ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অস্ট্রেলেশিয়ার প্রথম পুনর্মিলনী

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অস্ট্রেলেশিয়ার প্রথম পুনর্মিলনী

প্রেস প্রকাশনা:

গত ১লা ডিসেম্বর ২০১৮ রবিবার সিডনীতে হয়ে গেল “ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (DMC) Alumni অস্ট্রেলেশিয়া”-এর সর্বপ্রথম পুনর্মিলনী। আর এই আয়োজনে অংশ নিতে সারা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং নিউজিল্যান্ড থেকে DMC-এর সাবেক শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়েছিল সিডনীতে। দিনটি ছিল সবার জন্য অত্যন্ত আনন্দ আর আবেগপূর্ণ। সারাদিন ব্যাপী সবাই মেতে ছিল অনাবিল আনন্দ, হাসি-ঠাট্টায় আর পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থনে। বিশেষ করে বহু বছর পরে বন্ধু, সহপাঠী আর সহকর্মীদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ আর সারাদিন একসাথে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে সবাই উচ্ছাসে ভেসে গিয়েছিল। কারো কারো সাথে DMC ক্যাম্পাস ছাড়ার পর এই প্রথম দেখা! সত্যিকার অর্থেই এটি হয়ে উঠেছিল DMC মিলনমেলা।

Breakfast Cruise in Sydney Harbour:

দিনটি শুরু হয়েছিল পৃথিবী বিখ্যাত সিডনী harbor-এ ব্রেকফাস্ট cruise দিয়ে। সবাই বিপুল উৎসাহে দিনের প্রারম্ভেই জড় হতে শুরু করে harbor-এর “King Street Wharf”-এ। সবার জন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিল “DMC Alumni Reunion অস্ট্রেলিয়া” monogram নামাঙ্কিত সুদৃশ্য টি শার্ট। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে cruise শেষ হয় দুপুর ১২টার দিকে। DMC ব্যাচ K-৩০ থেকে K-৬৩ পর্যন্ত মোট ১৪৫ জন DMCian এই cruise-এ অংশগ্রহণ করে। Harbor-এর নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার ফাঁকে চলতে থাকে বাহারি buffet ব্রেকফাস্ট আর চা-কফি আস্বাদন। মনোরম আবহাওয়ায় পানির মৃদুমন্দ দোলায় দুলতে দুলতে সবাই ফিরে যায় তারুণ্যের দুর্নিবার সেই দিনগুলোতে। গান, music, চুটকি, পুঁথিপাঠ, স্মৃতি চারণ- কোনো কিছুই বাদ থাকে না। আর “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম……..” – গানের সাথে সবার স্বতঃর্স্ফূর্ত উদ্দাম নাচ অগ্রজ অনুজ সবাইকে একাকার করে দেয়। এই আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যায় সবাই এক টি শার্ট পরে অপেরা হাউসকে পেছনে রেখে ছবি তোলায়।

Cultural evening & Gala dinner:

বিকেলে ছিল আয়োজনের মূল পর্ব- gala dinner এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। DMCian এবং তাদের পরিবারের পরিবেশনায় সাজানো হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা শেষ হয়েছিল অতিথি শিল্পীর পরিবেশনায়। বিকেল ৫টার মধ্যেই DMCian এবং তাদের পরিবারের আনাগোনায় অডিটোরিয়াম হল পূর্ণ হয়ে যায়। পূর্ব নির্ধারিত ড্রেস কোড অনুযায়ী ছেলেরা নীল অথবা কালো স্যুট আর মেয়েরা নীল অথবা লাল শাড়ী পরে সুসজ্জিত বেশে এসে অনুষ্ঠানের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। সবাই সুশৃঙ্খল ভাবে রেজিস্ট্রেশন করে হলে প্রবেশ করে একটি বর্ণিল স্যুভেনির “ঐক্যতান”, বিশেষ ভাবে তৈরী DMC monogram, ব্যাচ নম্বর সহ name tag এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী পিঠা হাতে নিয়ে।

দুইজন মানুষের উপস্থিতি পুরো অনুষ্ঠানকে আরো বর্ণময় এবং আলোকিত করেছিল। একজন হলেন- অধ্যাপক এম এ টি সিদ্দিক, প্রাক্তন Director General, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং প্রখ্যাত সার্জন (K-৬, ১৯৫২-তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পদার্পন); আরেকজন ডাঃ নীলুফার ডালিয়া (K-২২, ১৯৬৮-তে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পদার্পন).

মূল অনুষ্ঠানের পূর্বে সবাই মেতে উঠেছিল আড্ডায় আর কলাকুশলী বিনিময়ে। যারা সকালের cruise-তে আসতে পারেনি তারা আফসোস করলেন cruise -এর বর্ণনা শুনে। কিন্তু এতদিন পরে বন্ধুর সাহচর্য পেয়ে তা ভুলে যেতেও সময় লাগলো না। অগ্রজ আর অনুজ DMCian-রা সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল; অনুষ্ঠানস্থলটা যেন রূপান্তরিত হয়েছিল এক টুকরো DMC campus-এ- শহীদ মিলন চত্বর, ডাঃ ফজলে রাব্বি হল আর ডাঃ আলিম চৌধুরী হল। সবাই তাদের সহপাঠীদের সাথে মঞ্চে উঠে ছবিবন্দী হলেন DMC First Reunion উপলক্ষ্যে নির্মিত ব্যানারকে পেছনে রেখে। এরই ফাঁকে entree পরিবেশন করা হয় প্রত্যেক টেবিলে।

বিকেল ৬টায় অনুষ্ঠানের তিন সঞ্চালক- ডাঃ ফাইজুর রেজা এমন (K-৫৩), ডাঃ রোকেয়া ফকির কেয়া (K-৫৩) আর ডাঃ ইকবাল হোসেন (K-৫২) মঞ্চে এসে মূল অনুষ্ঠান শুরু করেন। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল তাদের সাবলীল আর প্রাণবন্ত উপস্থাপনা। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাঃ মইনুল ইসলাম, Joint Convener, DMC first Reunion Committee. এরপর মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন DMCian আর তাদের সন্তানেরা। অধ্যাপক এম এ টি সিদ্দিক এবং ডাঃ নীলুফার ডালিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা আর বরণ করেন যথাক্রমে ডাঃ রশিদ আহমেদ (K-৩৬), Convener, ও ডাঃ মইনুল ইসলাম (K-৪৩), Joint Convener, DMC first Reunion Committee. এই Reunion উদযাপন করার জন্য বিশেষ কেক বানানো হয়েছিল যা ডাঃ সিদ্দিক এবং ডাঃ নীলুফার কাটেন। তারপরই সকল DMCian-কে মঞ্চে আহবান জানিয়ে ফ্রেমবন্দি করা হয় group ছবি।

অনুষ্ঠানের মূল চমক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয় মারিয়াম চৌধুরীর (ডাঃ ফয়সাল চৌধুরী K-৫৬-এর কন্যা) পবিত্র কুরআনের একটি সুরা পাঠের মাধ্যমে। তিন ভাই বোন- নাশমিয়া, নুয়াইরা আর আহনাফের (ডাঃ তাসকিন আসমা আনজুমের K-৫৪ সন্তান) ছড়া গান সবার মন ছুঁয়ে যায়। এরপর তিথির কণ্ঠ আর নাহিয়ানের গিটারের সমন্বয়ে তিথির গান সবাইকে মুগ্ধ করে। দলগত গানে অংশগ্রহণ করে সিডনি, অন্যান্য অঙ্গ রাজ্য এবং নিউজিল্যান্ড থেকে আগত DMCian ও তাদের পরিবারের সদস্য।

একে একে একক সঙ্গীত পরিবেশন করে ডাঃ মুজাহিদ শোভন (K-৫৬), ডাঃ সামিয়া আরেফিন (K-৫৪), ডাঃ খালেদুর রহমান (K-৩৬), ডাঃ তাসকিন আসমা আনজুম আরা (K-৫৪) এবং ডাঃ শাহনাজ পারভীন (K-৪৩). বলাই বাহুল্য, প্রত্যেকের গান সবার মনোযোগ কেড়ে নিতে সক্ষম হয়। তাসমানিয়া থেকে আগত ডাঃ রুহি দাস দেবনাথের (K-৩৪) বাঁশি সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে।

ডাঃ ফজলে রাব্বির (K-৪৭) স্বরচিত কবিতা তার এবং ডাঃ জোবাইদা রত্নার (K-৪৯) কণ্ঠে যেন জীবন্ত হয়ে সবাইকে স্মৃতির বেড়াজালে আটকে ফেলে। সেখান থেকে বেরোনো আরো কঠিন হয়ে যায় যখন ডাঃ জেসি চৌধুরী (K-৩৫) (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি NSW)-এর পরিচালনায় কয়েকজন DMCian তাদের কলেজ জীবনের কিছু চিত্তাকর্ষক স্মৃতি সবার সাথে ভাগাভাগি করেন। ডাঃ মীর জাহান মাজু (K-৪০) এবং তার স্ত্রী ডাঃ ফাহিমা সাত্তারের ঢাকাইয়া ভাষায় রচিত ছোট্ট নাটিকা সবাইকে নির্মল বিনোদন সরবরাহ করে। ডারউইনের ফাইরুজ ফারজানা (ডাঃ শামসাদ জাহান K-৪৫-এর কন্যা) -এর নৃত্য সবাইকে বিমোহিত করে।

ডাঃ রশিদ আহমেদ, convener তার বক্তব্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সকলকে যাদের সহযোগিতায় পুনর্মিলনীর সফল আয়োজন সম্ভব হয়েছে। তিনি যোগদানকারী সকল DMCian-কেও ধন্যবাদ জানান, বিশেষ করে যারা অনেক পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং নিউজিল্যান্ড থেকে এসেছে।

সবাই gala dinner ভীষণ উপভোগ করে মাঝের বিরতিতে।

অতিথি শিল্পী শুভ্রা মুসতারীম ও তার দলের পারফরমেন্স দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

আগামী বছর আরেকটি reunion আয়োজন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে মূল অনুষ্ঠানটির ইতি টানা হয়।

এই পুনর্মিলনী আয়োজনের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত convening কমিটি গঠন করা হয়:

Convener: ডাঃ রশিদ আহমেদ (K -৩৬),

Joint Convener: ডাঃ মইনুল ইসলাম (K-৪৩)

Members:

ডাঃ জেসি চৌধুরী (K-৩৫), ডাঃ জেসমিন শফিক (K-৩৫), ডাঃ খালেদুর রহমান (K-৩৬), ডাঃ মীর জাহান মাজু (K -৪০), ডাঃ শাহনাজ পারভীন (K-৪৩), ডাঃ জান্নাতুন নায়ীম (K-৪৫), ডাঃ মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (K-৪ ৭), ডাঃ ইকবাল হোসেন (K-৫২), ডাঃ রোকেয়া ফকির কেয়া (K -৫৩),

ডাঃ ফাইজুর রেজা ইমন (K-৫৩), ডাঃ মোহাম্মদ শাহরিয়ার (K-৫৪), ডাঃ মুজাহিদ হাসান শোভন (K-৫৬),

ডাঃ ফয়সাল চৌধুরী (K-৫৬), ডাঃ গোলাম খুরশিদ তাপস (K-৫৯)