মেলবোর্নে জাতীয় শোক দিবস পালন !

মেলবোর্নে জাতীয় শোক দিবস পালন !

১৫ই আগস্ট (২০২০) শনিবার মেলবোর্ন আওয়ামী লীগ, অষ্ট্রেলিয়া শাখার উদ্যোগে মেলবোর্নে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। কোভিড-১৯ এর কারনে মেলবোর্নে স্টেইজ-৪ রেস্ট্রিকশন এবং কারফিউ চলার কারনে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর এক চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর এক অনলাইন চিত্র প্রদর্শনী চলাকালে স্মৃতিচারণ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা কর্মী ও অতিথি গন। এতে উপস্থিত বাংলাদেশীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যায়। এ সময় এক আবেগ ঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেকে অশ্রু সংবরন করতে ব্যার্থ হন।

এরপর মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডঃ মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে দলের সাধারন সম্পাদক মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক সবাইকে স্বাগত জানিয়ে কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেন। অতঃপর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে শহীদ সকলের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এরপর এক তথ্য ও গবেষণামূলক অনলাইন আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোল্লা মোঃ রাশিদুল হক। তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন যে, না চাইতেই বঙ্গবন্ধু জাতিকে যে দুস্প্রাপ্য স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছেন তা জাতি এখনও বুঝে উঠতে পারছে না। পরাধীন যেসব এলাকার জনগন নিষ্পেষিত হচ্ছে তারা জানে স্বাধীনতার মূল্য, একজন বঙ্গবন্ধুর মূল্য। স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে খুন করায় দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে যার কারনে বাংলাদেশ আজকে মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত নয়। বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর সবার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতির মঙ্গলের স্বার্থে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের কারণে জাতি আজ মাথা তুলে পরিচয় দিতে অপারগ কেননা অল্প

কিছু মানুষের ঘ্রন্য কাজের জন্যে পুরো জাতিকে আজ এই অপবাদ মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্যে জান্নাতের দোয়া করেন ও বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের শাস্তি কার্জকর করার দাবী জানান। এ ব্যাপারে তিনি মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমেরিকা সরকারের কাছে খুনীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো জন্যে পাঠানো ইমেইলের কথা জানান। এছাড়া তিনি সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু, তার শহীদ পরিবার এবং তার বাবা চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীর কমিটির প্রাক্তন সদস্য জনাব অধ্যাপক মোল্লা মোঃ রিয়াছত উল্লাহ সাহেবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে গত ১৪ই আগস্ট শুক্রবার চাঁদপুর জেলার মতলব (দঃ) পৌরসভায় কোভিড-১৯ এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরনের কথা জানান।

মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের উপদেস্টা, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সালেক সূফি তার স্মৃতিচারনমূলক বক্তব্যে বলেন যে বঙ্গবন্ধু তাদের বলেছিলেন যে বাংলাদেশে প্রচুর তেল গ্যাস আছে, তা দিয়েই বাংলাদেশের মানুষের অনেক চাহিদা পূরন হবে। বুয়েটে যেন প্রচুর পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার বানানো হয় যাতে দেশের ছেলেরা দেশের জন্যে কাজ করতে পারে। তাদের তিনি দেশ ছেড়ে না গিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে বলেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার আর এম আই টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের উপদেস্টা জনাব সানিয়াত ইসলাম বলেন যে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় সফলতা হলো উনি ৭ কোটি বাংলাদেশীকে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রশংসা করেন যার মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত হয়েছিল। জনপ্রিয় লেখক শওকত ওসমানের দৌহিত্র এবং মাননীয় বিজ্ঞান মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের ছেলে আইটি বিশেষজ্ঞ এশরার ওসমান তার বক্তব্যে বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে মনে প্রানে আমাদেরকে লালন করতে হবে এবং আমাদের জীবনে তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে । এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার বাবা ইয়াফেস ওসমানের লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ সরকারের অনারারী কনসাল বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান অনু তার রাজনৈতিক অগ্রজ শেখ কামাল এবং ক্লাসমেট জনাব শেখ জামালের সাথে উনার কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে ছড়ানো গুজব যে ভিত্তিহীন তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আরও বলেন যে বঙ্গবন্ধু চাইতেন সৎ মানুষরা রাজনীতিতে আসুক কিন্তু পরবর্তীতে জেনারেল জিয়ার সময় রাজনৈতিক দূর্নীতির কারনে ভালো মানুষের জন্যে রাজনীতি করা কস্টকর হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরন করলে সবাইকে সৎ রাজনীতি করতে হবে বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন।

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রাশিদা হক কনিকা তার বাবা-ভাইসহ তার পরিবারের ৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধাসহ স্মরন করেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যায় ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মুশতাকের মতো ঘরের শত্রু বিভীষণরা এখনো দলে আছেন। উনি ওনার মায়ের কথা স্মরন করেন যে ওনার মা ওনাকে এবং ওনার ভাইকে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্যে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করে যান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে তিনি কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে হাজার হাজার মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল হক বলেন বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু একই। বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে হলে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারনে আজ নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর কথা জানতে পারছে। তিনি ৯০ এর দশকে প্রশান্ত পাড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বঙ্গবন্ধু পরিশদ এবং আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেন। কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, এলজিআরডির প্রাক্তন প্রধান প্রকৌশলী জনাব ওয়াহিদুর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কঠিন সময়ের কথা স্মরন করেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন যারা স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করছে। এছাড়া দেশে বিএনপি-জামাত থেকে অনুপ্রবেশকারী বিভিন্ন লোকজন এবং শামীম-পাপিয়া-শাহেদরা কিভাবে আওয়ামী লীগের নামে দূর্নীতি করলো তা তদন্ত করার আহবান জানান।

মেলবোর্ন প্রবাসী চিত্রশিল্পী, লেখক এবং মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাসিনা চৌধুরী মিতা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে তাদের শিক্ষিত করার আহবান জানান। তিনি ছোটবেলায় তার পরিবারের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা হৃদয়ে ধারন করার কথা জানান। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মুলেন্দ গূনের লেখা একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। ক্যানবেরা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার ড. শামীম আলম বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সকলের জন্যে সবার কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন ছোট বেলায় পারিবারিক

ভাবেই তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, এবং মূল্যবোধকে হৃদয়ে ধারন করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকার এবং আওয়ামী লীগ থেকে দূর্নীতি রোধ কল্পে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। মেলবোর্ন আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রহমান চৌধুরী তার বক্তব্যে দেশ এবং দল যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে তার উপর আলোকপাত করেন। তিনি দূর্নীতি রোধ কল্পে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এরপর বক্তব্য রাখেন মেলবোর্ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ জেমস খান। তিনি তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার কাছ থেকে শোনা মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর কথা স্মৃতিচারন করেন। তিনি সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে জীবন গড়ার প্রত্যয় জ্ঞাপন করেন। মেলবোর্ন আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সালেহীন তার বক্তব্যে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, বঙ্গবন্ধু যাদুঘর, এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধীকে ভার্চুয়াল আর্কাইভে অন্তর্ভুক্ত করে অনলাইনে দেখানোর ব্যাবস্থা করার আহবান জানান যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম এবং যারা সরাসরি যেতে পারছে না তারা যেন তা দেখতে পারে। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক ড. শেখ আলিফ তার বক্তব্যে বাংলাদেশে সংঘটিত বিব্রতকর দূর্নীতি রোধকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আজহারুল ইসলাম সোহাগ, মেলবোর্ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ শহীদ সরকার, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জনাব আবু সাদেক সহ আরও অনেকে।

সমাপনী বক্তব্যে ড. মাহবুবুল আলম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ যারা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরবর্তীতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যারা জীবন দান করেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে হবে যেটা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী অন্তর্গত করার মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তথা আমাদের ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে । যে তিনি আরো উল্লেখ করেন যে মেলবোর্নেও বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দেরকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বীকৃতি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

অতঃপর অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধু, ওনার পরিবারের সকল শহীদসহ ঐদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যারা শহীদ হয়েছিলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশের জন্যে প্রান দেয়া সকল শহীদের জন্যে দোয়া করা হয়।