অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে ২৬ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক যুবককে আটক করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লিউ) রাজ্যের যুগ্ম কাউন্টার টেররিজম দল। জঙ্গি মতাদর্শ সমর্থনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে তিনি বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন—এ অভিযোগে গত ১৬ জুন (শনিবার) তাঁকে আটক করা হয়।অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আটক হওয়া ব্যক্তির পরিচয় ও তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কথা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে বা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিয়ে কথাবার্তা বলার প্রমাণ পুলিশ পেয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ২৬ বছর বয়সী যুবকের নাম নওরোজ রায়েদ আমিন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের কুমিল্লায় এবং মায়ের বাড়ি বরিশালে। সিডনির ইঙ্গেলবার্ন এলাকায় হারম্যান স্ট্রিটের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বাস করতেন তিনি। আমিন লেখাপড়ায় খুব বেশি মনোযোগী না হলেও একসময় সে অপেশাদার বক্সার ছিলেন। তাঁর এক প্রতিবেশীর বরাতে জানা গেছে, আমিন ও তাঁর পরিবার প্রায় ২৫ বছর আগে যুক্তরাজ্য থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন করেন। আমিনের পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল। আমিনের বাবা শুরুতে লন্ড্রির ব্যবসা করলেও গত কিছু বছর ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে পোস্ট অফিসের ব্যবসা করতেন। কিন্তু কিছুদিন আগে তাও বিক্রি করে দেন। তবে নওরোজ আমিন তেমন কোনো পেশায় যুক্ত ছিলেন না। নওরোজের ২৩ / ২৪ বছরের ছোট একটি বোন রয়েছে যার জন্ম অস্ট্রেলিয়ায়। তাঁর বিয়ে হয়েছে একজন আফগান নাগরিকের সঙ্গে। এ ছাড়া লন্ডনে বসবাসকারী আমিনের মায়ের ভাই বাংলাদেশের একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দলের একজন প্রতিষ্ঠিত নেতা। ইঙ্গেলবার্নে আমিনের বসত বাড়িটি প্রায় ১৮ বছর আগে কেনা। প্রতিবেশীরা নওরোজ সম্পর্কে বেশি কিছু না জানলেও তাঁর বাবা একজন নিপাট ভদ্রলোক বলে মন্তব্য করেছেন।
নওরোজকে গ্রেপ্তার করার সময়ের একটি ভিডিও ইতিমধ্যে অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। সেখানে তাঁর পরনে সাদা লম্বা আলখাল্লা, ও মাথা ভর্তি লম্বা চুল ও মুখে দাঁড়ি দেখাচ্ছিল। তাঁকে গ্রেপ্তারের পরপরই জানালার নেটের পেছনে থাকা তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলে গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁর বাবা বলেন, ‘আমার কোনো ধারণা নেই, কেন আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা (পুলিশ) আমাদের কোনো গ্রেপ্তারি কাগজ বা কোনো কারণ জানায়নি।’ ছেলের নির্দোষ হওয়ারই দাবি করেন নওরোজের বাবা।
এ দিকে বিবিসির প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, ২০১৭ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সাদিয়া আমিন নামে ২১ বছরের তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সাদিয়া আমিন বাংলাদেশের একটি নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ায় গ্রেপ্তারকৃত নওরোজ আমিনের স্ত্রী। র্যাব আরও মনে করে, নওরোজ আমিনই সাদিয়াকে জঙ্গিবাদে দীক্ষা দেন।
আমিন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেন। তখন সিডনি বিমানবন্দরে অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাঁকে বাধা দেন। আমিনের সঙ্গে থাকা মালপত্র পরীক্ষা করার পরপরই তাঁর বাংলাদেশ ভ্রমণের অনুমতি রদ করে দেওয়া হয়। তাঁর কাছ থেকে চরমপন্থী মতাদর্শকে সমর্থন করে এমন পোশাক ও অন্যান্য জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। সন্দেহের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে তদন্ত শুরু করে কাউন্টার টেররিজম দল। তদন্তে আমিনের ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের বেশি কিছু মুঠোফোনের চাঞ্চল্যকর কথোপকথন পুলিশের সামনে আসে। আমিনের সেসব আলাপনের মধ্যে বাংলাদেশে বা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার এবং অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে কথাবার্তা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে আদালতে পেশ করা তথ্য-প্রমাণাদি থেকে জানা গেছে।আমিনের ওপর এখন তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, জঙ্গিবাদ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করা, বিদেশি রাষ্ট্রে চরমপন্থী কাজের প্রচেষ্টা এবং অনুমতি ব্যতীত অস্ট্রেলিয়ার কাস্টমস আইনে টায়ার-১-এ লিপিবদ্ধ সাধারণত নিষিদ্ধজাতীয় পণ্য রপ্তানি করা। দোষী সাব্যস্ত হলে আমিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত হতে পারে। ( সূত্রঃ কাউসার খাঁন, প্রথম আলো )