ফজলুল বারী
আবার এই রবিবারে চোখ বাংলাদেশের! হাইকোর্টে আবার খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি হবে এই রবিবারে। বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে এই রবিবারেই খালেদা জিয়ার জামিন হবে। বিএনপির এক আইনজীবী নেতা বলেছেন, হাইকোর্ট এবার ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়টি বিবেচনা করবে। কিন্তু সেই একই কথা, তালগাছটা আমার হলে সব ঠিক। হাইকোর্টের এই বেঞ্চেই এর আগে একবার খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন নাকচ হয়েছে। এরপর জামিন নাকচ হয়েছে আপীল বিভাগে। এবার বিএনপি যখন একই আদালতে আবার জামিনের আবেদন নিয়ে গেলো তখন আদালত বলেছে, আবার এখানে কেনো। বিএনপির আইনজীবী নেতা তখন বলেছেন, বারবার আসতেতো বাধা নেই। আদালত বাধা দেয়নি। আবেদন নিয়ে বলেছে শুনানি হবে রবিবার।
দুদকের আইনজীবী বলেছেন, জামিনের আবেদনে নতুন কিছু নেই। তারা এর বিরোধিতা করবেন। দুদকের আইনজীবী নাই বললেও এই আবেদনে নতুন একটি উপাদান আছে। তাহলো, বিদেশে তথা যুক্তরাজ্যে চিকিৎসার জন্যে যাবার আবেদন। শুধু এই একটি উপাদান দেখে আদালত আবেদনটি নাকচ করতে পারে। বাতের ব্যথা আর ডায়াবেটিকসের চিকিৎসার জন্যে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। খালেদা জিয়া দন্ডিত হয়েও যে চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন তা পায় দেশের খুব কম মানুষ। বাংলাদেশে সব চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও প্রভাবশালীরা বিদেশে চিকিৎসার জন্যে যান। এই সরকারি নেতারাও যান। দেশের মানুষের খরচে সঙ্গে যায় লাটবহর। অথচ দেশে এরা বক্তৃতায়-বানীতে বড় বড় কথা বলেন। সর্বোচ্চ আদালত এই সুযোগে প্রভাবশালীদের বিদেশে চিকিৎসাকে নিরুৎসাহের উদ্যোগ নিতে পারেন। বিদেশে চিকিৎসায় নামে বেনামে টাকা পাচারও হয় বিদেশে। এই পাচার সরকারি দল বিরোধীদল সবাই করে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও বলেছেন অত অত কোটি টাকার দুর্নীতি পাচারের বিচার হয়না, আর মাত্র ২ কোটির টাকার সাজানো মামলায় খালেদা জিয়া জেলে! দেশের মানুষের সঙ্গে এই মিথ্যাচারটি বন্ধ হওয়া দরকার। এটি মোটেই সাজানো মামলা নয়। টাকা এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে। এই টাকাতো প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলে থাকার কথা। এই টাকা অন্য ব্যক্তিগত একাউন্টে কেনো গেলো? টাকা এসেছে ১৯৯১ সালে। এখন ২০২০ সাল। কোথায় সেই এতিমখানা? এখন বলা হচ্ছে সেই একাউন্টের টাকা এখন সুদে আসলে বেড়ে অত টাকা হয়েছে! এ কথাতো বললেন বিষয়টি ধরা পড়ার পর। বিষয়টি ধরা পড়ার আগে কী কোন দিন কাউকে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলের টাকা আমরা অন্য একাউন্টে সরিয়েছিলাম! সেটি এখন সুদে আসলে বেড়ে অত হয়েছে! এদের এত টাকা যে কোথায় কোন একাউন্টে কত জমা আছে তা ধরা না পড়া পর্যন্ত কেউ জানেনা! এর কারনে কোন বৈধ আয় সূত্র ছাড়াই বিলাতে দিব্যি চলে যাচ্ছে তারেক-কোকোর সংসার! ঠিক এমন জনতা টাওয়ার মামলায় রাষ্ট্রের তিন কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে এরশাদেরও বিচার সাজা হয়েছিল। সেই সাজার কারনে এরশাদ পাঁচ বছর নির্বাচন করতে পারেননি। সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে এরশাদ মুক্তি পেয়েছেন! তার দুর্নীতির টাকা উদ্ধার না করে তার সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে! বাংলাদেশে এমন একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা হয়েছে প্রভাবশালীদের এক আইন, চিকন আলীদের জন্যে আরেক আইন!
বিএনপির নেতারা প্রায় প্রতিদিন বলেন জামিন পাওয়া খালেদা জিয়ার সাংবিধানিক অধিকার। কথাটা ঠিক। কিন্তু সাজার আগে জামিনের বিবেচনা এক রকম হয় সাজার পর হয়ে আরেক রকম। অস্ট্রেলিয়ায় একজনকে ধরে থানা থেকেই ছেড়ে দিয়ে বলা হয় অমুক দিন কোর্টে আসবেন। কারন একজনকে জেলে রাখার খরচ এদেশে অনেক বেশি। আর দেশের সবকিছু যদি সাংবিধানিকভাবে যদি চলতো তাহলেতো এ পরিস্থিতি হয়না। সংবিধানটাতো ১৯৭৫ সাল থেকেই নিজের মতো করে চালিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে খুন করার পর দাঁড়ি কামাতে কামাতে বলেছেন সাংবিধানিকভাবে অমুক শপথ নেবে। এরপর আবার আইন করেছেন রাষ্ট্রপতি খুনের বিচার করা যাবেনা! বিচার যখন শুরু হলো তা আটকে দিলেন! এরপর আবার সেই রাষ্ট্রপতির মেয়েকে গ্রেনেড হামলায় মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন! ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাজালেন জজ মিয়া নাটক! কেনো আপনাদের পক্ষে মানুষ নামেনা তা কী কখনো আত্মসসালোচনা করেছেন? যদি একবারও ভুল স্বীকার করতেন!
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়াররা একবার দাবি আদায়ের জন্যে বিশেষ একটি আন্দোলন করেছিলেন। আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল অফিস সময়ের চেয়ে বেশি সময় কাজ করা! সেই আ ন্দোলন তখন সাড়া ফেলে দিয়েছিল। বিএনপি খালেদা জিয়ার পক্ষে সব মানুষের সহানুভূতি আনতে তেমন একটি ব্যতিক্রমী কর্মসূচি নিতে পারতো। এখন মুজিববর্ষের নানা কর্মসূচি চলছে। জাতির পিতা মুজিব সবার। খালেদা জিয়াও সংসার রক্ষায় স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মুজিবের কাছে যেতেন। এখন বিএনপি যদি মুজিব জন্ম শতবার্ষিকী পালনের কর্মসূচি নেয় তা দেশের মানুষের কাছে তাদেরকে ছোট করবে না বড় করবে? নিশ্চয় বড় করবে। বিএনপির নেতৃত্বের উদ্বাবনী প্রজ্ঞার অভাবে তাদের পক্ষে মানুষ নামছেনা। সরকার বাধা দেয়, এমন মুখস্ত বক্তব্য বিরক্তিকর। মানুষ নামলে কেউ কাউকে দাবায়ে রাখতে পারেনা। আর প্লিজ দেশের নানাকিছুতে বিদেশিদের কাছে নালিশ করার অভ্যাস ছাড়ুন। দেশের মানুষ এসব পছন্দ করেনা। বেশি বেশি নালিশ করেন দেশের মানুষজনের কাছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির একটি পরিবেশ সৃষ্টি করুন। কিন্তু এরজন্যে সবার আগে দোষ স্বীকার করতে হবে। দোষ স্বীকার করলে মানুষ ছোট হয়না। দোষ স্বীকার করলে খালেদা জিয়ার মুক্তির পক্ষে মানুষের সহানুভূতি বাড়বে। মুক্তি পেলে দেশের চিকিৎসাতেই খালেদা জিয়া আবার প্রানবন্ত হয়ে উঠবেন। এরজন্যে তাকে যুক্তরাজ্যে যেতে হবেনা।