অনলাইন ডেস্কঃ ১৯ নভেম্বর ২০১৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ বেঞ্চ তাদের আনা রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মুজাহিদের রিভিউ আবেদন বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার শুনানি শেষে আজ আদেশ দেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদনের ওপর আজ সকালে উভয়পক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরে আপিল বিভাগ বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে তাদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেয় আদালত।
এর আগে আসামিপক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন ।
গত ১৪ অক্টোবর প্রথমে মুজাহিদের পক্ষে তার আইনজীবী শিশির মনির ৩৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন জমা দেন। আবেদনে রিভিউর পক্ষে ৩২টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। রিভিউ আবেদন শুনানিকালে আসামিপক্ষে আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মুজাহিদকে বুদ্ধিজীবী হত্যায় মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যায় তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করে আসামি মুজাহিদের খালাস প্রার্থনা করা হয়।
শুনানিতে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যায় উত্সাহ যুগিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন আল-বদর বাহিনীকে বুদ্ধিজীবী হত্যায় উজ্জীবিত ও উত্সাহিত করেছিলেন। বুদ্ধিজীবী হত্যার উদ্দেশ্য ছিলো জাতিকে মেধাশূন্য করা।
আদেশের পর প্রতিক্রিয়ায় এটর্নি জেনারেল বলেন, মুজাহিদের ফাঁসির রায় জাতির জন্য স্বস্তি। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ওই ঘটনা সবচেয়ে কষ্টের ও বেদনাদায়ক।’ এই ফাঁসির রায়ে স্বজন হারানো ও ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুটা হলেও সান্তনা পাবেন।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবী হুজ্জাতুল ইসলাম খান আলফেসানী গত ১৪ অক্টোবর রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। ১০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১০টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। আজ শুনানিকালে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দাবি করেন, আসামী সাকা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে ছিলেন না।
অপরদিকে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আসামি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে ছিলেন না বলে যে দাবি করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আসামিপক্ষে আনা কথিত সনদের ডকুমেন্ট প্রপারলি হয়নি। তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, যা ওই সময়ের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিলো। মুক্তিযুদ্ধের পরপরই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। তাছাড়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালে নিজে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেন। তার সাক্ষ্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে বিদেশে থাকা কিংবা সনদ থাকা বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিং-এ বলেন, রিভিউ আবেদন খারিজ আদেশের ফলে মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলো। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ প্রকাশ করে বলেন তিনি বলেন, এ দুই আসামির রায় কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার। আজ মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর বিষয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটল। এ রায় আইনের শাসনের জন্য দৃষ্টান্ত ও মাইলফলক। সরকারের সিদ্ধান্তে এখন রায় কার্যকর করা হবে। তবে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’স আইন-১৯৭৩-এ প্রাণভিক্ষা বিষয়ে নির্িদষ্ট কোনো বিধান নাই। এটা সাংবিধানিক অধিকার। রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে যে কোন দ্লিত ব্যক্তির আবেদন বিবেচনা করতে পারেন।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের আগস্টে মুজাহিদ আপিল দায়ের করেন। আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৬ জুন তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়া হয়। এটর্নি জেনারেল জানান, জাতির মেধাবী সন্তান বুদ্ধিজীবীদের ১৯৭১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মুজাহিদকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। আপিল নিষ্পত্তি করে গত ২৯ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। এটর্নি জেনারেল জানান, চারটি অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। ( সুত্রঃ ইত্তেফাক)