ফাল্গুনেই ভ্যালেনটাইন

ফাল্গুনেই ভ্যালেনটাইন

সেলিনার মনে বড়ই সাধ জাগিতেছিলো তার স্বামী এক তোরা ফুল হাতে এসে বলবে “বসন্তের শুভেচ্ছা”, আর একখানা গাদা ফুল তুলে নিয়ে খোঁপায় গুঁজে দিয়ে বলবে “এইতো তুমি আমার বসন্ত পাখিটা…”।
আকরাম সাহেব ঘরে ঢুকলেন প্রায় পাঁচটা নাগাদ, “মিলির মা চট জলদি মাছগুলো ফ্রিজ এ তোলো তো, আর ওই টকটকে লাল শাকগুলো কোন ভাগ্যে পেলাম আজ জামান ভাইয়ের দোকানে…..আহা কি সুন্দর তাকিয়ে আছে আমার দিকে!! তুমি কিন্তু দেরি করোনা; এক্ষুনি রেঁধে ফেলো”। আকরাম সাহেব এর প্রস্থান গোসলখানার দিকে।
অগত্যা সেলিনার আর কি করা। মনের দুঃখে বাসন্তী শাড়ীটা বদলে তার দৈনন্দিন পাজামাতে ফিরে গিয়ে লালশাককে তার কল্পনার হলদে ফুল ভেবে মনের মাধুরী মিশিয়ে রেধে নিলো।
আকরাম সাহেব: মিলির মা খিদায় আজ হাত পা কাঁপছিলো হয়তো ডায়েবেটিক টা বেড়ে গেছে। আমার শরীর আরো খারাপ লাগে অফিসের যত্তসব সাদা পাঠাগুলার ভ্যালেনটাইন না কি সব ভালোবাসা দিবস টিবস নিয়ে কথা বার্তা শুনলে। যত্তসব ফালতু ব্যাপার সেপার। বাঙালি ছোরাটাও পাঠাগুলার পা চাটে আর বলতে থাকে ওর বৌকে কিসের নাকি ডায়মন্ড এর পেন্ডেন্ট দিবে আর ডিনার এ নিয়ে যাবে….যত্তসব ফহির্নীর দল। মনে হয় বাপের জন্মে কোনোদিন হীরার নাম ও শুনে নাই আর রেস্টুরেন্ট এ গিয়া খাওয়ার সাধ্য হয়নাই….যত্তসব পাঠার দল। মেজাজটা দুইশ ডিগ্রী হয়ে গেছে তখন থেকেই। একি যন্ত্রনা এই যুগে? আমার বাপ্ দাদাদের কে তো এমন ঝামেলায় পড়তে দেখিনাই।
সেলিনা: মিলির বাবা কি করবেন আর মাথা গরম করে। এখন তো সবাই এইসব দিবস পালন করে। বাংলাদেশেও দেখেন না সবাই মাথা ফুল দিয়ে সাজায়, কত আনন্দ করে আর আমরা এই দেশে এসে লাল শাক রান্দী…..কপাল আমার। সে যাক শোনেন আপনার বন্ধু মিলন আর তার আরো কয়েকজন বন্ধুরা ভ্যালেনটাইন ডে উপলক্ষে একটা গানের আসর বসাইতেসে আমাদেরকেও ফেইসবুক গ্রুপ এ দাওয়াত দিসে। আপনি কি যাবেন ঐখানে?
আকরাম সাহেব: অবশ্যই যাবো। মিলন আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর ওর গানের আসর সেই রকম হবে।
সেলিনা: কিন্তু আপনি না এইসব ভ্যালেনটাইন ডে উদযাপন পছন্দ করেন না?
আকরাম সাহেব: আরে কে বললো? পছন্দ তো করিনা ঐসব পাঠাগুলা যখন বেশি মাস্তি দেখি…..একদম গা জ্বইলা যায়। আর মিলনের ভ্যালেনটাইন তো একদম দেশি স্টাইল এ হইবো….. আমার আরো কিসু বন্ধু আসবো। তুমি কিন্তু সুন্দর কইরা সাজ গোজ করবা। কয়দিন আগে যে তোমার মা পাঠাইসিলো হলুদ শাড়ী টা ঐটা কিন্তু কালকে পড়বা।
সেলিনা: আচ্ছা কর্তা আমিতো ওই শাড়ী টাই আজকে পরে বসে ছিলাম আপনার সঙ্গে আমাদের ভ্যালেনটাইন মানে পয়লা ফাল্গুন কে বরণ করার জন্য। আপনি তো ফিরেও তাকালেন না। তাই মনের দুঃখে এই কালো পাজামা পরে আপনার প্রিয় লালশাক রেধে আপনার সঙ্গে পয়লা ফাল্গুন উদযাপন করতেসি!
আকরাম সাহেব : কি বল তুমি? এত সুন্দর জামদানিটা তুমি ঘরে পড়ছো আজকে? তাও আবার আমার জন্য পয়লা ফাল্গুনে? এইখানে আবার ফাল্গুন কই? এইটা তো ভরা গ্রীষ্ম। সে যাক ভালো করসো শাড়ীটা তুইলা রাখছো নাইলে এতক্ষনে নোংরা হইয়া যাইতো।
সেলিনা ততক্ষনে বাকরুদ্ধ আকরাম সাহেব এর কথা বার্তায়। কোথায় তার কল্পনার ফুলের তোরা হাতে আকরাম সাহেব এই পয়লা ফাল্গুনে আর কোথায় এই Ausbangal মিলির বাবা। ক্ষতি কি পয়লা ফাল্গুন এবং ভ্যালেনটাইন দুটোই বরণ করলে? কিন্তু আকরাম সাহেব এর অফিস এর সহকর্মীদের প্রতি ঘৃণা ভ্যালেনটাইন ডে উদযাপন এর ক্ষেত্রে এবং অতি আগ্রহ একই উদযাপন তার বন্ধুদের সাথে…..সেলিনা কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। তার স্বামীর এই জটিল মনোভাব তার পক্ষে বোধগম্য হবেনা। সেলিনা দ্রুত আগামী কালের প্রস্তুতি হিসাবে কিছু কালোজাম বানাতে ব্যাস্ত হয়ে যায়। আর ভাবতে থাকে এরপরের ফাল্গুনে সে ঘটা করে পার্টি দিবে তার কিছু প্রিয় বান্ধবীদের জন্য। নিশ্চয় ই সে এক তোরা ফুল সেদিন পাবে।

আমরা যারা বিদেশে থাকি তারা সত্যি কেমন যেন হয়ে যাই ধীরে ধীরে। অথচ এখানেও বসন্তের গন্ধ পাওয়া যায়, তা হতে পারে কল্পনার আবেশে কিংবা সত্যিই এখানকার হাওয়ায় সে গন্ধ লুকিয়ে থাকে। আমি ঠিক সেই গন্ধ পাই আমার এই নতুন মাটিতে আর ফিরে তাকাই আমার সেই দেশে।

মলি সিদ্দিকা

১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯।