温泉(ওনসেন) হলো hot spring. চাইনিজ ক্যারেকটারের হুবহু ইংরেজী অনুবাদ। জাপানীরা hot spring এর চেয়ে hot spa লিখেই সাইনবোর্ডগুলো ঝুলিয়ে রাখে। এদের রক্তের সাথে মিশে আছে ব্যবসা। তাই hot spring না লিখে hot spa এর মাধ্যমে জায়গাটাকে ব্যবসায়িক জায়গায় পরিনত করে।
এরা ব্যবসা ভালোই বোঝে। আমাদের দেশের পাখি ভাইরা একজন পাত্র পাত্রী নিয়ে ডিল করলে জাপানীর পাখি ভাইরা একই সময়ে এক সাথে ১০-১২ জন পাত্র পাত্রী নিয়ে হ্যান্ডেল করে। খটকা লাগছে? খুবই সিম্পল। ১০ জন বিবাহ ইচ্ছুক নারী ও সমান সংখ্যক নর ( সমান হতে হবে এমন কোন ধরাবাধা নিয়ম নাই ) একটা হল রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। মুখোমুখি বসে কথা বলার টেবিলের ব্যবস্থা থাকে । কথা বলার টাইম তিন থেকে চার মিনিট হয়। ঘুড়ে ঘুড়ে সবাই সবার সাথে কথা বলে ( অবশ্যই বিপরীত লিঙ্গধারীদের সাথে )। ছেলেরা পছন্দের মেয়েদের লিস্ট আয়োজকদের কাছে জমা দেয়। মেয়েরাও ঠি একই কাজ করে। লিষ্ঠে মিল পেলেই একটা নতুন কাপল সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখতে পায় আয়োজকরা। ব্যবসা শুধু পাখি ভাই করল না, হলরুমের মালিক, দানাপানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা করে নিলো।
তাইতো ভুমিকম্পের দেশ জাপান মানেই মাটির নিচে বুদবুদ করে গরম পানি। ফুয়ারার আকারে সেই পানি উপরে উঠে আসা মানেই spa বিজনেস। আশেপাশে গড়ে উঠবে বিশাল বিশাল হোটেল ( ওদের ভাষায় রিওকান ) । দুর থেকে কাজপাগল মানুষগুলো স্ট্রেস কমাতে ছুটে আসে ওনসেন এ। জন্মদিনের ড্রেসে ঢুকে পরে ওনসেনের পানিতে। চোখ বন্ধ করে কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায় কাজের কথা। গোসল শেষে ইউকাতা ( জাপানীদের নাইটি ) পরে ভগুলি ঘোড়াফেরা করে ওনসেনের এলাকা। এক দোকানের বিয়ারের স্বাদে ওদের মন ভরে না। চলতে থাকে ওদের চেখে দেখার পালা। পা দিয়ে চলার ও চোখ দিয়ে দেখার ক্ষমতা থাকা পর্যন্ত চলতেই থাকে এই ঘুড়াঘুড়ি ।
ভাগ্যক্রমে কোন বাংলাদেশীর ঐ সব এলাকায় কর্মস্থল হলে খবর আছে! ঐসব এলাকার বেশীর ভাগ বাড়ীতেই গোসলখানা থাকে না। থাকলে অকেজো । সবাই পাবলিক বাথ মানে ওনসেনে গোসল সেড়ে নেয়। ভাগ্য খারাপ হলে জন্মদিনের ড্রেসে জাপানীদের সাথে গোসল সেড়ে নিতে হবে। আশার বিষয় হল জাপানীরা রাতে গোসল করে, তাই সকাল বেলা পাবলিক বাথগুলো ফাকা থাকে। ইচ্ছা করলে ঐ সময়টাকে বেছে নিয়ে সেড়ে নেয়া যায় গোসলখানা। ওনসেনে গোসল করার অভিজ্ঞতা নাই বললে মিথ্যা বলা হবে। বাংলাদেশীদের অনেকেকেই জাপানীদের কাপড় খোলার দৃশ্য দেখে চিৎকার করে দৌড় দিতে দেখেছি।
অনেকে আবার নতুন অভিজ্ঞতাকে ইনজয় করে থাকে। লজ্জা নিবারন করতে ফেইস টাওয়াল ব্যবহার করা যাবে । কেননা ওনসেনে ঢোকার সময় কাপড় বলতে শুধু ফেস টাওয়ালই থাকবে সাথে। লজ্জাজনক স্থানটিকে ফেইস টাওয়াল দিয়ে মোজাইক করে ডুকতে হবে ওনসেনে। জাপানীরা মোজাইক করে না। ওদের গোসলের দৃশ্য দেখলে ছোটবেলায় পুকুরে গোসল করার দৃশ্যটা ভেসে ওঠে । বাড়ী থেকে বেড় হয়ে পুকুর পাড় পর্যন্ত হানড্রেট মিটার দৌড়। পুকুর পাড়ে পৌছে রাবার লাগানো হাফ প্যান্ট এক হিচকা টানে খুলে ফেলা।
পুকুর পাড় থেকে কার্ল লুইসের লংজাম্প। পানিতে পরার সময় ডাইভিং এর প্রাকটিসটাও হয়ে যায় । তারপর সাঁতার তো আছেই। গোসল করতে যেয়ে অলিম্পিকের চারটা ইভেন্টের প্রাকটিস । প্রাকটিস অনেক করেছি অলিম্পিকে যাওয়া হয়নি। এদের ওনসেনে অলিম্পিকের কোন ইভেন্টরই প্রাকটিস হয় না । ছোট ছোট বাচ্চারা অবশ্য একটু একটু সাতারের প্রাকটিস করে নেয় । জাপানী বাচ্চারা করে না, কেননা সাতার কাটার নিয়ম নাই ওনসেনে। ওপেন এয়ারে ওনসেন আছে । ওরা সেগুলোকে রোতেনবুড়ো বলে। তবে সংখ্যা খুব কম। বেশীর ভাগই বদ্ধ ঘড়ে। কিছু কিছু জাপানী বানর ওনসেন খুব পছন্দ করে। বানরদের ওনসেনের গোসল দেখার জন্য দেশী বিদেশী পর্যটকের ভীড় হয় সেই সব যায়গাগুলোতে।
(মোঃ মাহবুবর রহমান তোত্তরি, জাপান, ,লেখক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার)