অনলাইন ডেস্কঃ ইংল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত নিয়োগ করা অস্থায়ী সহকারী কোচ থিলান সামারাবীরাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কালপাগের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তিনি দেখাননি। উল্টে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য বেশ পরিশ্রম করেছেন। মনোযোগ দিয়েছেন অভিভাবকের মতো।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ হিসেবে দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল শ্রীলংকার প্রাক্তন ক্রিকেটার রুয়ান কালপাগের।বিসিবি-র সঙ্গে কালপাগের চুক্তিটাও হয়েছিল সে ভাবেই। কথা ছিল আফগানিস্তান এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজকে সামনে রেখে অনুশীলনে যোগ দেবেন। তবে কথা রাখেননি কালপাগে। বিসিবি-র সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি। উপায়ন্তর না দেখে একজন আপতকালীন ব্যাটিং কোচের সন্ধান দিতে চন্দিকা হাতুরুসিংহের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল বিসিবি-কে। হাতুরুসিংহের মধ্যস্থতাতেই এসেছিলেন সামারাবীরা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই জানিয়ে ৮১ টেস্টে ৫৪৬২ রানের মালিক থিলান সামারাবীরা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন। হাতুরুসিংহেও অস্ট্রেলিয়ায় ঘর-বাড়ি বানিয়ে সেখানে স্থায়ী ঠিকানা করে ফেলেছেন বলে মাঝেমধ্যেই কথা হয় স্বদেশীয় সামারাবীরার সঙ্গে। তার উপর অস্ট্রেলিয়া থেকে কোচিংয়ের উপর সার্টিফিকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে সামারাবীরার। এ বছর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের শ্রীলঙ্কা সফরকে সামনে রেখে জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাস অজি ব্যাটসম্যান অ্যাডাম ভোজেস, শর্ন মার্শদের ব্যাটিং তালিম দেয়ার অভিজ্ঞতাও যোগ হয়েছে সামরাবীরার প্রোফাইলে। এ সব অভিজ্ঞতার কারণেই সামারাবীরার নাম প্রস্তাব করেছিলেন হেড কোচ হাতুরুসিংহে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরকে সামনে রেখে ৪৫ দিনের জন্য ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসেবে সামারাবীরাকে নিয়োগ করেছিল বিসিবি।
দিন প্রতি ৫০০ মার্কিন ডলার পারিশ্রমিকে নিযুক্ত হওয়া এই শ্রীলঙ্কান বিসিবি’র আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-২এ হেরে গেলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টেস্ট সিরিজ ১-১এ ড্র করায় বাহবা পাচ্ছেন সামারাবীরাও। দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকা টপ অর্ডার ইমরুল কায়েস সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে শটের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পেরেছেন। আগে পুল এবং কাট শটে ছিল দুর্বলতা। সেই ইমরুল কায়েসকে এই দু’টি শটে দক্ষ করে তুলেছেন সামরাবীরা। সাব্বির রহমান রুম্মানকে লেট অর্ডার থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন নম্বরে তুলে আনা হয়েছে। সেখানেও ভুমিকা রেখেছেন ৮১ টেস্ট খেলা এই শ্রীলঙ্কান। স্পিনারদের জন্য তৈরি হওয়া টার্নিং উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের লড়াকু ব্যাটিংয়ের জন্যও সামারাবীর কোচিং প্রশংসিত হচ্ছে। এই সব কারণেই আগামী জুনে ইংল্যান্ডে হতে চলা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত তাঁকে রেখে দিচ্ছে বিসিবি।
আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরকে সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১০দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ দল। সেখানে সিডনি সিক্সার্স এবং সিডনি থান্ডার্সের সঙ্গে ৫০ ওভারের দু’টি প্রীতি ম্যাচ হবে। অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ীভাবে বাস করা সামারাবীরা সিডনির সেই ক্যাম্পে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে যুক্ত হবেন। শুধু তাই নয়, অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড সফরেও যাবেন তিনি।
বুধবার মেলবোর্নের ফ্লাইট ধরেছেন সামারাবীরা। তার আগেই দায়িত্বের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা জেনে গেছেন। বিসিবি-র সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য এখন আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আইসিসি-র মেগা ইভেন্টে ভাল কিছু করে দেখাতে চাই। সে জন্যই সামারাবীরাকে তার দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তা ছাড়া সামনে আমাদের ব্যস্ত আন্তর্জাতিক সূচিতে নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আয়ারল্যান্ড সফর এবং ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হবে। সামারাবীরা হাতুরুসিংহেকে সহায়তা করেন। এই দায়িত্ব ভাল ভাবেই পালন করছেন তিনি।”
সামারাবীরার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির ভাবনাও আছে বিসিবি-র মাথায়। তবে অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসেবে আর একটি অ্যাসাইনমেন্ট আছে বলেই আপাতত বিসিবি-র সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হতে পারছেন না সামরাবীরা। তাই দৈনিক ভিত্তিতেই সামারাবীরাকে রেখে দেওয়ার কথা ভাবছে বিসিবি। প্রথম শ্রেণির আবাসন, বিজনেস ক্লাসে বিমান ভ্রমণ এবং দিন প্রতি ৫০০ মার্কিন ডলার। এটাই আপাতত সামারাবীরার সঙ্গে চুক্তি।
(সূত্র: আনন্দবাজার)