হ্যাপি আখন্দ অথবা আবার এলো যে সন্ধ্যা’র নেপথ্য গল্প

হ্যাপি আখন্দ অথবা আবার এলো যে সন্ধ্যা’র নেপথ্য গল্প

অনলাইন ডেস্ক,  ২৪ মে ২০১৫

হ্যাপী এক এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা ও কিংবদন্তি গায়কের নাম। পুরান ঢাকার পাতলা খান লেনে ১৯৬০ সালের ১২ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তার ছিল সহজাত বিস্ময়কর সঙ্গীতপ্রতিভা। খুব ছোটবেলা থেকেই হ্যাপির গানের কণ্ঠ ও তার সঙ্গীতায়োজন দেখে অনেকটাই অবাক হয়েছিলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় সব শিল্পী। শুধু সেই সময়ের শিল্পীরা নন, এ সময়ের শিল্পীরাও তার সঙ্গীতপ্রতিভার প্রশংসা করছেন। সঙ্গীতের প্রতি তার ভালোবাসা এবং স্রষ্টা প্রদত্ত কিছু গুণাবলি ও দক্ষতার সুবাদে অল্প কিছুদিনের মধ্যে হ্যাপি হয়ে ওঠেন সঙ্গীতের নয়নমণি। গিটার, পিয়ানো, তবলা যা-ই বাজাতেন, এক অদ্ভুত সুরের ঝংকার সৃষ্টি করত তার সঙ্গীত। পৃথিবীর নানা ধাঁচের সঙ্গীত শুনে শুনে ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুণী শিল্পীর সানি্নধ্যে অর্জিত সঙ্গীতের নানা জ্ঞান অকাতরে বিলিয়ে গেছেন এই সঙ্গীতশিল্পী। সেই সঙ্গে সঙ্গীতে নতুনত্ব আনতে হ্যাপি তার উদ্ভাবনী শক্তিকে সব সময় কাজে লাগাতেন। মাত্র ১০ বছর বয়সেই তার হাতে গিটারের তাল ধরা দেয়। শুরুর দিকে হ্যাপি আখন্দ তার বড় ভাই লাকী আখন্দের সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন।
হ্যাপির গানের হাতেখড়ি হয় শৈশবেই। যেন অজান্তেই তিনি গানের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে নেন। সঙ্গীত পরিবারে জন্ম নেওয়ার ফলে বড় ভাই লাকী আখন্দের কাছ থেকেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতজ্ঞান অর্জন করেন হ্যাপি। বাবাও ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী। বড় ভাই লাকী আখন্দ গিটার বাজাতেন। চুপিচুপি হ্যাপি সেই গিটারের শব্দ শুনে শিখতেন। এরপর আড়ালে গিটারে সেই তাল বাজাতেন। একদিন গিটার বাজাতে গিয়ে লাকী আখন্দের কাছে ধরা পড়ে যান হ্যাপি। এরপর বিভিন্ন কনসার্টে লাকীর ব্যান্ডের সঙ্গে তিনি তবলা বাজাতেন। পরে হ্যাপি ‘উইন্ডি সাইড অব কেয়ার’ নামে একটি ব্যান্ড গড়েন। এতে তিনি গিটার বাজানোর পাশাপাশি গানও গাইতেন। এভাবেই এগিয়ে যান হ্যাপি।
ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই হ্যাপি আখন্দ বিভিন্ন মঞ্চ মাতিয়েছেন। তখন থেকেই তিনি ব্যান্ডের জন্য গান লেখেন ও সুর করেন। ১৯৭৫ সালে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ গানটির সঙ্গীতায়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন প্রয়াত এ শিল্পী। এটি লিখেছিলেন এসএম হেদায়েত, সুর করেন লাকী আখন্দ। লাকীর বক্তব্যে ‘লাল শাড়ি পরে বেদে মেয়েরা হেঁটে যাচ্ছে, আকাশে রঙিন মেঘ। আমি হেদায়েতকে বললাম একটা গান লিখ না। ওর সঙ্গে সব সময় একটা ডায়েরি থাকত। আমাকে বলল কী লিখব এখন! কিছুক্ষণ যেতে যেতে আমাকে বলল দোস্ত একটা লাইন পাইছি আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দুজনে। আমি বললাম তাড়াতাড়ি ডায়রিতে লিখে ফেল। তারপর আরো কয়েকটা লাইন লিখল, আমার ভালো লাগল না। একটু পরে হেদায়েত বলল দোস্ত পাইছি— চলো না ঘুরে আসি অজানাতে … যেখানে নদী এসে থেমে গেছে। এটা ছিল নওগাঁয় জমিদার মামুনলাল চৌধুরীর বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া এক বিকেলের ঘটনা। পরে গানটি হ্যাপির কণ্ঠে প্রচার হয় বিটিভিতে।

তার ভাষায় ‘ভাড়াটে বাড়ি’র ‘আজ যেন শুধু মনে হয়’ গানটির জন্য প্রথম উপার্জন করি মাত্র ৪০ টাকা। এটাই আমার জীবনের প্রথম আয় ছিল। প্রথম পুরস্কার প্রাপ্তিটি সবার কাছেই ভালো লাগার একটি ক্ষণ।
হ্যাপি আখন্দের গাওয়া জনপ্রিয় গানের তালিকায় আছে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, ‘খোলা আকাশের মতো’, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝরনা’, ‘এই পৃথিবীর বুকে’, ‘স্বাধীনতা তোমায় নিয়ে’, ‘তোমায় পেয়ে ফুরালো’ ইত্যাদি। এ ছাড়া হ্যাপির সঙ্গীতে ফেরদৌস ওয়াহিদের ‘এমন একটা মা দে না’, প্রয়াত ফিরোজ সাঁইয়ের ‘ইশকুল খুইলাছে রে মাওলা’ গানগুলো মানুষের মুখ মুখে এখনো ফেরে।

সুত্রঃ (somewhereinblog.net,২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩)