জাপানের দিনগুলি-১

জাপানের দিনগুলি-১

বন্ধুদের সাথে টিএসসিতে

সেটা ১৯৯৮ এর কথা । ডিওএইচএস এর একটা গ্রুপে প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করি । ফক্সপ্রো তে বানানো মিনি ডাটাবেজের প্রোগ্রামগুলোর রিপেয়ার করি আর নেটওয়ার্কের তারগুলো ইদুরে কেটেছে কিনা দেখি । তখন তো ওয়াই ফাই ছিল না, তাই তার দিয়ে তিনটা বিল্ডিং এর সমস্ত কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্ক । ইদুরের রাস্তাতে বাধা হলেই পারমিশন ছাড়াই কেটে ফেলতো তারগুলি । গার্মেন্টস কোম্পানির হেড অফিস । সকাল বেলা বায়ারের মেইল না পরলে কাজের ফিরিস্তি যে তৈরি করা যায় না । আগের রাতে ইদুরের দাতের ব্যায়াম মানে পরেরদিন সকালে আমার হাতের ব্যায়াম । তারগুলোকে টেনে টেনে দেখা লাগতো কোনটা সিগনাল বহনের অযোগ্য । চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে একের পর এক কলিগরা ভিজিট করতে থাকতো আমার রুমটায় । বসের ডাক পরার আগেই দায়িত্বে থাকা অর্ডারটার বিষয়ে আপ-টু-ডেট না থাকলে বসের ঝারি একটাও মাটিতে পরবে না । সেটা আমি না বুঝলেও ওনাদের মুখের তখনকার অবয়বই বলে দিতো কি ঘটতে যাচ্ছে পরবর্তী ১-২ ঘন্টায় । চায়ের কাপ থেকে যে ভাপ উঠতো সেটা দেখা গেলেও, মাথার চান্দি থেকে যে গরম হাওয়া উড়তো সেটা দৃষ্টিগোচর না হলেও অনুধাবন করা যেত । হংকং অফিস থেকে কাপড়ের শিপমেন্ট হলো কিনা, টমি হিলফিগার অর্ডারটা অ্যাকসেপ্ট করেছে কিনা, বোতামের সাইজে যে ছোট্ট পরিবর্তন দরকার সেট মেনে নিল কিনা ক্রেতারা, এরকম হাজারো অনুসন্ধান গিজ গিজ করতো মাথায় । গরম গরম চাগুলো কাপেই ঠান্ডা হয়ে যেত অনেকের । হংকং অফিসে ট্রান্সফারের ঝুলন্ত বিস্কুটটা এই বুঝি সহকর্মীদের অন্য কেউ মুখ থেকে নিয়ে নেয়। মায়া হত সেইসব মুখ দেখে । সার্ভার থেকে প্রিন্ট করে দিতাম কতেকদিন । অফিসে নিয়ম ছিল, সবার কাছে আসা মেইল সার্ভারে রেখে অটো ডিস্ট্রিবিউট করতে হবে। সার্ভারে জমে থাকা সব মেইল প্রিন্ট করে দিতে হবে মালিককে । মালিক পড়ুক বা নাই পড়ুক কাগজের অপচয় করতে হত প্রতিদিন । যদিও সমস্ত মেইল মালিকের কম্পিউটারেও পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল।

মালিক ছিলেন আর্মির রিটায়ার্ড পারসন । এরশাদ চাচার ধাতানি মনে হয় ভালোই খেয়েছিলেন । তার ঝাল ঝারেন কর্মচারি সবারই উপর । অন্যদের মুখে বকা খাওয়ার ঘটনা শুনে ভয়ে ভয়ে থাকতাম । কবে যে আমার পালা আসবে । বেশী দিন লাগে নাই আমার সেই আশা (?) পুরন হতে । একবারই খেয়েছিলাম । সেটাই প্রথম সেটাই শেষ । বাংলাদেশের চাকুরি জীবনে বসের ধমক শুধু সেদিনেরটাই । আমার অপরাধ ওনার পারমিশন ছাড়া ওনার সামনের দামি সোফাতে বসেছি কেন ? ওনার সেই আর্মি মার্কা ধমক এখনো চোখের সামনে ভাসে ।

টাইপিস্ট কাম হেলপার একজন ছিল, অনুপস্থিত থাকলে টাইপিস্ট হওয়া লাগতো মাঝে মাঝে । কম্পিউটার অন করেই চা খেতে খেতে চোখ বোলাতাম মেইলগুলোতে । না অফিসের মেইলগুলো না , নিজের কাছে আসা মেইল । মেইল খুব একটা আসতো না । এক ভায়রা ভাই থাকতেন জার্মানীতে অন্য একজন জাপানে । শ্বশুর সাহেবের  সাথে ভায়রা ভাইদের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল আমার ইমেইল অ্যাকাউন্টটা । কাজেই সপ্তাহে বড়জোর একদুখানা মেইল । একদিন দেখলাম আমার নামে মেইলের সংখ্যা একটু বেশী । টাটসু কানাসিরো নামক প্রেরককে দেখেই বুঝলাম জাপান থেকে এসেছে । বেশ কিছুদিন যাবত যোগাযোগ হচ্ছে ওনার সাথে । বেশীর ভাগই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে । মাঝে মাঝে ইমেইল এ । ওনার মাধ্যমেই মনবসুতে এপ্লাই করেছিলাম কিছুদিন আগে । পাঠানো এপ্লিকেশন ঠিকমত পৌছেছে কিনা, প্রোপোজালটা রিভিউ করা দরকার এই সব ব্যাপার নিয়ে লেখালেখি হত । শুনেছিলাম মনবুসোতে তিন চারবার করেও অনেকের হয় নাই, তাই প্রথমবার আমার মত পেসিমিসটিকের যে হবে না, এই ধারনা ছিল বদ্ধমূল । অনেকটা নেগেটিভ ফলের আশা নিয়েই ওপেন করলাম মেইলটা

জাপানের দিনগুলি-২

( মোঃ মাহবুবর রহমান , তোত্তরি, জাপান )
( মোঃ মাহবুবর রহমান ,
তোত্তরি, জাপান )