সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্, গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি শনিবার, ২০১৮ বিকালে সিডনির ইঙ্গেলবার্ন-এ মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। অনুষ্ঠানের শুরু হয় সদ্য একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক রণেশ মৈত্রকে দিয়ে। তিনি শুরুতেই ২১ ফেব্রুয়ারী আগামী বছর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতীয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও আহবান জানান ১৯৭২ সালের সংবিধানকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার জন্য । বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা ধরে রাখার জন্য আয়োজকদের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
সিডনীর এসফিলড পার্কে ২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধের প্রতিষ্ঠাতা এবং অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় ভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পালনের সিদ্ধান্তের রূপকার নির্মল পাল বলেন, বিশ্বজুড়ে শুধু বাংলাভাষায় এই দিনটি পালন করলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটির গুরুত্ব যতটা থাকবে তার চেয়ে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হবে যদি সকল ভাষার লোকজনকে নিয়ে এই দিবসটি পালন করা যায়।
প্রাক্তন ফেডারেল এম পি লরি ফার্গাসন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে উনেসকোর মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য কানাডার ভ্যানকুভার শহরের দুই বাঙ্গালী রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালামকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন মাতৃভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেলে নিজের পরিচয় থাকে না। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের অনেক ভাষা আজ বিলুপ্ত এবং কিছু ভাষা বিলুপ্তের পথে।
মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল শিশুকিশোরদের একুশ ও বাংলা ভাষায় , প্রবন্ধ পাঠ,গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি ও দলগত সংগীতের পরিবেশনা। রোকসানা বেগমের দক্ষ শিশুদের দল কিশলয় কচিকাঁচা , সীমা আহমেদ এর দক্ষ পরিচালনায় কিশোর সংঘ এবং শাহীন আক্তার স্বর্ণার পরিচালনায় নাচের দল নৃত্যকলা ড্যান্স একাডেমী এই তিনটি শিশুকিশোর সংগঠনের পরিবেশন ছিল মন মুগ্ধকর ।
এছাড়াও নৃত্য পরিবেশন করে নুসাবা রহমান, গান পরিবেশন করে নাবিলা আফ্রিদা স্রোতশ্মিনী ও সামিন সাখাওয়াৎ।
বড়দের পর্বে ছিল নামকরা শিল্পীদের মধ্যে নৃত্য পরিবেশনায় অর্পিতা সোম, আবৃত্তিতে নুসরাত জাহান স্মৃতি এবং গানে সিডনির খুবই পরিচিত জুটি আরফিনা মিতা ও আতিক হেলালের বাংলাদেশ ও বাংলা নিয়ে গানের পরিবেশনা এক কথায় ছিল অসাধারণ।
ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষার ইতিহাস ও দেশী সংস্কৃতি তুলে ধরতেই মুলত এই আয়োজন। সাদা/কালো দেশীয় পোশাকের সমন্বয়ে সিডনীর দূর দূরান্ত থেকে আসা সকলকে দেখে মনে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের একুশের চত্বর।
সবশেষে সিডনিতে শিশুকিশোর বাংলা ভাষা, বাংলা গান , চিত্রাঙ্কন ও নাচে বিভিন্ন বিষয়ে পুরস্কার বিতরণ করেন রণেশ মৈত্র, নির্মল পাল, প্রদ্যুৎ চুন্নু, প্রবীর মৈত্র, শুভ আহমেদ, কাজী সুলতানা শিমী , এহসান আহমেদ ও আব্দুল বারেক খান।
সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটির পক্ষে আগামীতে আরও বৈচিত্র নিয়ে অনুষ্ঠান করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানেন সেলিম বেগম।