ফজলুল বারী:মারনঘাতী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানমালা হয়নি। এরমাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানাকিছু বন্ধ করা হয়েছে। হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের। বন্ধ করা হয়েছে সমুদ্র সৈকত সহ বিখ্যাত সব পর্যটন স্পট। মন্ত্রীরা প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকা লকডাউনের কথা বলছেন। আর ঢাকা চট্টগ্রামে চলছে ঝুঁকিপূর্ন নির্বাচনী প্রচারনা! প্রতিদিন শতশত নেতাকর্মী এসব প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন! কারো মুখে কোন মাস্ক বা সতর্কতার বালাই নেই! আর অবাক প্রার্থী-তাদের ক্যাম্পেইনাররা ভীত সন্ত্রস্ত ভোটারদের মুখের কাছে গিয়ে কাতর বলছেন ভোট দিন! কোলাকুলি করছেন! কী ভয়ংকর এক পরিস্থিতি!
এখন এমনিতেই লোকজন ভোট দিতে যায় না। করোনা সংক্রমনের এ পরিস্থিতিতে লোকজন ভোট দিতে আরও যাবেনা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বা প্রার্থীদের এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। উল্টো প্রার্থীরা তদবির করছেন ভোট যাতে না পিছায়! ভোট নিয়ে এসব ব্যবসায়ী প্রার্থীরা এরমাঝে বিস্তর খরচ করায় তারা ভোট পিছানোর পক্ষে না তা বোঝাই যায়। কিন্তু মানুষের জীবন বড়। প্লিজ বন্ধ করুন এই ভয়ংকর খেলা! প্রহসন! এটি বড় আন্তর্জাতিক খবর হবার আগেই নির্বাচন স্থগিত করুন। দেশকে বিদেশিদের কাছে হাসির পাত্র করবেননা।
সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক সময়ে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তাদের খুঁজে খুঁজে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কূল পূর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়কূল গ্রামের আমেরিকা ফেরত মোঃ দাউদ হোসেন এবং সদর ইউনিয়নের সুহিলপুর গ্রামের ইতালি ফেরত আবদুল আজিজকে সরকার নির্দেশিত হোম কোয়ারেন্টাইন অমান্য করায় দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারা অনুসারে ১০,০০০ টাকা করে মোট ২০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এমন জরিমানা করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইতালি ফেরতরা দেশে আসার পর হজ ক্যাম্পে ‘থাকার জায়গা ভালো না, নোংরা, খাবার দেয় নাই’ ইত্যাদি অভিযোগ করে তারা আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিলেন। অভিযোগগুলো সত্যিও ছিল। কিন্তু এখন এর চেয়ে সত্যি খবরটি হলো সেই ইতালি ফেরত অনেকের মাধ্যমেই দেশে করোনা সংক্রমনও বেড়েছে! এক পরিবারের তিনজনও আক্রান্ত হয়েছেন! আমেরিকা-কুয়েত ফেরত প্রবাসীর মাধ্যমেও ঘটেছে সংক্রমনের ঘটনা। যে প্রবীন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বুধবার, তিনিও বিদেশ ফেরতের মাধ্যমে সংক্রামিত। বিদেশ গিয়ে কাজের মাধ্যমে পরিবার-সমাজের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনায় প্রবাসীরা এতোদিন ছিলেন এলাকার মাথার মনি। এখন তাদেরকেই ভয় পাচ্ছেন এলাকার লোকজন! সামগ্রিক অবস্থাটি দূর্ভাগ্যজনক। নিজের-পরিবার-গ্রামবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রবাসীরা হোম কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি যথাযথভাবে মেনে চলবেন আশাকরছি।
বিদেশ ফেরতদের জরিমানার মধ্যে শাসকদলের জন্যে বিব্রতকর একটি খবরের জন্ম দিয়েছেন সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন কামরান! ১৫ মার্চ তিনি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যে দেশে ফিরেই তিনি সিলেট বিমান বন্দরে অনুগত নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সম্বর্ধনা নেন! এই মহামারীর বিপদের সময় যখন তাঁর সরকারের ঘোষনা অনুসারে বিদেশ ফেরতদের কোয়া্রেন্টিনে যাবার কথা, তখন বদর উদ্দিন কামরানের মতো সিনিয়র নেতা নিয়েছেন সম্বর্ধনা! এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যেখানে যেখানে নেতাদের ভিড়ের মধ্যে তাঁর মাথা দেখা গেছে সে ছবিগুলো তিনি আবার পোষ্ট করেছেন ফেসবুকে!
বদর উদ্দিন কামরান একজন দায়িত্বশীল নেতা। দীর্ঘদিন ধরে দেশকে-দলকে মূল্যবান সার্ভিস দিয়ে আসছেন। এখন তাঁর সরকার বিদেশ ফেরত সবাইকে বাধ্যতামূলক কোয়া্রেন্টিনে যেতে বলছে, না গেলে জরিমানা করছে, তখন তিনি নিজে কোয়া্রেন্টিনে না গিয়ে ফেসবুকে ছবি পোষ্ট করে জনগনের সামনে দলকে-সরকারকে-নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করলেন? মিডিয়ায় দেখলাম বলেছেন তিনি নিশ্চিত তিনি আক্রান্ত নন! এ রকম বিদেশ ফেরত সবাই যদি দাবি করে তারা নিশ্চিত তারা আক্রান্ত না, তাহলে আপনার দেশের সরকার কী বিশৃংখলায় পড়ে যায়না কামরান সাহেব?
সরকারকে বলবো আপনাদের এই নেতাকে থামান। কোয়া্রেন্টিনে না থাকার জন্য জরিমানা করুন। বাধ্য করুন তার কোয়া্রেন্টিন। আইনের প্রয়োগ সবার ক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিত। বদর উদ্দিন কামরানের সংস্পর্শে আসা নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে। সরকারি নির্দেশ অবজ্ঞার জন্যে নেতাকে জরিমানা করলে তাতে সরকারের বদনাম নয়, বরঞ্চ সুনাম হবে। করোনা ভাইরাসের এপিডেমিক অবস্থার ভিতর বিদেশ ফেরতরা বিয়ে করছেন, খবর পেয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধের ঘটনাও ঘটেছে! দুনিয়াজুড়ে আতঙ্কের সময়ে বাংলাদেশে যেন ভিন্ন এক মানসিক পরিস্থিতি! এখানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আদায় করতে অনশনও হয়েছে! আবার ছাত্রছাত্রীদের হলত্যাগ করাতে নিতে হয়েছে প্রশাসনিক উদ্যোগ!