কামরুল মান্নান আকাশ :একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ মানে মৃত্যুকে ভয় না করে জীবনের গান গেয়ে যাওয়া। একটি শিশু যখন কথা বলতে শেখে তার প্রথম উচ্চারনটি হয় নিজের মায়ের ভাষাতেই, যা সে শেখে তার মায়ের কাছে। তাই মানুষের জীবন মায়ের সঙ্গে, মায়ের ভাষার সঙ্গে, মাটির সঙ্গে থাকে নাড়ীর সুতোয় বাঁধা। এর কোন একটি যখন কেউ কেড়ে নিতে চায় প্রাণ দিয়ে হলেও সে তা রক্ষা করে। এই পৃথিবীতে দেশের জন্য মায়ের জন্য আনেক মানুষ অনেক জাতিই তো প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু নিজের ভাষার জন্য, মায়ের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে একটাই জাতি একটাই দেশ – বাঙালি আর বাংলাদেশ! আজ থেকে চৌষট্টি বছর আগে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারী মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায় করতে যেয়ে যারা জীবন দিয়েছিলেন সেই সব সাহসী মানুষেরা আজো আমাদের প্রেরনার উৎস। তাঁরা যেমন ছিলেন আমাদের মুক্তি্যুদ্ধে, তেমনি থাকেন যে কোন সংকটে। আমরা যেন কখনো ভুলে না যাই তাঁদের আত্মদানই দিয়েছে আমদের মুখে মায়ের ভাষা। এদিনটি যেমন শোকের তেমনি বিজয়ের ও গৌরবের। দেশ ও জাতি সেই সব বীর শহিদদের স্মরণ করে পরম অহংকারে। বাংলাদেশের এই অমর একুশের শহিদ দিবসটি আজ গোটা বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিরা এই দিনটি পালন করে যথাযোগ্য মর্যাদায়।
যত দূরে যাই, যেখানেই যাই, একুশের সূর্যদোয়ের ভোরে প্রতিটি বাঙালীর মনে যে সুরটি বেজে উঠে তা হল “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভূলিতে পারি!” কি করে ভুলব এই দিন, কি করে ভুলব রক্তের এই ঋণ! একুশের এই চেতনা এবং প্রেরণা উদ্বুদ্ধ
করেছে দেশ থেকে অনেক দূরে সিডনীতে বসবাসকারী বাঙালীদের প্রতিষ্ঠা করতে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা স্মৃতিসৌধ। প্রতিবারের মত এবারও একুশের ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা তাঁদের সংগঠন “ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া”র আহবানে সমাবেত হয় সিডনীর এ্যশফিল্ড পার্কের স্মৃতিসৌধে। সংগঠনের সভাপতি জনাব মোস্তফা আবদুল্লাহ ও সাধারন সম্পাদক আনিস মজুমদারের নেতৃত্বে সবাই অংশ নেয় প্রভাতফেরীতে। প্রাণের ভিতর থেকে উঠে আসা সেই অমর গানের সুর ধ্বনিত হয় সবার কন্ঠে। হাত ভরা ফুল, বুক ভরা ভালবাসা আর শোক নিয়ে এগিয়ে যায় মিছিল। ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধে অর্পন করে পুস্পস্তবক।
একুশের চেতনা সঞ্চারিত হোক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, দেশে এবং এই পরবাসে।