ফজলুল বারী: পাকিস্তানে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে নিয়ে যাবার জন্যে রহস্যময় দুবাই চুক্তির নেপথ্যের বিষয়াদি বাংলাদেশ জানেনা। জানেন শুধু বিসিবির নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশ সরকারের বহুল আলোচিত ঢামাডোলের মুজিববর্ষে পাকিস্তানের মাটিতে বাঙালিদের নাকানিচুবানি খাওয়ানোর বিশেষ চুক্তিতে বাংলাদেশ দল এরমাঝে নিজেরা নাকানিচুবানি খেয়ে হলেও টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের আসন-পয়েন্ট খুইয়ে পাকিস্তানের শীর্ষস্থান অক্ষুন্ন রাখা নিশ্চিত করেছে। এবার টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপের পয়েন্ট দেয়ানোর জন্যে নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। এভাবে ওয়ানডে ক্রিকেটেও একই দায়িত্ব পালন করা হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাংলাদেশের জন্মশত্রু পাকিস্তান একটি নিরাপদ আনন্দময় দেশ এটি প্রমানের জন্যে সেখানে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যাবার দরকার ছিল। সেটির সফল বাস্তবায়নের দায়িত্বটি পালন করে যাচ্ছেন জিল্লুর রহমান ও আইভি রহমানকে ব্ল্যালমেইল করে বিসিবির দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হাসান পাপন! টি-টোয়েন্টিতে দলের নাকানিচুবানির পর বিসিবি বস পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে টেলিফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আহা! কী দায়িত্ব পালন!
ক্রিকেটকে বলা হয় ঠান্ডা মেজাজের ভদ্রলোকের খেলা। ঠান্ডামাথায় ক্রিকেট খেলার কোন পরিবেশই পাকিস্তানে নেই। সন্ত্রাস জর্জর পাকিস্তানে ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ নানাকিছুর প্রহরায় বাংলাদেশকে দিয়ে খেলানো হচ্ছে। ক্রিকেটাররা হোটেলে বন্দী থাকেন। স্বাধীন ভাবে কোথাও যেতে পারেননা। এর আগে পাকিস্তানের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যে খেলা খেলেছে অত সাধারন মানের দল বাংলাদেশ নয়। কিন্তু দলের সদস্যদের খেলার মতো মানসিক অবস্থা-পরিবেশ থাকতে হবেতো। আকরাম খানতো মুখ ফসকে বলেই দিয়েছেন নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি কখনো কখনো খেলার পরিবেশকে ব্যাহত করে। কিন্তু নাজমুল হাসান পাপন তা মানতে রাজি নন। তার কাছে পাকিস্তান নিরাপদ সুন্দর দেশ! সেখানে বাংলাদেশকে ভালো খেলতেই হবে! উল্লেখ্য বাংলাদেশ দল সেখানে নিজস্ব পুরো কোচিং সামর্থ্য নিয়ে যেতে পারেনি। কারন তারা অনিরাপদ পাকিস্তানে যেতে রাজি হননি। বিশাল অংকের পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কোচদের নিয়েও তাদের ধরে-বেঁধে পাকিস্তান নিতে পারননি পাপন। আইসিসির বিশ্বসেরা আম্পায়রাও পাকিস্তান যেতে রাজি না। সে জন্যে পাকিস্তান আর শ্রীলংকার আম্পায়ার দিয়ে চালানো হচ্ছে বাংলাদেশের খেলা। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দুটির নানাকিছু টেলিভিশনে যারা দেখেছেন তারা মানবেন আসল খেলা যেনো খেলছেন হাজার হাজার পুলিশ!
পাপন শুরুতে বলছিলেন খেলোয়াড়দের কাউকে জোর করা হবেনা। যার ইচ্ছা পাকিস্তান যাবে, যার ইচ্ছা যাবেনা। পারিবারিক আপত্তিতে মুশফিক পাকিস্তান যাননি। বিরূপ পরিবেশ পরিস্থিতিতে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের চরম বিপর্যয় ভরাডুবির পর মেজাজ হারিয়ে সব দায় যেন মুশফিককে দিয়েছেন বিসিবি বস! এটা তার ঔদ্ধত্ত্ব্য, অসৌজন্য, ছোটলোকি। তিনি এটা করতে পারেননা। তাছাড়া খেলোয়াড়দের জোর করে নেয়া হবেনা এমন ঘোষনাতো তার আগেই দেয়া ছিল। আরর শুধু মুশফিকনা, ড্যানিয়েল ভিট্টোরিসহ কোচিং স্টাফের যারা পাকিস্তান যেতে রাজি হননি তাদের কিছু বলতে পেরেছেন নাজমুল হাসান পাপন? বাংলাদেশ দলটা একজন একনায়কের যা খুশি আচরনের পাল্লায় পড়েছে। খেলোয়াড়রা সাহস করে কিছু বলতে পারেনা। বিসিবি ভবনে কান পাতলেই শোনা যায় নানান হাহাকার আর আক্ষেপের কান্না।
বাংলাদেশ দল পাকিস্তান যায় বিশেষ ভাড়া করা বিমানে! এমন ঘটনা বিশ্বের আর কোন দলের বেলায় পাবেননা। মনে করুন বাংলাদেশ দল ভারতে খেলতে গেছে নিজস্ব ভাড়া করা বিমানে! দেশজুড়ে তখন কি শুরু হয়ে যেতো ধারনা করতে পারেন! বা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ছাগু ম্র্যা ম্র্যা কান্না! ভারত নামটার সঙ্গে এমন বিশেষ একটি এলার্জি আছে বাংলাদেশে! এর কারন শুধু তিস্তার পানি বা সীমান্ত হত্যাকান্ড নয়। মনের মধ্যে মূল ক্ষোভটি এই ভারত না হলে পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হতোনা। খেলোয়াড়দের বিমান ভাড়া করে দেশে ফিরিয়ে আনার অনেক ঘটনা আছে। তা মূলত বিশ্বকাপ ফুটবল জয়ী দলকে দেশে ফেরত নেয়া হয় বিশেষ ভাড়া করা বিমানে। আর বাংলাদেশ দলকে পাকিস্তানে নেয়া হচ্ছে পাকিস্তানকে জেতাতে বাংলাদেশকে হারাতে। এমন কোন কিছুতেই জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই বিসিবিতে।
নাজমুল হাসান পাপন আওয়ামী লীগেরও এমপি। দলটাকে যখন তিনি মুজিববর্ষে পাকিস্তানে টেনেহেঁচড়ে নিচ্ছেনই, পাকিস্তানেও মুজিববর্ষের একটা কাজ তিনি করতে পারেন। তাহলো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের যে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল সেটি দেখতে ক্রিকেটারদের নিয়ে যাওয়া। এমন কিছু দেখার সুযোগ চাইতে গেলে পাকিস্তান কী লজ্জিত-ক্ষুদ্ধ অথবা বিরক্ত হবে? ক্রিকেট নিয়ে এসব লিখলে ছাগুপন্থী অনেকে মুখস্ত বলার চেষ্টা করেন খেলার সঙ্গে রাজনীতি না মেলাতে! অথচ কোন কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। আজ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে বিসিবি বস পাপন। বিএনপি আমলে এই চেয়ারে ছিলেন দলটির হাওয়াভবন নেতা আলী আসগর লবী। দেশের ক্রিকেটে বন্ধ্যা অবস্থার কারন কিন্তু এখন পাপন। এই একনায়ক সব বোধ-মূল্যবোধ এখন ভোঁতা হয়ে গেছে। স্থবির হয়ে গেছে দেশের ক্রিকেট অগ্রগতি। এই লোকটাকে সরিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধা নতুন কাউকে বিসিবি বস করে দেখুন। দেশের ক্রিকেট বদলে যাবে। নাজমুল হাসান পাপন তখন দেশেবিদেশে ক্যাসিনোয় আরও মনোযোগ দিতে পারবেন।