敬老の日 ( কোরো নো হি Respect for the Aged Day ) ছিল আজ! বয়স্কদের সম্মান দেখাতেই এই ছুটির আমদানি! জাপান সরকার আগেই বুঝতে পেরেছিল অল্প কিছু দিনের মধ্যেই বয়স্কদের সমাজ হতে যাচ্ছে এই দেশটা! তাই ১৯৬৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে বয়স্কদের সম্মান দেখানোর দিন ! তখন সম্মান দেখানোর মানুষ খুঁজতে হলেও এখন মাঠে ময়দানে প্রচুর। 高齢化社会(কোরেইকাশাকাই) Population ageing, নাম পাওয়া সমাজের মানুষের মধ্যে ৬৫বছর বয়সের মানুষের সংখ্যা হয়ে যায় বেশী। জাপান দেশটা এখন সেই সমাজে প্রবেশ করেছে। তাই বয়স্কদের সম্মান দেখানোর পাশাপাশি বাচ্চা উৎপাদনে সক্ষম দম্পতিদের ম্যাসেজ পাঠানোও উদ্দেশ্য থাকতে পারে জাপান সরকারের।
আজ আশির উপর বয়সের এক সিনিয়র সিটিজেনকে ড্রাইভ করতে দেখে অটোমেটিক্যালি ব্রেকে পা পরেছিল । এটা কি সম্মান দেখিয়ে না ভয় পেয়ে নিজেও জানি না । গিন্নী তো বলেই বসল বয়স্কদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বন্ধ করা উচিত! আমি শুধু বললাম ড্রাইভিং লাইসেন্সের রিক্যয়ারমেন্ট পুরা করলে ক্ষতি কিসে । মনে মনে বললাম মোবাইল নির্ভর ইয়াং জেনারেশনের চেয়ে বয়স্কদের মাথা এখন ও সজীব । ওনারা কথায় কথায় গুগল মিয়ার সাহায্য নেয় না । ব্রেনটাকে এখনো খাটায় । এই দিনের সম্মান পাবার জন্য ধরনা দেয়না কোথাও । কুজো হয়েও স্টিয়ারিং ধরে । মটর চালিত হুইল চেয়ারখানা নিয়ে মার্কেটে যায় । ডায়বেটিসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঝুড়ি ভর্তি করে আইসক্রীমের প্যাকেট দিয়ে ! সবচেয়ে কালারফুল কাপড়টা দিয়ে শরীর জড়িয়ে মনটাকে বানায় ইয়াং । হটস্প্রিংয়ের পুকুরে বসে বুড়াবুড়ি অতীত স্মৃতি রোমস্থন করে । নিজের কবরের ডিজাইন নিজেরাই করে ।
সপ্তাহের ছুটিকে তিনদিন করতে ハッピーマンデー制度 (হ্যাপি মানডে সেইদো) Happy Monday System এর মাধ্যমে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সোমবারে নাকি বন্ধটা নিয়েছে আইনের সংশোধন করে ! কর্মঠ জাতিটাও আরাম খোঁজে দেখি! আমাদের কাছে ছুটি ছুটিই, সেটা টানা হলেও ক্ষতি নাই, ভেঙ্গে ভেঙ্গে হলেও চিন্তা নাই ।
বয়স্কদের সম্মান দেখানোর দায়িত্ব সরকারকে দিয়ে আমরা ছুটিটাকে কাজে লাগিয়েছে বারবিকিউ করতে । কাজটা সঠিক হয়েছে কিনা সে চিন্তা মাথায় আসে নাই । আকাশ মনে হয়ে খেপেছিল আমাদের প্ল্যানে। বৃষ্টিকে তৈরি থাকতে বলে সূর্যকে লুকিয়েছিল মেঘের আড়ালে । মাংস কাটাকাটির দায়িত্ব আমার কাধেঁ দিয়ে গিন্নী ব্যস্ত ছিল অন্য কাজে । ছেলে বন্ধুকে সময় দিতেই ব্যস্ত । সেজেগুজে ফটোসেশন করতে যেয়ে গিন্নীর মুখটা হয়েছিল আকাশের চেয়েও বেশী গোমড়া । ফটোসেশনে আলোর স্বল্পতা কিঞ্চিত গোমড়া পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল বৈকি, ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব কিন্তু কমে নাই !
দ্বিগুন লেটে শুরু হয়েছিল যাত্রা । আকাশ বৃষ্টিকে বলেছিল ভয় দেখাতে । গিন্নীও দমে যাবার পাত্র নয় । এলান করলো ফেসবুকের ক্যাপসনের সম্ভাব্য টাইটেল ! “বৃষ্টির দিনে বারবিকিউ” ! ফ্যামিলী বারবিকিউ হলে কেমন হয় জানতে চেয়েছিল ছেলের মতামত ! ছেলে তখন বন্ধুর সাথে জাপানী ভাষায় কিচির মিচিরে ব্যস্ত । দায়সাড়া গোছের মতামত দিয়ে ফিরেছিল বন্ধুর সাথের আলোচনায় । আমার মাথায় তখন বৃষ্টির ফোটার আঘাতের চিন্তা । বারবিকিউ এর জায়গাটাতে শেড আছে সেটাই ভরসা । কিন্তু জায়গা পাব তো ? চিন্তা কিন্তু দুর হচ্ছে না ! অফিস আদালত বন্ধ হলেও রাস্তায় গাড়ীর সংখ্যা দেখাচ্ছে ওয়ার্কিং দিনের দৃশ্য । ঘর পোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলে নাকি ডরায় । আমার ঘর পোড়েনি কিন্তু মনে হচ্ছে সবাই বারবিকিউ এর উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে । আশা ছিল একটাই ! জাপানীরা মেঘলা দিনে আর কিছু করলেও বারবিকিউ করবে না । আমার আশা নিরাশ হয়নি । বলা চলে ফাকা মাঠে গোল দিয়েছি । একটা গ্রুপের মাংস পোড়ার ধোঁয়া ছাড়া অন্য শেডগুলি যাত্রীর অপেক্ষায় দ্বারখুলে বসে আছে। সমুদ্রে ওয়াটার বাইকগুলি গগন বিদারী আওয়াজ তুলে সমুদ্রের টেউয়ের উচ্চতাকে আরো বাড়িয়েছে !
এতক্ষন চিন্তা ছিল শেড না পাওয়ার আর এখন শেড চয়েসের চিন্তা ঢুকেছে মাথায় । ছেলেকে বললাম সিদ্ধান্ত নিতে । মাল ছামানা শেড এ নিয়েই বুঝলাম শুভংকরের ফাকিতে পরেছি । শেড আছে তবে সেটা বৃষ্টিকে রোধের জন্য নয় । বৃষ্টি অনায়াসেই আমার মাথাকে আঘাত করলো জোরেসোরেই । পাশের শেডে দুই জাপানিজ সখী বৃষ্টির হাত থেকে বাচতে আশ্রয় নিয়েই বুজেছিল, দৌড়ে যে এনার্জি লস করেছে সেটা মুল্যহীন । নিজেদের বোকামি বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে শেড ছেড়েছিল তৎক্ষনাত !
সত্যি বলতে বারবিকিউ এর আগুন জ্বালানো একদম অপছন্দের আমার । এতদিন জুনিয়রদের দিয়েই চালিয়ে নিয়ে ভক্ষন কাজে মনোযোগ ছিল আমার বেশী । আজ আর সেটার সুযোগ নেই । আগুন জ্বালাতে যেয়েই মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম এত দিন যাদের কষ্ট দিয়েছি । আমার করুন অবস্থা দেখে গিন্নী সাহায্যের হাত বাড়াল । ছেলেও মোবাইলে বাটন চাপা বন্ধ রেখে এগিয়ে আসলো বাপকে লজ্জার হাত থেকে বাচাতে । দু কেজি মুরগির মাংস আধা কেজি গরুর মাংস কোন দিক দিয়ে যে সাবাড় হয়েছিল বলতে পারব না । অথচ সদস্য সংখ্যা মাত্র চারজন!
আমাদের কষ্ট দেখে বৃষ্টির মনে হয় মায়া হয়েছিল । ডিস্টার্ব খুব একটা করে নাই । টিসু পেপারে বৃষ্টির পানি না মুছলেও ঘাম মুছেছিলাম অনেকবার । সমুদ্রের দিকে নজর দিবার ফুরসত পাইনি । ওয়াটার বাইকের গ্রুপটা কখন বিদায় নিয়েছে খেয়াল করিনি । যুদ্ধ শেষে যখন বসেছিলাম তখন পাশের শেডে প্রেমে মগ্ন দুই বুড়াবুড়ি । লাঞ্চ প্যাকেটের খাবারের চেয়ে কথোপকথনে ব্যস্ত দুজন । জীবনের শেষ অধ্যায়টাকে স্মৃতিময় করে রাখতে চান ওনারা । বুড়া দিবস একটা উসিলা মাত্র! সাক্ষি বানিয়েছে বিশাল সমুদ্রকে । কি কথা হয়েছিল দুজনের ? সেটা না হয় আমরাও বলব কোন এক সময়…