নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল সিডনির ইঙ্গেলবার্নে, অক্সফোর্ড রোড ও কাম্বারলেন্ড রোড পালিত হল মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্বাবধানে ছিল সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্ (sydneybengalies.com)
কাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জনাব আব্দুল জলিল বাংলা শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করার মাধমে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুষ্ঠান শুরু করেন এবং সঞ্চালনায় থাকেন সেলিমা বেগম। শুরুতেই ভাষা শহীদদের মহান অবদান ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য একমিনিট নিরবতা পালন হয়।
এরপর কিশলয় কচিকাঁচা প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান পরিবেশনা দিয়ে সাংস্কৃতিক পর্বের সুচনা করে। রোকছানা বেগম এর নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে, গড়ে উঠে ছোট বন্ধুদের নিয়ে এই কিশলয় কচিকাঁচার সাংস্কৃতিক দলটি। এই ছোট বন্ধুরা বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা ভিত্তিক নানা পরিবেশনা উপস্থাপন করে। ছড়া, নাচ ও গানের সাথে কিশলয় পরিবেশিত অনুষ্ঠান এক কথায় ছিল অনবদ্য।
এঁর পর কাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল নিয়ে আসে তাদের পরিবেশনা। অস্ট্রেলিয়াতে জন্মানো বাঙ্গালি নতুন প্রজন্মের ঐহিক তারিক, তাহসিন ইসলাম প্রহর, রিয়ানা আহমেদ ও ঈশান তারিক, বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু বাংলা বই থেকে পড়ে সবাইকে অবাক করে দেয়। শুধু তাই নয় এরা বাংলায় তাদের লেখাও উপস্থাপন করে প্রবাসী বাঙ্গালীদের মন জয় করে এই শিশুর দল। এছাড়াও কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করেন। রুমানা সিদ্দিকী অনুষ্ঠানের এই পর্বটি পরিচালনা করেন। এ পর্যায়ে শিশুকিশোরদের পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছে আবহ বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে।
অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে উঠা তরুন অরনভ একুশ ও মাতৃভাষা তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, ফেডেরাল এম পি লরি ফারগাসন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং ভাষা নিয়ে বাঙ্গালীদের সংগ্রাম এর কথা গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করেন । তিনি আরও বলেন মাতৃভাষার প্রতি অবহেলার কারনে, অস্ট্রেলিয়াতে ৩৫০থেকে ৫০০ আদিবাসি ভাষা থেকে মাত্র ১৫০টি এখন টিকে আছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া তে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের বাংলা ভাষার প্রতি এত ভালবাসা দেখে সন্তোষ প্রকাশ
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ম্যাককুয়ারি ফিল্ড আসন থেকে নির্বাচিত এম পি অনুলাক চান্টিভং। কেম্পেলটাউন জেলার বাঙ্গালীদের দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে এবং স্থানীয় বাঙ্গালীরা যেন একুশ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পারে সেজন্য এশফিল্ড পার্কের মতো কেম্পেলটাউন জেলায়ও একটি শহীদ মিনার করার কথা ঘোষণা দেন। করেন। বাংলায় লিখতে ও পড়তে জানা শিশু-কিশোরদের হাতে উপহার তুলে দেন।এতে উপস্থিত সবাই একসাথে তালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন দেন।
এছাড়াও সিডনি শহরের নামকরা ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা যেন হৃদয়ে বাংলাদেশ। অঙ্কন চিত্রে ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার ছবি, বাংলাদেশের পরিচিত গাছ পালা, নদী, নৌকা , গ্রাম্য মাঠ, বাংলাদেশের পতাকা ও শহীদ মিনার। সিডনির একমাত্র বাঙালি মালিকানাধীন আবাসন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘Linkers’ এর পরিবারের পক্ষ থেকে মিসকাত মাহমুদ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারি শিশুদের প্রত্যেককে উপহার তুলে দেন। এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন অনুলাক চান্টিভং, শাহাদাৎ হোসেন, মঞ্জু তালুকদার ও রুমানা খান।
সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্ এঁর পক্ষ থেকে জনাব হামিদ উদ্দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এঁর উপরে অত্যন্ত তথ্যবহুল একটি প্রামাণ্য চিত্র তুলে ধরেন বর্তমান ও নতুন প্রজন্মের কাছে।
তারপরই আসেন সিডনির অতি পরিচিত আবৃতিকার রুমানা সিদ্দিকী , সুরভী ছন্দা এবং সাইফুর রহমান অপু ও শাহিন শাহনেয়াজ। উপস্থিত সবাই গভীর আগ্রহ সহকারে তাদের আবৃতি উপভোগ করেন।
এককভাবে গান পরিবেশন করেন ফারিয়া, লামিয়া ও সিমা আহমেদ।
সিডনির নামকরা গানের দল ‘লাল-সবুজ’ এর মাছুদ মিথুন ও লুতফা খালেদ পরিবেশিত গান ছিল মন মাতানো।
বাংলা কমিউনিটির পরিচিত শিল্পী আরফিনা মিতা’ ও আতিক হেলালের সুরেলা কণ্ঠে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।
আজিজা হোসেন এঁর তত্ত্বাবধানে খাবারের একটি স্টলে ছিল বিভিন্ন রকমের মুখরোচক খাবার (সিঙ্গারা, সমুসা, ফুস্কা, চটপটি, পিয়াজু, কাবাব ও পানীয়)। তাকে সহায়তা করেন অনিক ও ইরাম।
ললনাদের সাদা শাড়ি কালো পাড় সাথে বর্ণমালার ছাপ এবং ছেলেদের ছিল সাদা/কালো পাঙ্গাবি, দেখে মনে হয়ে ছিল যেন একুশের বাংলাদেশের টিএসসি চত্বর সিডনিতে। দর্শক উপস্থিতি ছিল আশাতীত।