অনলাইন ডেস্কঃ ৩ জুলাই ২০১৫
এক সময়ের আগাছা ফল হিসেবে পরিচিত লটকন এখন নরসিংদী জেলার অর্থনীতির চাকা ঘোরাচ্ছে। লোভনীয় ফল লটকন এরই মধ্যে দেশে-বিদেশে বৃহৎ বাজার অর্জন করেছে। এ ফলটির নাম শুনলেই যেন জিভে জল চলে আসে। রুচি বৃদ্ধিসহ মানবদেহের ব্যাপক খনিজ পদার্থ পূরণীয় ও উপকারী ফল হিসেবে এর বিস্তৃতি ঘটেছে। নরসিংদীর পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলোতে গাছে গাছে এখন শুধু সোনালি লটকনের সমারোহ। কৃষি জমি ও বাড়ির আঙিনায় চাষাবাদ হওয়া সুস্বাদু লটকন এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। দেশ-বিদেশের বাজারগুলোতে এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লটকন ফল উল্ল্যেখযোগ্য অবদান রাখছে বলে কৃষকদের দাবি। কম খরচ আর অল্প পরিশ্রমে ফলন ও মূল্য দুটোই ভালো হওয়ায় লটকন এখন চাষীদের কাছে অন্য ফসলের তুলনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিদেশ ফেরত ও বহু বেকার যুবক লটকনের চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। প্রতি মৌসুমে এখানকার লটকন চাষীরা প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন লটকন উৎপাদন করে থাকে। নরসিংদীর উৎপাদিত লটকন দেশে-বিদেশে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা বাজার মূল্য ধরে রেখেছে বলে কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের প্রত্যাশা। বিশেষজ্ঞদের মতে এ ফলে ওষুধি গুণাগুণ রয়েছে অনেক। কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৪৫২ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লটকন চাষ হয়েছে বেলাবোতে। প্রতি বছর এখানকার কৃষক লটকন বিদেশে রফতানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। প্রতি কেজি লটকন স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা দরে, যা প্রবাসীদের দেশজ ফলের চাহিদাও মেটাচ্ছে। লটকনের মৌসুমকে কেন্দ্র করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জমে উঠেছে বৃহৎ লটকনের বাজার। জেলার সবচেয়ে বড় লটকনের বাজার বসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে। কামারটেক, চৈতন্য, রায়পুরা ও বেলাবরের বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি হয়।
স্বল্প ব্যয় ও অল্প সময়ে ফলন আসায় নরসিংদীর শিবপুর ও বেলাব উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের চাষীরা ক্রমেই ঝুঁকছে লটকন চাষে। লটকনের মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড তাপদাহ এবং অনাবৃষ্টির কারণে আশানুরূপ ফলন আসেনি। তবে বাজারে লটকনের দাম ভালো থাকায় খুশি এ অঞ্চলের চাষীরা। বেলাব উপজেলার উজিলাবো গ্রামের কৃষক আতাউল্লা ভূঁইয়া জানান, দিনে দিনে আমাদের এলাকায় লটকনের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেপারিরা এখন লটকন কিনে বিদেশও পাঠাচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বাজারে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ টাকা এবং বাগান থেকেই প্রায় ২০ লাখ টাকার লটকন বিক্রি হয়। নরসিংদীর শিবপুর ও বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়ি অঞ্চলের লাল রঙয়ের মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এ এলাকার মাটি লটকন চাষের খুবই উপযোগী। এক সময় জংলি ফল হিসেবে পরিচিত ছিল লটকনের। সময়ের বিবর্তনে লটকন এখন পুষ্টিগুণে ভরপুর সুস্বাধু একটি ফল। আধুনিক বিজ্ঞান মতে লটকনে ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। পাশাপাশি প্রচুর ক্যালরি ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ থাকায় ভোক্তাদের কাছে দিন দিন বাড়ছে এ ফলের কদর। ( সুত্রঃ যুগান্তর, ৩ জুলাই ২০১৫)