সিডনীতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের পুনর্মিলণী

সিডনীতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের পুনর্মিলণী


কাজী সুলতানা শিমি: রোববার ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সিডনীর গ্লেনউড কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার, বাৎসরিক সাধারণ সভা ও পুনর্মিলণী ২০১৭। এবছর ছিল তার ৭ম পুনর্মিলণী উৎযাপন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে বার্ষিক সাধারণ সভা দুপুর সাড়ে বারটায় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মোস্তফা আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডঃ আব্দুর রাজ্জাক। তারপর সাধারণ সম্পাদক আনিস মজুমদার বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন। তিনি প্রতিবেদনে গত এক বৎসরে  DUAAA এর কার্যক্রম বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন। এরপর তিনি নব নির্বাচিত নির্বাহী পরিষদের নাম ঘোষণা করেন এবং নির্বাহী পরিষদের যে সকল পদ শূন্য ছিল তার নমিনেশনের জন্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

এরপর সেলিমা বেগমের নান্দনিক উপস্থাপনায় দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়। শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ পর্বে প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর স্মৃতিচারন করতে গিয়ে আনন্দ ও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলা, মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হল, টিএসসি, ডাকসু- স্বপ্নের জায়গা গুলোর স্মৃতিরোমন্থনে সেদিন খুজে ফিরে হারিয়ে যাওয়া  নিজস্ব ঠিকানা। মানস মন্দিরে জমিয়ে রাখা অতুলনীয় সেইসব সোনালী দিনের কথা বলতে যেয়ে জেগে উঠে স্মৃতির অগুনতি পদচারনা, নিরন্তর স্বপ্নবোনা- সবাই মেতে উঠে এক অনির্বচনীয় অনুভবে। স্মৃতি চারনের পাশাপাশি চলতে থাকে মধ্যাহ্ন ভোজ পর্ব। সবাই ফিরে যায় সহপাঠী ও অন্যদের সাথে আড্ডা আর হাসিঠাট্টার মিলন মেলায়। জীবনের বহু পথ পাড়ি দিয়ে সেদিন যেন আবারও একটি দিনের জন্যে হারিয়ে যায় প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে ফেলে আসা দিনগুলোতে। এই পর্বের শেষদিকে  শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের  প্রতিষ্ঠাতা  এবং প্রথম বিভাগীয় প্রধান ডঃ লুৎফর রহমান।

পরের পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাফেল ড্র ও কুইজ প্রতিযোগিতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে সাজানো হয় কুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্নমালা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও স্মৃতিচারন পর্বে ডঃ জেসমিন রহমান তার মায়ের লিখা একটি কবিতা পাঠ করে উপস্থিত সবাইকে আবেগে আপ্লুত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মুগ্ধ করে রাখেন আগত সবাইকে তামিমা শাহরিন , পলাশ বসাক   এবং  মাসুদ মিথুন। স্থানীয় শিল্পী  ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এহসান আহমেদের মোহনীয় কণ্ঠে নষ্টালজিক করে তোলা গানের সুরে সবাই হারিয়ে যায় পুরানো সেই স্মৃতির  বন্ধনে।  কিছুক্ষণের জন্য হলেও তারা ফিরে পায় ফেলে আসা তারুন্যের উচ্ছল ঝলমলে ক্যাম্পাসী জীবনের দিনগুলো।  ফিরে যায় ভালোলাগা, ভালোবাসার নষ্টালজিক  আবেগে।

সেদিন শত ব্যস্ততার মাঝেও সিডনী’র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হৃদয়ের  টানে ছুটে আসেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। দিনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এক অনন্য অসাধারন দিন। সবশেষে সভাপতির সমাপনী ভাষনে জনাব মোস্তফা আবদুল্লাহ অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য যারা সময় ও শ্রম দিয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানান এবং নতুন কমিটি নির্বাচন করায় সদস্যদেরকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি”- এই স্মৃতিচারণ থেকে উদ্যোগী হয়ে ২০১০ সাল থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটির কিছু কর্মোদ্যোগী প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সিডনিতে Dhaka University Alumni  Association Australia (DUAAA) সংগঠনটি গড়ে তোলে।

প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এই পুনর্মিলণী উৎযাপন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারো প্রকাশিত হয় প্রবাসী লেখক ও কবিদের লেখা নিয়ে বর্নাঢ্য সংকলন “নানান রঙয়ের দিন গুলি”। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, ডঃ খায়রুল চৌধুরি, কামরুল মান্নান আকাশ, ডঃ জাকিয়া হুসাইন, কামরুল ইসলাম, গোলাম মাওলা ,ডাঃ শফিকুর রহমান ,হায়াত মাহমুদ, খায়রুল আলম ও সালেহ আহমেদ জামী সহ অন্যান্য আরও অনেকে। সবশেষে ফটো সেশন ও র‍্যাফেল ড্র’র মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।