মুজিবনগর সরকারের ঘোষনায় আছে। যে সব এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দলিলখন্ডের অন্তর্ভূক্ত এবং বাংলাদেশের সংবিধানের অংশ। এসব নিয়ে নতুন কোন ব্যাখ্যা অথবা চালাকি চলেনা।
এবি অথবা আলবদর পার্টির কুশীলবদের চালাকি এরমাঝে বাংলাদেশের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্মের কাছে ধরা পড়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রিয় প্রজন্মের কাছে এদের কোন ছাড় নেই। মাঠে নামলে দেখা যাবে।