পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব: শরণার্থীর ঢল থামাতে অনুরোধ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব: শরণার্থীর ঢল থামাতে অনুরোধ

হাজার হাজার মরীয়া মানুষ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।হাজার হাজার মরীয়া মানুষ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

অনলাইন  ডেস্ক: বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিও মিন্ট থানকে আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সশস্ত্র বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কারণে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি এবং বাংলাদেশের উপর তার প্রভাব নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক এবং কনসুলার বিষয়ক সচিব কামরুল আহসান তার কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে মিঃ আহসান মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন রাখাইন প্রদেশ থেকে মানবাধিকার লংঘনে বিপর্যস্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে।

তিনি বলেছেন বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীরা তাদের প্রতিহত করার সবরকম চেষ্টা করলেও হাজার হাজার মরীয়া মানুষ সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় আরও কয়েক হাজার শরণার্থী ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে।

মিঃ আহসান মিয়ানমারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন সীমান্তের রীতিনীতির প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে রাখাইন থেকে বাংলাদেশের দিকে মানুষের ঢল প্রতিহত করে।

মিয়ানমারের পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করে দেশটির গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রচারিত হচ্ছে তার জন্যও বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

রাখাইনে সেনা শক্তির নির্বিচার ও অতিরিক্ত প্রয়োগ এবং অব্যাহত সেনা অভিযানে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবির প্রতি মিয়ানমারকে সাড়া দেবার আহ্বান মিঃ আহসান জানিয়েছেন বলেও বলা হয়েছে।

রাখাইনে সেনা অভিযানের প্রেক্ষাপটে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ওই এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত এবং গত দু সপ্তাহ ধরে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় চাইছে বলে খবর এলেও বিগত কয়েকদিনে এ নিয়ে একেবারেই মুখ খোলেনি বাংলাদেশের সরকার।

তবে বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আয়োজিত এক মত বিনিময়ের সুযোগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হককে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা।

বেশিরভাগ প্রশ্নেরই সুস্পষ্ট জবাব দেননি মিঃ হক, যেমন স্পষ্ট জবাব দেননি, রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার যে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ সেই ব্যাপারে।

সাংবাদিকদের সেই বৈঠকে উপস্থিত বিবিসির সংবাদদাতা আহরার হোসেন জানাচ্ছেন মিঃ হক বলেন একটি দায়িত্বশীল দেশ সবসময় আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে দায়িত্ব নেয় এবং দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে যেটা করার দরকার বাংলাদেশ সরকার সেটা করছে।

জাতিসংঘের সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়া প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকার কি করছে, এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, অনেক কিছুই হয়তো আমরা করব, সেটা হয়তো আমরা আর্টিকুলেট করব না।

তিনি বলেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সবসময় তৎপর এবং রাখাইনে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার পর দেশটির সঙ্গে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ সবসময়েই যোগাযোগ রাখছে বলে উল্লেখ করেন মিস্টার হক।

তিনি জোর দিয়ে বলেন রেসপনসিবেল স্টেট হিসেবে যা যা করার বাংলাদেশ তা করছে, যার “কিছুটা আপনারা জানবেন, কিছুটা জানবেন না”।

“ডিপ্লোমেসি এবং ফরেন রিলেশনস এরকম একটি জিনিস যে, সব সময় সব কথা বলা হয় না, বলা যায় না এবং বলাটা উচিতও না।”

তিনি বলেন তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন, এই পরিস্থিতিতে যেটা করার সেটা করা হয়েছে, করা হচ্ছে এবং করা হবে। ( সূত্র:বিবিসি )