পূরবী পারমিতা বোস :আগামী ১৩ই অক্টোবর ২০১৮ ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথওয়েলস সায়েন্স থিয়েটারে “লিসেন ফর” আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ নাইট ২০১৮ উপলক্ষে এক বিশেষ কনসার্ট। “লিসেন ফর” এর গত কয়েক বছর ধরে সিডনি সহ অস্ট্রেলিয়ার কিছু শহরে অত্যন্ত সফলভাবে কনসার্ট করেছে বাংলাদেশের নামকরা ব্যান্ড ওয়ারফেজ , মাইলস এবং জেমস কে দিয়ে। এবার তাদের আয়োজন “মাকসুদ ও ঢাকা ” এবং বর্তমান সময়ের সুপরিচিত ব্যান্ড “চিরকুট”।
একটু জেনে নেই এই দুইটি ব্যান্ডকে :
“মাকসুদ ও ঢাকা “
এবার জানা যাক মাকসুদুল হক ও ঢাকা ব্যান্ড সম্পর্কে। মাকসুদের সংগীত জীবন শুরু হয় ইংরেজি গান দিয়ে এবং ১৯৮৭ সালে ‘ফিডব্যাক ‘ ব্যান্ডের মাধ্যমে। প্রথমের দিকে মাকসুদ কেবল ইংরেজি গানই করতেন। কিন্তু আজম খান এবং ফুয়াদ নাসের বাবুর পীড়াপীড়িতে বাংলা গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি গান লেখা ও সুরও করতে থাকেন। ফিডব্যাকের অনেক জনপ্রিয় গানের লেখক ও সুরকার ছিলেন মাকসুদ। মাকসুদের প্রথম লেখা গান ছিল ‘মাঝি’।
ফিডব্যাকে থাকা অবস্থায় খুব সহজেই তিনি বাংলাদেশের সেরা সংগীত শিল্পীর আসনটি দখল করে নেন। ওই সময় তিনি ফিডব্যাকের এলবামে একের পর এক গান লিখে এবং গেয়ে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের হৃদয়ে পৌঁছে যান খুব অল্প সময়ের মধ্যে। একের পর এক নামকরা গানগুলির মধ্যে। অধিকাংশ গানই ছিল অসম্ভব জনপ্রিয়। মৌসুমি, জানালা, চিঠি, উদাসী, মাঝি, এবং কেমন করে হায় গানগুলো এখনো শ্রোতাদের মুখে মুখে গাইতে শোনা যায়। মাকসুদের অসম্ভব হৃদয়খোলা কন্ঠ এবং বৈচিত্র্যময় কথার জন্যে শ্রোতামনে খুব সহজেই জায়গা করে নেয়। ১৯৯০ সালে ‘মেলায় যাইরে ’গানটি গেয়ে যেন প্রথমে সমালোচনায় এসেছিলেন কয়েকদিন যে মাকসুদ বাংলাদেশের বৈশাখী উৎসব এবং গানের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছেন। কিন্তু সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে তরুণ সমাজের মুখে মুখে গানটি চলে এল। এর পর থেকে আজ অবদি মেলা এবং উৎসব এলেই ‘মেলায় যাইরে…..” গানটি ছাড়া যেন উৎসব চলেই না।
মাকসুদ ও তার দল বাণিজ্যিকীকরণের পেছনে না ছুটে সর্বদাই চেষ্টা করেছেন গানের মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন ও শেকড়ের টান খুঁজে নেওয়ার। সেই ইচ্ছে থেকেই হয়তো একসময়ের ইংরেজী গান গাওয়া ব্যান্ড পুরোদমে বাঙালিয়ানা ছড়িয়ে দিতে দিতে নিজেদের নিয়ে গেলেন সংগীতের শেকড়ে। মাকসুদ সমাজের বিভিন্ন অসংগতিকে তার গানের মাধ্যমকেই সমাজ সংস্কারের অন্যতম হাতিয়ার করার জন্য নিজেই একটি দল করেন ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ নামে ১৯৯৭ সালের দিকে।
সেই থেকে পথ চলা ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ দলটির। পুরানো এবং নতুন গানের সংমিশ্রণে মাকসুদের নেতৃত্বে এই দলটি এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশে। কয়েকটি গানের মধ্যে :
মৌসুমী করে ভালোবাসি :
“চিরকুট “
চিরকুট সম্পর্কে একটু জেনে নেই। চিরকুট ব্যান্ডের আনুষ্ঠানিক জন্ম হয় ২০০৮ সালে শারমিন সুলতানা সুমির, ইমন চোধুরী এবং পাভেল আরীন প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে। এর পর থেকে চিরকুট দেশে বিদেশে একের পর এক কনসার্ট করে আসছে এবং তাদের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডের তালিকায় তাদের নাম প্রথম দিকেই আছে।
চিরকুট ইতিমধ্যে আমেরিকার অস্টিনে ( SXSW-2016) , দিল্লীর সাউথ এশিয়া ব্যান্ড ফেস্টিভ্যাল, শ্রীলকার জাফিনা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল এবং নরওয়ের রোকের্স কাসা মুরিলো তে সংগীত পরিবেশন করেন। এই ব্যান্ড দলের বর্তমান লাইনআপে ভোকাল শারমীন সুলতানা সুমী, ড্রামসে পাভেল আরিন, গিটার, ব্যাঞ্জো ও ম্যান্ডোলিনে ইমন চৌধুরী, বেজ গিটারে দিদার হাসান, কিবোর্ড ও হারমোনিয়ামে জাহিদ হাসান নিরব এবং সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছেন ফাইজ সাগর।
চিরকুট ব্যান্ডটি ইতিমধ্যে সার্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে (২০১৬) ‘জালালের গল্প ‘ সিনেমাটিতে ‘বেস্ট অরিজিনাল স্কোর’ পুরস্কার পায়। এছাড়াও সিটি সেল-চ্যানেল আই মিউজিক এওয়ার্ড এবং আরটিভি ‘বেস্ট ব্যান্ড এওয়ার্ড’ (২০১২) পায়।
চিরকুট শুধু ব্যান্ডের গানেই সীমাবদ্ধ নেই, তারা এরই মধ্যে কিছু সিনেমাতে সংগীত পরিচালনায় ব্যাপক পরিচিতি ল্যাব করে। জালালের গল্প ছাড়াও ‘পিপঁড়া বিদ্যা’ , ‘টেলিভিশন’ টেলিফিল্মে প্লেব্যাক মিউজিক এর কাজ করেছে। ব্যাপক আলোড়ন করা সিনেমা ‘আয়নাবাজি ‘ সিনেমাতে এবং আরটিভির “তুমি যে আমার” সিনেমাতে সাউন্ডট্র্যাক করেছে চিরকুট। এই বছর বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি বালিঘর ‘ এর সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব পায় চিরকুট।
কয়েকটি গানের মধ্যে :
আহারে জীবন
তথ্যসূত্রঃ রোর মিডিয়া , চিরকুট উইকি , ইউ টিউব