সিডনির ইঙ্গেলবার্নে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন!

সিডনির ইঙ্গেলবার্নে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন!

সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনক্, গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি রবিবার ২০১৯ বিকাল বেলায় সিডনির ইঙ্গেলবার্নে মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। অনুষ্ঠান শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বেড়ে উঠা কিশোর কিশোরীদের ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের উপর লেখা বাংলা প্রবন্ধ পাঠের মধ্য দিয়ে। ভাষা শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা ভাষার ইতিহাস ও বাংলা শিক্ষার উপর গুরুত্ব তুলে ধরা এবং বাংলা শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলাই আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য।

মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল শিশুকিশোরদের একুশ ও বাংলা ভাষাভিত্তিক গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি ও দলগত সংগীতের পরিবেশনা।

সংগঠনের সভাপতি অজয় দত্ত শুরুতেই সিডনি বাঙালী কমিউনিটির সকল সদস্যকে সারা বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং বিদেশের মাটিতে বাংলা ভাষা ও সংষ্কৃতি ধরে রাখার জন্য নতুন প্রজন্মের শিশুকিশোরদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

অস্ট্রেলিয়াতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের সংগঠন কিশোর সংঘ। মেধাবী কিশোর-কিশোরীদেরকে নিয়ে এই দলটির সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সীমা আহমেদ। তারা একক গান, আবৃত্তি, নৃত্য ছাড়াও পরিবেশন করে দলগতভাবে গণসংগীত ও দেশাত্মবোধক গান। সাদা/কালো দেশীয় সজ্জায় তাদের পরিবেশনা সবার মন ছুঁয়ে যায়। এই পরিবেশনায় একক ও দলীয় গানে ছিল মোলতাজাম হাবীব, আনুভা আহমাদ , রিডা হক, মুনতাহার হক, মাহিমা বিশ্বাস, ফাহমিদা পাঠান, সাফিনা জামান,পৃথিবী তাজওয়ার,জাফরী আহমাদ ,ফারিস্তা কবির,তাহানী জাহান সিদ্দিকী, সালিহা তাসনিম সিতুলী,মালিহা তাসনিম প্রীতুলী। একক কবিতায় ছিল ঐহিক তারিক,মাহিমা বিশ্বাস ও জাফরী আহমাদ এবং নৃত্যে ছিল সারিকা ইয়াসমিন চৌধুরী। কিশোর সংঘের গিটারে সাহায্য করে ঈশান তারিক।

নৃত্য শিল্পী অর্পিতা সোম চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে শিশু ও কিশোরীদের চৌকস নাচের দল, একটি চমৎকার পরিবেনায় ফুঁটিয়ে তুলে ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই দলে ছিল মেঘা দত্ত, সাফাইয়া, নীড়, সায়মা, মানহা ও সামারা। এই দলটির বৈচিত্রময় সাজসজ্জা এবং দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনা সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

সিডনিতে পরিচিত শিল্পীদের মধ্যে আবৃত্তিকার জেরিন আফরিন সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি উপহার দেন এবং মন মাতানো নৃত্য উপহার দেন নৃত্যশিল্পী স্মীতা বড়ুয়া। অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পরিবেশনায় ছিল আতিক হেলাল, আরেফিনা মিতা এবং সীমা আহমেদের নেতৃত্বে দলগত পরিবেশনায় “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…..” এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।
সাদা/কালো দেশীয় পোশাকের সমন্বয়ে সিডনীর দূর দূরান্ত থেকে আসা সকলকে দেখে মনে হয়েছে ঢাকার শহীদ মিনারের একুশের চত্বর।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন অনুলাক চান্টিভং এম.পি। তিনি তার বক্ত্রতায় বলেন পৃথিবীতে ভাষার জন্য বাঙালিরা রক্ত দিয়ে প্রমান করে দিয়েছে যে মায়ের ভাষার গুরুত্ব কত; তাই আজ একুশে ফেব্রুয়ারিকে উনেসকো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। অস্ট্রেলিয়াতে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য এবং সিডনির বুকে বাংলাদেশের আদলে প্রথম শহীদ মিনার (International Mother Language Day Monument ) স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার জন্য সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটি ইনকের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করেন। এই সংগঠনের আবেদন অনুসারে ২০১৭ অর্থ বছরে শহীদ মিনার স্থাপনার জন্য অর্থ (৩৫৬১৬ ডলার) বরাদ্দের কথাও স্মরণ করেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন লিবারেল পার্টির থেকে বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান এমপি প্রতিদ্বন্দ্বী জহরুল কাজী,অস্ট্রেলিয়া আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা গামা আব্দুল কাদির,সভাপতি সিরাজুল হক, সিডনি আওয়ামীলীগের সভাপতি গাউসুল আলম শাহাজাদা , সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আজাদ এবং সংগীত শিল্পী মিতা হক। প্রত্যেক বক্তাই দীর্ঘদিন ধরে শিশুকিশোরদের নিয়ে মাতৃভাষা ভিত্তিক শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানআয়োজনের জন্য, সিডনি বাঙ্গালী কমিউনিটির এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানান।

এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিডনির বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক সহ অনেক গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে তবলায় ছিলেন সাকিনা আক্তার এবং শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন আত্বাবুর রহমান। আপ্যায়নে ছিলেন খশবু রেস্টুরেন্ট ।পোশাক এবং সাজসজ্জায় সহায়তা করেন বিলকিস খানম পাঁপড়ি। প্রচারে সাকিনা আক্তার, মঞ্চ সজ্জায় শাহ জামাল বাদল ও আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন পূরবী পারমিতা বোস। সিডনি বাঙালী কমিউনিটি ইনকের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন সেলিমা বেগম।