সিডনির ইঙ্গেলবার্নে পালিত হল বৈশাখী উৎসব।

সিডনির ইঙ্গেলবার্নে পালিত হল বৈশাখী উৎসব।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃগত ১০ই এপ্রিল ২০১৬, সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক এঁর উদ্যোগে, বাংলাদেশ থেকে হাজার

মাইল দূরে অস্ট্রেলিয়ার বুকে ইঙ্গেলবার্নে পালিত হল বৈশাখী উৎসব।

বাংলাদেশের আকাশের মত কালবৈশাখী ঝড়ের আবাস ছিল না  সিডনির আকাশে, কিন্তু ছিল বাংলাদেশের বৈশাখের উদ্দীপনা  সিডনির বাঙ্গালীদের মধ্যে।

বাঙ্গালীদের প্রানের উৎসব বাঙলা নববর্ষ। পায়ে পায়ে পথ চলতে চলতে শেষ হয়ে এল ১৪২২ বাঙলা বছর।  চলে এল ১৪২৩। সিডনি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শামিল হয়েছেন বাঙ্গালীর প্রানের বৈশাখী উৎসবে। ভেদাভেদ ভুলে উত্সবের রঙে ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছেন তারা।

লাল সাদা রঙের এক অপূর্ব সমাবেশ, দেখে মনে হয়েছে  যেন সিডনির বুকে এক খণ্ড বাংলাদেশের নববর্ষের প্রানঢালা আয়োজন।

রবিন্দ্রনাথ, নজ্রুল, জীবনানন্দের কবিতা ও গান দিয়ে সাজানো ছিল কমিউনিটি হলের চার দেওয়াল।

অনুষ্ঠান শুরু হয় সিডনির বাংলা স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা  ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রান জনাব নাজমুল খান কে দিয়ে। তিনি বলেন ,” বাংলাকে শুধু আমাদের বুকে ধারন করা নয় , অস্ট্রেলিয়ার  নতুন প্রজন্মের শিশুদেরও তার সাথে পরিচিত করার জন্যই আজ এই উৎসবের আয়োজন।“

শুরুতেই দল নৃত্য, গান ও কবিতা নিয়ে আসে সিডনির খুবই পরিচিত  শিশুকিশোরদের দল “কিশলয়” কচিকাচার দলটি। বাহারি রঙ ও মন মাতানো পরিবেশনা অস্ট্রেলিয়া তে বেড়ে উঠা প্রজন্মের কাছে একটি উদ্দীপনা। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিদেশের মাটিতে ধরে রাখার জন্য শত প্রতিকূলতার মধ্যে এই দলটি সিডনি জুড়ে তাদের পরিবেশনা অব্যাহত রেখেছে গত এক দশক ধরে। কিশলয় কচিকাচার দলটির সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন রোকসানা বেগম ।

রুমানা সিদ্দিকীর পরিচালনায়,  সাজ্জাদ চৌধুরী ও মাছুদ মিথুন এঁর সহায়তায়  কাম্বেলটাউন বাংলা স্কুল নিয়ে আসে তাদের পরিবেশনা। তারা একে একে চমৎকার কিছু দলীয় সঙ্গীত, কবিতা, গান ও নাচ পরিবেশন করে।

প্রথমে দল বেঁধে  সবাইকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিল  রবিদ্রনাথের “ওঠো ওঠো রে- বিফলে প্রভাত বহে যায় যে…”,” আমরা করব জয় ……।“

তারপরই  নিয়ে আসে  বৃন্দা আবৃতি। এ পর্যায়ে শিশুকিশোরদের পরিবেশনায় দর্শক খুঁজে পেয়েছে আবহ বাংলার ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে।

লিভারপুল সাটারডে কমিউনিটি বাংলা স্কুলের ছাত্ররা তাদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিবেশন করে , স্বাধীনটা শব্দটি কি করে হোল (ঐহিক তারিক), আমার দেশ (রঙ্গন ও প্রহর), কবিতা (রাইক) ও  পুথি পাঠ (রাইম)। হাই স্কুল বাংলা ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

সমবেত কণ্ঠে অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় শিশুকিশোরদের সাংস্কৃতিক পর্বটি।

 বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত বাঙ্গালীদের মধ্যে অঙ্কন ও তাসফিয়া গান পরিবেশন করে।

দ্বিতীয় পর্বে থাকে সিডনির প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের পরিবেশনা।বাংলা কমিউনিটির পরিচিত শিল্পী আরফিনা মিতা’  সুরেলা কণ্ঠে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সিডনির নামকরা শিল্পী মাছুদ মিথুন ও লুতফা খালেদ পরিবেশিত গান ছিল মন মাতানো।

তারপরই আসেন সিডনির অতি পরিচিত আবৃতিকার রুমানা সিদ্দিকী আবৃতি করেন রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তি । উপস্থিত সবাই গভীর আগ্রহ সহকারে তাদের আবৃতি উপভোগ করেন।

এককভাবে গান পরিবেশন করেন সিমা আহমেদ, লামিয়া ,রুনু রফিক, পাপিয়া ও  ফারিয়া।

সবশেষে সমবেত শিল্পীরা একসাথে “এসো হয়ে বৈশাখ… এসো এসো…” অনুষ্ঠান পরিসমাপ্তি টানেন।

তবলায় ছিলেন সাকিনা ও যন্ত্রি লোকমান হাকিম।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন, ফেডেরাল এম পি লরি ফারগাসন ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ম্যাককুয়ারি ফিল্ড  আসন থেকে নির্বাচিত এম পি অনুলাক চান্টিভং, কেম্পেলটাউন জেলার নির্বাচিত এম পি গ্রেগ ওয়ারেন এবং কেম্পেলটাউন সিটি কাউন্সিলের মেয়র পল হকার।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন   ফেডেরাল নির্বাচনের প্রার্থী লেবার পার্টির  ওয়ারিয়া আসনের  এন স্টানলি ও মাকারথা আসনের ডঃ মাইক ফ্রিলেন্ডার।

বাংলাদেশী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিডনি থেকে প্রকাশিত অনলাইন ও পেপার পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আনুষ্ঠানটির  সার্বিক সঞ্চালনায় থাকেন সেলিমা বেগম।