শীত কালের স্পোর্টস স্কি…

শীত কালের স্পোর্টস স্কি…

 

জাপান আইস এইজ সিনেমায় একটা কাঠবিড়ালি কে শীতের খাদ্য জোগাড়ে মহাব্যস্ত থাকতে দেখেছিলাম। পিপালিকা নাকি শীতের সঞ্চয় খুঁজতে ছয় পায়ে পিল পিল চলে শীত কাল আসার আগেই । গাছপালা গুলোও সাশ্রয়ী মোডে চলে যায় এই সময়টাতে। কিছু কিছু প্রাণীও শীতনিদ্রায় চলে যায় শীত আসলেই। আমাদের মত গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলের মানুষদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় শীতকে মোকাবেল করার জন্য। কবি সম্প্রদায়ও শীতের সূর্যকে অনুরোধ করে তাপের প্রখরতা বাড়ানোর জন্য।

শীত প্রধান দেশ জাপান অতটা ব্যস্ত না হলেও ওদেরও কিছু কিছু রুটিন কাজ করতেই হয়। আর তাইতো শীতের আগমন ঘটতে থাকলে সুপার মার্কেটগুলোতে গামবুট, বেলচি ( বরফ সরানোর জন্য), গাড়িতে জমে থাকা বরফ ফেলার জন্য ব্রাশ বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়। গাড়ির টায়ারগুলোকে পরিবর্তন করে স্নো টায়ারে নিতে গ্যারেজ গুলোতে গাড়ির লাইন পড়ে যায় । তেলের ডিপোগুলোতে কেরোসিন তেলের বিক্রিও বেড়ে যায়।

ব্যাঙের সর্দি বাগধারার বাক্য রচনার উদাহরণ মুখস্থ করেছিলাম এই ভাবে “””” সাত বছর যে জেল খেটেছে তার আবার জেলের ভয়, ব্যাঙের আবার সর্দি “। জাপানীদের আবার শীতের ভয়! বরং ওরা শীতকে উপভোগ করে। আর তাইতো শীতকালে বরফ পড়লেই ওরা চলে যায় স্কি করার জায়গা গুলোতে । স্কি করে ঘাম ঝরায় ।

আমরা যারা গরমকালে ঘাম ঝরিয়ে অভ্যস্ত তাদেরও মাঝে মাঝে ঘোড়ার রোগ ধরে, মানে শীতকালে ঘাম ঝরানোর ইচ্ছে জাগে। পুকুরের ধারকে পাহাড়ের স্লোপ বানিয়ে, কলা গাছের ডাকুয়া, নারিকেল গাছের পাতা কিংবা শুপারি গাছের ডালকে স্নো বোট বানিয়ে শরীরের পশ্চাতদেশের চামড়াকে উঠিয়ে যারা বড় হয়েছি তাদের শখ হয় পাহাড়ের তুলতলে বরফে স্কি করতে। আজও সকাল সকাল যাত্রা করেছিলাম স্কি করার জন্য।

আমরা স্কি খেলার পার্টটাইমার । শীতকালীন অলিম্পিক দেখে মস্তিস্কের বিভিন্ন সেলে বিভিন্ন তথ্য ডুকিয়ে রাখি। কিভাবে মুভ করতে হবে, কিভাবে থামতে হবে, সর্বোপরি কিভাবে ব্যাথা ছাড়া উল্টে পড়তে হবে। আগেই বলেছি আমরা পার্টটাইমার, স্কি করার গুডস, মানে ডাল তলোয়ার আমাদের লাগে না। প্রফেশনাল কিংবা নিয়মিতরা অবশ্য স্কি সেট সঙ্গে নিয়েই যায়। পয়সা গুনলেই ডাল তলোয়ার পাওয়া যায় স্কি করার জায়গাগুলোতে । গলা কাটা রেন্ট অবশ্য রাখে। স্কির জায়গায় অবশ্যই স্লপ থাকতে হবে এবং সাথে বরফ। তাই স্কি করার জায়গাগুলোও পাহাড়ি এলাকায় গড়ে ওঠে। আর তাই রুটগুলোও হয় খতরনাখ। ন্যাভিগেশন সিস্টেমও মাঝে মাঝে হাই হুতাস করে রাস্তা গুলোতে চলার সময়। আর আমার সব সময় মনে হয় যে আমি ভিন্ন রাস্তায় চলছি। তাইতো মান্নাদের “ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ধুয়ো না“ “”””””″”     বাজলেও আমার মাথায় বাজে ওগো ন্যাভিগেশন আমায় অন্য রাস্তায় নিও না।

একমাত্র ছেলে জার্নির আগেই বলে রেখেছে যে এবার সে স্নো বোর্ড ভাড়া করবে। আগের বার স্কি করেছিল। বেশ ভালোই ছিল। ভাবলাম নতুন কিছু করতে চায় দেই চান্স। আমি ট্রাক চেঞ্জ করলাম না, মানে স্কির সেট ভাড়া করলাম। সহধর্মিণী এতসব ঝামেলায় না গিয়ে দর্শক সাজলো । আমিও মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে ক্যামেরাম্যান এর দায়িত্ব নিতে পারবে। আমার চিৎপটাং হওয়ার ছবি তুলতে হবে না! আমি চিৎপটাং হলে বৌ খিল খিল করে হাসছিল আর ছেলে পড়লে চিৎকার করছিল। ছেলে চার পাচবার পরেই গিভআপ করল। সে স্কি করতে চায় । ভাগ্য ভাল ছিল বাপ বেটার জুতোর সাইজ একই ছিল। নিজেই সেক্রিফাইস করলাম ( আসল কথা হল দুই একবার রাইড করেই হাফাচ্ছিলাম ) । ছেলে ছোটবেলায় স্কেটিং বেশ ভাল পারত, তাই সেই টেকনিকটা কাজে লাগিয়ে ভালই স্কি করল ।

Mahbub

 

 

 

 

(মোঃ মাহবুবর রহমান  তোত্তরি, জাপান, ,লেখক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)