নাইম আবদুল্লাহঃ গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকালে ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ‘সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি’ নামে প্রবাসীদের একটি সংগঠন প্রস্তাবিত দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ এর খসড়া সংক্রান্ত গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক প্রস্তাবিত আইনের বিষয়ে আগের কড়াকড়ি বাদ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। সংবিধান রক্ষা করে প্রবাসী নাগরিকদের যতটুকু অধিকার রক্ষা করা যায় তাই করা হবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আরও জানা গেছে, এই আইনে প্রবাসী নাগরিকদের স্থানীয় সরকার পদে নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংগঠন করার সীমাবদ্ধতাটি তুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগের ক্ষেত্রে দুই বছরের সময়সীমাও বাদ দেওয়া হচ্ছে। ফলে জন্মের দুই বছরের মধ্যে নয়, যেকোনো সময় প্রবাসীদের সন্তানরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ গ্রহন করতে পারবেন। এসব বিধান রেখে আইনটি চুড়ান্ত করা হচ্ছে।
সেমিনারে প্রবাসী ও আইনজ্ঞরা প্রস্তাবিত আইনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর এনআরবি এর চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মো. শহীদুল হক, বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসাইন হুমায়ুন, ব্যারিস্টার সিয়াম আল দীন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তোফায়েল সামী, দুবাই প্রবাসী মামুন সরকার, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মায়া নেয়াল, ফ্যাশন ডিজাইনার তহুরা চৌধুরী, নারী উদ্যোক্তা প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ।
মুল প্রবন্ধে এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, “বিশ্বের ১৫২টি দেশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ লোক বসবাস করেন। এদের কেউ নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন, কেউ স্থায়ী নিবাসী হিসেবে কাজ করছেন, এদের বেশীর ভাগ বাংলাদেশি নাগরিকত্বের অধীনে নানা দেশে কর্মজীবী হিসেবে আছেন। কেউ কেউ ৩০-৩৫ বছর যাবত বিশ্বের নানা দেশে বাস করছেন।“
তিনি আরও বলেন, “বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি দেশে অবস্থান না করায় এদের ভরণ-পোষণ, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষাসহ যাবতীয় ব্যয়ভার ও আনুসাংগিক সেবা ব্যয় থেকে বাংলাদেশ মুক্ত রয়েছে। দেশের জন্য একটি বড় সাশ্রয়। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছে, গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান, দারিদ্র কমানো ক্রয় ক্ষমতা বাড়াতে রাখছে বৈপ্লবিক ভুমিকা। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নাগরিকত্ব আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো পূনর্বিবেচনা করে প্রবাসী ও তাদের উত্তরাধিকারীদের পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লাগসই আইন দরকার। প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন কোনোভাবেই প্রবাসীদের জন্য প্রতিরোধমূলক হওয়া উচিত নয়। তাদের অবদান ও অংশগ্রহণ সমাজের কল্যাণে অর্ভ্যথনামূলক হওয়া উচিত।“
উল্লেখ্য, দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ২০১৬- এর খসড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হয়। এটি আইনটি বর্তমানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে যাছাইয়ের জন্য আছে। সেখান থেকে মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানোর কথা রয়েছে। মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হলে তা সংসদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
এই আইনের বিভিন্ন অংশ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা তাদের নাগরিকত্বের বিভিন্ন অধিকার ক্ষুন্ন হবে আশংকায় ক্ষোভ প্রকাশ সহ বিভিন্ন প্রতিবাদ সভা ও পত্র পত্রিকায় প্রতিবাদ করে আসছিলেন। ইতিমধ্যে নাগরিক হিসেবে নিজ দেশে নিগৃহীত হওয়ার আশঙ্কায় অনেক প্রবাসী দেশে বিনিয়োগও কমিয়ে দিয়েছিলেন।