অনলাইন ডেস্ক: ০৮ অক্টোবর ২০১৫
বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যা, ব্লগার হত্যাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আল কায়েদা ও আইএসের দায় স্বীকারের খবর ফলাও করে প্রকাশ করে আসছে ‘সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিস্ট এনটিটিস (সাইট)’। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে নেতিবাচক প্রচারে নামা এই ‘সাইট’-এর নিয়ন্ত্রক রিটা কাৎজ।
তিনি আলোচিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’-এর গুপ্তচর। তার কাজ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও অনলাইনে ফাঁস করা। আল কায়েদা নেটওয়ার্ক, আইএসআইএস নেটওয়ার্ক, হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও হিজবুল্লাহ নিয়েই ‘সাইট’ নিয়মিত প্রচারণা চালায়।
এদিকে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আইএসের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে বিদেশী হত্যাকাণ্ডে আইএসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও ইসলামি রাষ্ট্রগুলোকে বিশ্বে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে মোসাদ তৎপর। ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্যভান্ডার উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ইরাকে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা রিটার বাবাও মোসাদের গুপ্তচর ছিলেন। দেশের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে ১৯৬৮ সালে সাদ্দাম সরকার তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
জানা গেছে, ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় আইএসকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করে এ দেশে আলোচিত হয়েছেন রিটা কাৎজও। ‘সাইট’ নামক একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা বা নির্বাহী পরিচালক তিনি। লন্ডনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাবেক পরিচালক জশ ডেভনের সঙ্গেও কাজ করছেন। কাজ করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবি আইয়ের সঙ্গে। অনর্গল আরবি বলতে সক্ষম রিটা মুসলমানের ছদ্মবেশে থেকেছেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্দোলনে, কাজ করেছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে।
পুলিশ জানায়, রিটা কাৎজের জন্ম ১৯৬৩ সালে ইরাকের বসরায়। স্বামীকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর রিটার মা তিনটি ছোট সন্তান নিয়ে ইরানে পালিয়ে যান।
এরপর তারা বসবাস শুরু করেন ইসরায়েলের ‘বাট ইয়াম’ শহরে। ইহুদি হলেও রিটা ইসরায়েলেই বিশেষ উদ্দেশ্যে আরবি ভাষা শেখেন। আর চাকরিটাও পেয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীতে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধানেই তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, ইতিহাস ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
বাংলাদেশ পুলিশ জানায়, রিটা কাৎজ ১৯৯৭ সালে ডাক্তার স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। কিন্তু জাল ভিসার কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আটক হন। পরে ওই জালিয়াতির কথা তিনি স্বীকারও করেন। এরপর ১৯৯৭ সালে তিনি মার্কিনিদের মধ্যপ্রাচ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে চাকরি পান।
হলিল্যান্ড ফাউন্ডেশন নামে একটি গ্রুপ হামাসের পক্ষে কাজ করছে এ তথ্য উদঘাটন করেন রিটা। এরপরই গোয়েন্দাগিরিতে তার কদর বেড়ে যায়। তখনই বোরকা পরা মুসলিম নারীর ছদ্মবেশে বিভিন্ন ইসলামি সম্মেলনে, ফান্ড সংগ্রাহকদের সঙ্গে ঘুরে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি।
ঘুরেছেন মসজিদ, ফিলিস্তিনি সমর্থকদের সঙ্গে থেকেছেন আন্দোলনে। সে সময় এফবিআই তাকে বেছে নেয় বিদেশি সন্ত্রাসী গ্রুপ নির্ধারণে গোয়েন্দাগিরির জন্য।
বাংলাদেশ পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০২ সালে ইরাক আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানদের ওপর কড়া নজরদারি করা হয়। সে সময়ই রিটা সাইট সংস্থাটির কাজ শুরু করেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরাক আক্রমণের আগে সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কথা বলেছিল মার্কিন ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সেটি মিথ্যা ও বানোয়াট প্রমাণিত হওয়ায় কালো প্রচারণার দায় পড়েছিল তাদের ওপর। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা সমালোচিত হয়েছিল পৃথিবীজুড়ে। তাই মিথ্যা বা বানোয়াট প্রচারণার দায়টা আর সরাসরি নিতে চায় না কোনো সংস্থা বা দেশ। কিন্তু এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জঙ্গি প্রচারণায় তাদের লক্ষ্য কী, তা জানাই এখন মূল বিষয়। (সূত্র: আমাদের সময়)