বাঙালিপাড়া হিসেবে সিডনি শহরের নিকটবর্তী ইস্ট লেকসের খ্যাতি অনেক আগে থেকেই। তাই অস্ট্রেলিয়াতে স্থায়ী বাঙালিদের কাছে ইস্ট লেকস বেশ পরিচিত একটি নাম। যারা দূরবর্তী এলাকায় সুলভে বড় বড় বাড়ি কিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের অনেকেই প্রথম দিকে এই ইস্ট লেকেসই থেকেছেন। তারপর সময় সুযোগ মতো সরে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। তবে ইস্ট লেকসের বেশির ভাগ বাঙালি এখন ম্যাকোরিফিল্ড, ইঙ্গেলবার্ন, ক্যাম্পবেলটাউন ও মিন্টুতে আছেন। এ সবগুলো সাবার্বই কাছাকাছি।
ক্যাম্পবেলটাউন এলাকাটি ইস্ট লেকস থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে। আমাদের নবু মামা (ছদ্মনাম) বর্তমানে ওখানেই আছেন। আমি, নয়ন আর খোকন তার বাসায় প্রায় ছয় মাস ছিলাম। কী কারণে মামানি দুই ছেলেকে নিয়ে সাত মাসের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাংলা দোকান থেকে খোঁজ পেয়ে ওই সুযোগেই তার বাসায় আমরা তিনজন উঠেছিলাম। দেখতে অনেকটা আমার ছোট মামার মতো। তাই ওনাকে আমিই প্রথমে মামা ডাকতে শুরু করি। এভাবেই তিনি আমাদের সমসাময়িক সকলেরই মামা হয়ে গেলেন। প্রাণ উজাড় করে সবাইকে আদর করেন, আত্মীয়-স্বজনহীন এ পরবাসে মামার এইটুকু আদর যেন হীরার চেয়েও দামি। তারপর যখন মামানি আসার সময় হয়ে এল, ছেলেরা বড় হয়েছে এই ভেবে নবু মামা ইস্ট লেকসের ছোট্ট বাসাটি আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে বড় একটা বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেলেন ক্যাম্পবেলটাউনে।
অনেক দিন হয়ে গেছে আর কোনো খোঁজখবর নেই। যদিও ফোন নম্বর আছে, ঠিকানাও জানা। কিন্তু প্রবাসে ব্যস্ত জীবন। অনেক নিস্তব্ধতার মাঝেও এ হৃদয় বড় কোলাহলময়। নিজের ভেতর নিজেই একা। চরম একা। সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব, ভাষার দ্বন্দ্ব, পরিবেশ-পরিচিতির দ্বন্দ্ব। আদর চাইলেও পাওয়া যায় না। নিজের সঙ্গেই নিজের অভিমান। আর এতে কারই বা কী আসে যায়। ছুটির দিন। তবুও নেই কোনো অবসর। ছোট বাসাটিতে অনেক কাজ। তারপরও নিত্যদিনের এই গৎবাঁধা জীবন কখনো অসহ্য মনে হয়। মনের আরশিতে কেবল স্মৃতিটুকুই উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুছে গেছে আর সব। ওই স্মৃতির ভেতর নবু মামার বাড়িটা জেগে আছে। ওখানে যাওয়ার রাস্তাটুকু এখনো মুছে যায়নি হয়তো।
বেলা প্রায় তিনটা। অনিশ্চিতকে উদ্দেশ্য করেই ইস্ট লেকস থেকে গাড়ি ছেড়েছি। আহা, মামার জন্য খুব মায়া হয়। যদি আবার দেখা পাই…।
দুই বছর আগের কথা। আজও কেমন মনে পড়ে, একদিন সকালে বন্ধু নয়ন আর খোকনকে বললাম, দোস্ত, ক্যাম্পবেলটাউনেই আমাদের নবু মামা বাড়ি কিনেছেন। এখন ভাড়া বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে উঠবেন। গতকাল ফোন করে এমনভাবে অনুরোধ করল যে আর না করতে পারলাম না। চলো দোস্ত। তাকে একটু হেল্প করে আসি।
তিন বন্ধু সকাল সাতটায় রওনা দিই। একটা বাঙালি পারিবারিক পরিবেশে যাচ্ছি। আর যাই হোক, বেশ মজার একবেলা খাওয়া অন্তত পাওয়া যাবে, এই আশায় মনে মনে আমরা তিনজনই বেশ খুশি। ব্যাচেলর জীবনে নিজেদের আনাড়ি রান্না খেতে খেতে দেশি রান্নার স্বাদটাই ভুলে গেছি। ছুটির দিন। রাস্তা ফাঁকাই ছিল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাই। গিয়ে দেখি নবু মামা স্লাইস ব্রেড জেলি আর কলা দিয়ে খাচ্ছেন। আমাদের দেখে কেমন জড়সড় হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আকুতি যেন আর ফুরায় না তার। ভেতরে গিয়ে দেখি, বাসার সর্বত্র দুর্দশার অন্ত নেই।
খোকন আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল, কী রে, মামার কি পরিবার নেই?
বিষয়টা আমি নিজেও তেমন জানি না। বললাম, দোস্ত, পরিবার তো থাকারই কথা। বছরখানেক আগে একবার সিটিতে মামার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন সঙ্গে ওনার দুই ছেলেকেই শুধু দেখছি। আসলে বেশি কিছু আমি নিজেও জানি না।
যাক, এ নিয়ে কথা আর তেমন হয়নি। সময় নষ্ট না করে আমরা সবাই কাজে লেগে যাই। দুপুরে পিৎজা এনে খাওয়া হলো। সবার প্রতি আদর যেন আর শেষ হতে চায় না…। কত নরম তার মন। এসব দেখে মনে মনে রহস্যের মতো কিছু জিজ্ঞাসা জট পাকাতে থাকে। কত বিচিত্র রকমের মানুষই তো আছে। কী-ই বা দরকার, কী আর হবে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আগ্রহ দেখিয়ে। তার চেয়ে বরং যত দূর সম্ভব তাকে সহযোগিতা করে সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় পৌঁছতে পারলে বাঁচি। রাজ্যের কাজ পড়ে আছে বাসায়। এভাবেই চলছিল নিজের মাঝে আমাদের বোঝাপড়া।
বেলা তিনটার দিকে তার বড় ছেলে উদয় বাসায় এল, সঙ্গে একটা মেয়ে। ন্যাশনালিটি জাপানিজ বলে মনে হলো। বয়স আনুমানিক একুশ-বাইশ হবে। একসঙ্গেই দুজন পড়াশোনা করে হয়তো। মেয়েটিকে ভেতরের একটা কক্ষে বসতে দিয়ে সে তার বাবাকে এসে জিজ্ঞেস করল, লাঞ্চ কী?
নবু মামা তার সহজাত বিনয়ে বললেন, বাবা, পিৎজা। পিৎজা এনে রেখেছি তোমার জন্য।
বাসার কাজ এখনো তো কিছুই হয়নি, কী করেছ সারা দিন?
তার পরের ঘটনা বর্ণনাতীত। ছেলেটার হাজার রকমের অভিযোগ তার বাবার প্রতি। কী বিশ্রী গালাগালি। বাপের গুষ্টিসহ নর্দমায় ডুবিয়ে ছাড়ে সে…। এদিকে আমরা তিনজন লজ্জায় যথাসম্ভব নীরবে ঘর থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে বসি। জিনিসপত্র প্রায় সবই নেওয়া হয়ে গেছে। যদিও তিনজনই বেশ ক্লান্ত। বাবার প্রতি ছেলেটার এমন জঘন্য আচরণ দেখে আমাদের মনটা একেবারে ভেঙে গেল। কিছুক্ষণ পর পরিবেশটা শান্ত হয়ে এলে আড়াল থেকে জানালা দিয়ে দেখি, অনাদরে ফেলে দেওয়া জীর্ণ মূর্তির মতো কেমন অসহায় নবু মামা তখন বাক্যহারা। মানুষটা যে জীবনে আর কখনো কথা বলার শক্তি ফিরে পাবে, সহসা অনুমান করাও কঠিন।
এখন কী করা যায়? না, এখানে তো আমাদের কিছুই করার নেই। তাদের পারিবারিক ব্যাপারে আমরা কথা বলার কে? কিছু বললে হয়তো ছেলেটা ট্রিপল জিরোতে ফোন করে পুলিশ নিয়ে আসবে। কে জানে। ঘটবে যত বিপদ। নয়ন আর খোকনকে নিয়ে আবার কাজে লেগে যাই। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সবকিছু যথাসম্ভব গোছগাছ করে দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় আমরা বাসার উদ্দেশে যাত্রা করি।
নয়ন আর খোকন বেশ আগ্রহ দেখালেও আমি শেষ পর্যন্ত এ আলোচনাটাই আড়াল করে রাখি। বাবা-ছেলেতে সম্পর্কের এমন চরম অবনতি দেখে বিষয়টা নিয়ে ভাবতেই আমার খুব লজ্জা করত। তাই নবু মামাকে ওই দিনের পর আর ফোনও দেওয়া হয়নি। তারপর প্রায় দুই বছর গত হয়েছে। নিজের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া করে শেষ পর্যন্ত হেরে যাই। নবু মামার ওই অসহায় চেহারাটা কয়েক দিন ধরে খুব বেশি মনে পড়ছে।
তাই একদিন দুপুরের পরপরই বাসার সমস্ত কাজ ফেলে খোকন আর নয়নকে কিছু না জানিয়ে শাঁই শাঁই করে গাড়ি ছুটিয়ে চলেছি নবু মামার সঙ্গে দেখা করতে। পথে নিজেকেই নিজে সান্ত্বনা দিই। মামার বখে যাওয়া ছেলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে, তাতে আমার এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে। অভিবাসী বাঙালি হিসেবে তার প্রতি আমি দায়িত্বে অবহেলা করব কেন? এ দেশে জন্ম নেওয়া ছেলে গার্লফ্রেন্ডের হাত ধরে বাসায় এসে তার বাবাকে যা-তা বলে গালি দেয়। তার গালি থাকুক তার কাছে। এই ছেলে কখনো আমাদের কষ্ট বুঝবে না।
দীর্ঘদিন নবু মামার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় খুব খারাপ লাগছে। সিডনিতে প্রথম এসেই তো তার হাতের রান্না খেয়েছি। এমন আরও কত স্মৃতি যে মনে পড়ছে। গত সপ্তাহে মাইগ্রেশন হয়ে গেছে তাই মাস দুই-তিনের মধ্যে আমিও দেশে যাব। ওই দিকে আত্মীয়স্বজন বিয়েশাদি নিয়ে ভাবছে। প্রবাস-সংসারের অজানা স্রোত কী একদিন আমাকে টেনে নিয়ে এমনই এক লজ্জাজনক পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করাবে? অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশের অভিবাসী জীবন কত সাধনার, কত আশার—এই আশা কী তবে এমনই নিরাশার?
চলন্ত পথে এসব ভাবতে ভাবতে মনটা হঠাৎ কেমন হাহাকার করে ওঠে। এম ফাইভ ফ্রিওয়ে থেকে ম্যাকোরিফিল্ডের এক্সিট ধরে আরও বেশ দূর এগিয়ে বড় এক রাউন্ড অ্যাবাউটের কাছাকাছি বাম দিকে বিশাল এক ঘাস ছাওয়া মাঠ। ঘাসের ওপর বসে আছেন একজন মানুষ। কেমন যেন নীরব। বুকের ভেতরটা হঠাৎ কেমন করে ওঠে। লোকটাকে চেনা মনে হয়। তবে এখানে কেন? এটা তো কোনো পার্ক নয়। কোনো দিন কাউকে দেখা যায়নি এখানে। দু-একটা ঘোড়া মাঝেমধ্যে ঘাস খায় শুধু। সেদিন সেই ঘোড়া নেই। শুধু আছে এই মানুষটা। আরও এগিয়ে বেশ পরিষ্কার বোঝা গেল সব। দেখি-হ্যাঁ, তাই তো। উনিই তো সেই মামা। রাস্তার পাশে গাড়িটা পার্ক করে সে কাছে আসতেই নবু মামা ফিরে তাকালেন।
বাবা, তুমি এসেছ! এত দিনে তোমার এ মামাকে মনে পড়ল বুঝি?
মামা, আপনি এখানে! বিশ্বাসই করতে পারছি না। আপনার ওখানেই তো যাচ্ছিলাম।
জানো বাবা, প্রতি উইকেন্ডেই মনে হয় এই বুঝি তুমি এলে।
তাই তো, এই দেখুন, আপনি না বলতেই চলে এলাম। একটা ফোনের অপেক্ষা পর্যন্ত করিনি।
আহা বাবা, মামাকে স্মরণ করে চলে এসেছ, তোমাকে কী দিয়ে যে আদর করব, বুঝতে পারছি না। শুধু মন দিয়ে কী আদর হয়?
এ নিয়ে কথা আর না বাড়িয়ে বললাম, একা একা এখানে বসে কী করেন মামা?
তেমন কিছু না বাবা। দেশে আমাদের স্কুলের মাঠটা আর এই জাগাটায় কেমন যেন মিল খুঁজে পাই। সবই যেন একই রকম। সেই ঘাস, মাটি, গাছ, শুধু সে-ই নাই।
বলেন কি মামা! মামানি নেই? কই, কোনো দিন বলেননি তো?
বাবা, বলব আর কী। আজও নিজের মনেই এ বিশ্বাসটা ঠাঁই দিতে পারিনি।
খুব সহজেই চোখে পড়ল, এই দুই বছরে মামার শরীরটা আরও ভেঙে গেছে। ঘাসের ওপর দুজন বসে আছি। নির্ভয় শালিকেরা এখানে ওখানে। অতি বিনয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মামা, মামানি কখন মারা গেল, কীভাবে?
হু, ওই যে ক্যানসার। ধরা পড়ল অনেক দেরিতে, যখন আর কিছুই করার ছিল না। তারপর একদিন আমার কথা না ভেবেই সে মহাকালের ঘরে হিম হয়ে গেছে। দেশ থেকে আসার প্রায় পাঁচ মাস পরেই…।
এত দিন ধরে এভাবে একাই আছেন বুঝি?
কী এক ঘোরের ভেতর দিয়ে এই চলে যাচ্ছে একরকম। প্রতীক্ষার অচেনা প্রহর, হয়তো শেষ হবে কোনো একদিন। এই দেখো না, সিডনিতে সে যখন প্রথম এল, একবার এই পথে যাওয়ার সময় বলেছিল, আহা, জায়গাটা কত সুন্দর, ঠিক যেন আমাদের স্কুলের সামনে খেলার মাঠটার মতো, কত যে খেলেছি ওখানে…। আজ দেখো, এখানে এলেই ওকে যেন কাছে পাই।
আপনার ছেলেরা কোথায় মামা?
যত দূর জানি, উদয় আর হৃদয় দুজনই নর্থ সিডনিতে বাসা নিয়ে আছে। অনেক দিন কোনো যোগাযোগ নাই।
তারপর এক অচেনা দীর্ঘশ্বাসের ভেতর দিয়ে সময় কাটে। বৈকালিক সূর্যের নরম আলো একসময় মিশে গিয়ে সন্ধ্যা নামে। শালিকেরা নেই কেউ মাঠে আর। কথা হয় আরও অনেক। মায়াভরা প্রেম কাতর মন। দীর্ঘ সময় পর জড়ানো কণ্ঠে নবু মামা বললেন, বাবা, তুমি কি ওই গানটা জানো?
কোন গানটা মামা?
কোথায় যেন একবার শুনেছিলাম, মনে নেই। কেবল গানের প্রথম দুটি লাইন মনে আছে। ওই যে—
তুমি কি সেই আগের মতোই আছ
নাকি অনেকখানি বদলে গেছো
খুব জানতে ইচ্ছে করে।
গানটা শিল্পী মান্না দের। এসব গানের চর্চা এ যুগে তেমন নেই বললেই চলে। ভাগ্যক্রমে গানটা আমার জানা ছিল। গানের গলা আমার খুব ভালো না। তবু যথাসম্ভব চেষ্টা করে গাইতে শুরু করলাম। গানের মাঝে মাঝে গলা আটকে যাচ্ছিল। চোখের পাতাও যাচ্ছিল। ভিজে-মনে এক জিজ্ঞাসা উঁকি দেয়, এ পরবাসে আমরা এত অসহায় কেন…?
গান শেষে নিরুদ্দেশে চেয়ে থাকা নবু মামার ওই সেদিনের মতো রহস্যময় নীরব চেহারাটা দেখে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।
মামা, আপনার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিলাম মনে হয়।
না রে বাবা, তোমার সঙ্গে দুটো কথা বলে, অনেক দিন পর একটা শখের গান শুনে কষ্টের মাঝেও খুব ভালো লাগছে। এখন চিৎকার করে কাঁদতে পারলে মনে হয় বুকটা হালকা হতো।
কিছুক্ষণ নীরবতার পর নবু মামা বললেন, বাবা, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখানকার সবকিছু বিক্রি করে দেশে চলে যাব। একদিন হয়তো এখানে খালি ঘরে মরে পড়ে থাকব। দীর্ঘদিন কেউ জানবে না হয়তো। আর খোঁজ পেলে ছেলেরা, নয়তো এ দেশের সরকার নিয়ে যাবে আমার এত কষ্টে গড়া এই বাড়িটা।
জি মামা, এমনই তো হয়।
দেখ, জীবনে টাকা উপার্জনে অনেক সময় ব্যয় করেছি। ভালোবাসা অর্জনে কিছুই করিনি। ওই সুযোগ হয়নি জীবনে। মা-বাবা এখনো বেঁচে আছেন। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফিরে এলে মা খাইয়ে দিতেন। মায়ের বিছানায় শুয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম। জানালাটা খোলা থাকত। আঙিনার লেবুবাগানে প্রজাপতি উড়ত। ওই প্রজাপতির পাখায় ভর করে নামত সন্ধ্যা। আমার সেই শান্তির আশ্রয়টা ছেড়ে আসার পর ওই ঘুম আর আসেনি কখনো।
আকাশ ক্রমে আরও ঝাপসা হয়। অদূরে এক অচেনা গাছের ভেতর অসংখ্য অচেনা পাখির হুড়োহুড়ি। একটিমাত্র উজ্জ্বল নক্ষত্র গোধূলি লালিমার ওপর একটুকরো রুপালি ঝলমল। ঘাসগুলো যেন চেয়ে আছে বৃষ্টির আশায়। আজ মনে হয় এক পশলা বৃষ্টি অনেক শান্তির। অথচ দিগন্তজুড়ে মেঘের আভাসটুকুও নেই।