ফজলুল বারী:অনেকদিন ধরেই কথাটি বলে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলো, ‘আমি দুর্নীতি করিনা কাউকে দুর্নীতি করতে দেবোও না। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা হয়তো বিষয়টিকে তাদের মতোই কথার কথা মনে করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা যে তাঁর কাজে কথায় কতোটা সিরিয়াস এর প্রমান নিতে শুরু করেছেন চলতি দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে। গত নির্বাচনী ইশতেহারে তাঁর নতুন দুটি অঙ্গিকার ছিল। তাহলো গ্রাম হবে শহর এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। শেষেরটি দেশের জনগনের কাছে বেশি প্রার্থনার। কিন্তু এরমাঝে তিনি এবং দেশের মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন এ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনেকটা যেন ‘সর্ব অঙ্গে ব্যথা হাত দেব কোথা’! কিন্তু এই অভিযান তাকে চালাতেই হবে। নতুবা তিনি দেশের মানুষের আশাভঙ্গের কারন হবেন। আবার এ অভিযান অব্যাহত রাখতে গেলে তাঁর জীবনও যে ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে পারে সে আশংকার কথাও এ লেখায় ব্যাখ্যা করবো।
যতোটা জেনেছি তাহলো দলে শুদ্ধি অভিযানের জন্যে অনেক দিন ধরেই গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটা কথা তিনি প্রায় বলেন, তাহলো ‘আমারতো চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই’। বারবার শুনতে শুনতে কথাটি অনেকের হয়তো খারাপ লাগতে পারে। কিন্তু আবারও তিনি প্রমান দিচ্ছেন, বাস্তবে শেখ হাসিনা যা বলেন তা মিন করেন। আর এটিতো তাঁর সেকেন্ড লাইফ। ১৯৭৫ সালের পনের আগষ্টের রাতে তিনি এবং তাঁর বোন শেখ রেহানা যদি দেশে থাকতেন তাহলে দু’জনেই নির্ঘাত মারা পড়তেন। এরপর জার্মানি এবং ভারতে শরণার্থী জীবন কাটিয়েছেন দুই বোন। অনেক কষ্টে তারা ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। আর্থিক কারনে লন্ডনে ছোটবোন রেহানার বিয়ের অনুষ্ঠানেও শেখ হাসিনা যেতে পারেননি। অথচ মা-বাবা-ভাই সবাইকে হারিয়ে হাসিনা তখন রেহানার শুধু বড়বোন নন, অভিভাবকও।
লন্ডনে শেখ রেহানার প্রথম সংগ্রামের দিনগুলোর বৃত্তান্ত তাঁর প্রতিবেশীদের কাছে শুনেছি। গাড়ি না থাকায় চলাফেরা করতেন বাসে-ট্রেনে। থাকতেন সাধারন ভাড়া বাড়িতে। ওই অবস্থায় তাঁর দুই সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানদের ভরনপোষনের ব্যয় সামাল দিতে তখন তাঁকে অডজবও করতে হয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের নিহত জনকের দুই কন্যা শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা ছেলেমেয়েদের এমনভাবে তৈরি করেছেন যে তারা বিদেশে ভালো চাকরি করে খাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বঙ্গবন্ধু দুহিতা শেখ রেহানার মেয়ে এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি। পরপর দু’বার তিনি এ পদে বিজয়িনী। রেহানার ছেলে-ছেলের বৌ বাংলাদেশে জাতিসংঘের চাকুরি করেন। শেখ হাসিনার দুই সন্তান জয়-পুতুল দু’জনেই যার যার পড়াশুনায় প্রতিষ্ঠিত। ১৯৮৮ সালে এরশাদ চট্টগ্রামে, ২০০৪ সালে খালেদা জিয়া ঢাকায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেন। দুটি ঘটনাতেই মানবঢাল তৈরি করে নেতাক র্মীরাই তাঁর জীবনরক্ষা করেন। অতএব এটিতো সেকেন্ড লাইফই।
এরশাদ আমলে ও পরে বিরোধীদলের নেত্রী থাকার সময় পেশাগত কারনে তাঁর কার্যক্রম যখন অনুসরন করতাম তখন শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া দুই নেত্রীর জীবনযাপন স্টাইল জানারও চেষ্টা করতাম। ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার বাড়িতে প্রথম যেদিন যাই, বাহাউদ্দিন নাছিমেরও তখন বয়স কম। আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে শুকনো করে রান্না করা কচুরমুখির তরকারি হাড়ি হা করে দেখিয়ে বলেন, তাদের সঙ্গে নেত্রীও এই খাবার খান।
নাছিমের অনুরোধে আমিও প্লেট ধুয়ে ভাত আর ওই তরকারি দিয়ে খেতে বসলে ওখানে শেখ হাসিনা চলে আসেন। আমাকে প্রথম দেখে ওই তরকারিতে ভাত খাচ্ছি দেখে তিনি বেশ অপ্রস্তুত-লজ্জিত হন। আমি পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলি রান্নাটা খুব সুস্বাদু হয়েছে আপা। এরপর বললাম টুঙ্গিপাড়ায় প্রথম যখন বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে যাই সে বাড়ির কেয়ারটেকার বৈকুন্ঠদা আমাকে ডিম ভাজি করে ভাত খেতে দিয়েছিলেন। সাধারন সুতির শাড়িপরা নেত্রী তখন আরও গল্প শুনতে বড়বোনের মতো পাশে বসেন। তখনও তিনি ভোরবেলা তাহাজুদের নামাজ পড়ে কোরান তেলোয়াত করে দিন শুরু করতেন। এখনও তাই।
তখনও আমাদের খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি পর্যন্ত যাবার সুযোগ ছিলোনা। ধানমন্ডির ২৭ নাম্বার সড়কে তাঁর একটি অফিস ছিল। এরপর কাকরাইলে মোরশেদ খানের একটি বাড়িতেও তার জন্যে একটা অফিস করা হয়। খালেদা জিয়া যখন এসব অফিস আসতেন তখনই জেগে উঠতো বিএনপি নামের দলটি। খালেদা বাড়ি চলে যাবার পর আবার ঘুমিয়ে পড়তো। ১/১১’র সময় প্রথম দিকে খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িতে গৃহবন্দী করা হয়েছিল। তখন যে সব গোয়েন্দা তাকে অনুসরন করতেন তাদের একজনের একটি তথ্যে চমকে যাই। ভারতীয় সিরিয়ালের পোকা দর্শক ছিলেন খালেদা জিয়া। এসব সিরিয়াল দেখে দেখে অনেক রাতে অথবা ভোরের দিকে ঘুমাতেন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ারও ছিল এমন জীবন রুটিন। যেদিন যে সিরিয়াল দেখতে পারতেননা সেটি তাঁর জন্যে পরে দেখার জন্যে রেকর্ড করে রাখা হতো। এরজন্যে খালেদা সকালে দেরিতে জাগতেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কোন কর্মসূচিতেই তিনি সময়মতো পৌঁছতে পারতেননা।
আর শেখ হাসিনার দিন শুরু হতো তাহাজুদের নামাজের সময়। আর্লি বার্ড হিসাবে তাঁর কর্মদিবসটিও তাই শুরু থেকে অনেক বড়। আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠন সমূহের নেতাকর্মীরা মুখে সারাদিন ‘নেত্রীই ঠিক নেত্রীই ঠিক’ এ কথা মুখস্ত বললেও এদের কেউ কোনদিন শেখ হাসিনার জীবনসূচি অনুসরন করেননি। শেখ হাসিনা কখনো দুর্নীতি করেননি। আর তাঁর মাথা বেচে ফুলে ফেঁপে ওঠা নেতাকর্মীদের দুর্নীতি লুটপাটের গোয়েন্দা রিপোর্ট হাতে পেয়ে ক্ষিপ্ত প্রধানমন্ত্রীর নতুন চেহারা দেখে দলীয় দুর্নীতিবাজরা শুধু ভয়ই পাননি, উল্টো তাকে ‘এই হয়ে যাবে সেই হয়ে যাবে’ বলে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। যা থেকে বাড়ছে খন্দকার মোশতাক কায়দায় শেখ হাসিনার জীবনহানির শংকা।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে অনেক অর্জনের সঙ্গে বড় একটি অর্জন দেশটির গোয়েন্দা সক্ষমতা বেড়েছে। এরজন্যে নানান জঙ্গি তৎপরতা অঙ্কুরেই বিনাশ করা সম্ভব হচ্ছে। অনেকে হয়তো জানেননা বাংলাদেশের গোয়েন্দারা এখন শুধু ফোনে নয়, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, ইমো, হোয়াটসআপ এসবেও আড়ি পাততে সক্ষম। এনটিএমসি(ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার), এলআইসি সহ সব আইনশৃংখলা বাহিনীর পৃথক পৃথক আড়পাতা দল সক্রিয়। বাংলাদেশের সর্বশেষ আইনে এই আড়িপাতা বৈধ। আড়িপাতার নানা প্রযুক্তি বাংলাদেশ যে দেশটি থেকে কিনেছে সে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় এটি পৃথক এজেন্সির মাধ্যমে কিনতে হয়েছে। এরমাঝে হোয়াটসআপে আড়ি পাতার বিষয়টি সবচেয়ে ব্যয়বহুল। হোয়াটআপের নির্দিষ্ট একটি সিম আড়ি পেতে মনিটরিং’এ মাসে এক লক্ষ ডলার খরচ হয়। গোয়েন্দাদের এই পাতাল ধকল টের পান বিরোধীদলের নেতারা। মূহুর্তে তাদের কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে গোয়েন্দারা যে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের দুর্নীতিবাজদের ফোনে আড়ি পাতছিলেন সেটি এখন সংশ্লিষ্টরা টের পাচ্ছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক গোলাম রাব্বানির সঙ্গে দলের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা সাদ্দাম হোসেনের কথোপকথনে কোটি টাকার ঈদ সেলামি ভাগাভাগির কথোপকথনের অডিও এভাবেই ভাইরাল হয়েছে। যুবলীগের নামে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সৃষ্ট মাফিয়া রাজত্বের বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছবার পর এসবের বিরুদ্ধে অলআউট এ্যাকশনে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এতে কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপও বেরুচ্ছে। ঢাকার যুবলীগ কেন্দ্রিক নানাকিছুর সঙ্গে শেখ সেলিম, শেখ মারুফের সংশ্লিষ্ট ভূমিকা চলে আসছে সামনে। এসব আগে শেখ হাসিনা জানতেননা এমন নয়। দেশের মানুষও এখন জানছে। এখন জানা যাচ্ছে শেখ সেলিম শুধু যুবলীগ না, ঢাকার পুলিশের পোষ্টিং নিয়ন্ত্রন করতেন। ঢাকার বিভিন্ন স্পা-ম্যাসেজ পার্লারে অভিযান নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন এতে অভিযানের মূল লক্ষ ব্যাহত হচ্ছে কিনা। বলা হচ্ছে এই অভিযানের লক্ষ শেখ মারুফকে বার্তা দেয়া।
থাইল্যান্ডের বড় এক কোম্পানির সংশ্লিষ্টতায় গড়ে ওঠা গুলশান-বনানীর সেক্স ইন্ডাস্ট্রির অনেক কিছুর বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বৈধতা নেই। এসবের নেপথ্যের নিয়ন্ত্রক শেখ মারুফ। জাহাঙ্গির কবির নানক-মির্জা আজম সহ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানান ব্যবসার বিবরনাদিও সরকার প্রধানকে দেয়া হয়েছে। তমা কন্সট্রাকশনের নাম এখন মুখে মুখে। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পরপর যুবলীগ প্রধান ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া তাঁর কপাল পুড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরপর বিভিন্ন বাহিনী প্রধানের বৈঠকে আত্মীয়-পরিবার সম্পর্কে তাঁর পুরনো ব্যাখ্যাটি আবার নতুন করে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন তাঁর আর রেহানার ছেলেমেয়ে ছাড়া তাঁর আর কোন আত্মীয়-পরিবার নেই। তলব করা হয়েছে ওমর ফারুক এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে। এরসব কিছু শেখ সেলিমকে বার্তা দেয়া। ৭১ বছর বয়সী যুবলীগ প্রধান ওমর ফারুক শেখ সেলিমের ভগ্নিপতি।
বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে সেই বৈঠকেই যুবলীগ নামীয় মাফিয়া ডন সম্রাটকে গ্রেফতারের নির্দেশটি দেয়া হয়। কিন্তু সম্রাট এমন একজনের বাড়িতে আছে সেখানে অভিযান চালাতে বিব্রত বোধ করছে আইনশৃংখলা বাহিনী। ঢাকার ৬টি ক্যাসিনো থেকে মিরপুরের সালাউদ্দিন নামের একজন প্রতিদিন তিরিশ লক্ষ টাকা তুলতো। এর প্রমানপত্র পেয়েও সংশ্লিষ্টরা বিব্রত। কারন সে নিজেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের বন্ধু পরিচয় দেয়। এ নিয়ে লেখার পর সাংবাদিকতার নীতিমালা শেখাতে ফোন করেছিল মিরপুরের সালাউদ্দিন। জি কে শামীমকে গ্রেফতারের আরেক দিক বেরিয়ে আসাতেও অনেকে বিব্রত। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিশানকে ব্যবহার করে বড়বড় টেন্ডার বাগাতো জি কে শামীম। তার গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃশ্যপট থেকে জিশানকে সরিয়ে সেখানে ঢুকে পড়েছে বিদেশ থেকে দেশে ফেরা জোসেফ-হারিস। তারা চাইছে জি কে শামীমের হাতে থাকা কাজকর্ম তাদের ঠিক করা লোকজনই শেষ করবে। বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য আজও এসব টেন্ডার দুর্নীতির জন্যে মানসম্মত নির্মান হচ্ছেনা। এটি সরকারের বিরুদ্ধে জনগনকে সরাসরি প্রভাবিত-ক্ষুদ্ধ করে।
চলতি অভিযান শুরুর পর নিউইয়র্কের সংবাদ সম্মেলনে এবং পরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভয়ডরহীন বডিল্যাঙ্গুয়েজ দেখে অনেকেই চমকে উঠেছেন। এতে করে দুর্নীতিবাজদের ভয়ডর আরও বেড়েছে। একজন লোক নিজে দুর্নীতিমুক্ত এবং নিজের বিবেকের কাছে কত স্বচ্ছ হলে এমন ভয়ডরহীন কথা বলতে পারেন! কিন্তু এই অভিযান কতোটা চলবে তা নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম না, সারাদেশের চিত্র একই। খুব কম বর্তমান এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান অথবা স্থানীয় নেতাকর্মী পাওয়া যাবে যারা কোন না কোনভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।
এক সাবেক মন্ত্রীর ভাগ্নি জামাই এই পরিচয়ে একজন সাংবাদিক ৭৬ কোটি টাকার কালো টাকা সাদা করেছেন! এমন ঘটনা অনেক। এরজন্য নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হতাশ উচ্চারনে বলেছেন দুর্নীতি না হলে দেশ আরও বেশি এগিয়ে যেতো। অনেকের শংকা এই অভিযান শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিচ্ছে।
কিন্তু এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন শুভাকাংখী হিসাবে আমি চাইবো এই অভিযান অব্যাহত থাকুক। স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগের পাপ-তাপ ধারন করে যীশুর মতো প্রান দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শেখ হাসিনাতো তাঁরই মেয়ে। বাংলাদেশ এর আগে এমন সাহসী শাসক আর পায়নি। এমনকি আমার কাছে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর চেয়েও সাহসী। দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তা করতে ভারতের মতো একশ-পাঁচশ-এক হাজার টাকার নোট বাতিল করা যেতে পারে। এতে মানুষের দূর্ভোগ হবে জানি। কিন্তু তাতে দুর্নীতিবাজরাও আরও প্রকাশিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী না, পুলিশ-পেশাজীবীদেরও জবাবদিহির আওতায় আনলে খুশি হবে দেশের মানুষ। পরিবহন-শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাত-মিডিয়ার দুর্নীতি নির্মূলের এখনই সময়। ধান-চালের দাম, পিঁয়াজ সহ নানা ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে যে সব দুর্নীতি হয়, সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ্যাকশনে গেলে জনগন উপকৃত হবে।
সারাদেশে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিমুক্ত নেতাকর্মী-প্রশাসনের সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছেন। কৃষকরা, গরিব মানুষজনের সিংহভাগ দুর্নীতিমুক্ত। তাদের নিয়েও এলাকায় এলাকায় বের করা যেতে পারে দুর্নীতি বিরোধী মিছিল। সেখানে বলা হবে দুর্নীতিবাজ কেউ যাতে সে মিছিলে না আসে। সৎ ব্যবসায়ীরা আসবে। অসৎ ব্যবসায়ীরা না। মনে রাখতে হবে দুর্নীতি শুধু সরকারি দলেই হয়না। বাংলাদেশের এক পরিবারে তিন ভাই থাকলে তিনজন তিন দল করেন। এর কারনে বেশিরভাগ পরিবার সবসময় সরকারি দলভূক্ত। এমন সৎ মানুষের মিছিল-সমাবেশ যত বেশি হবে সে সব সমাবেশে শেখ হাসিনার জন্যে যত দোয়া করা হবে, মানুষ তত যুক্ত হবে শেখ হাসিনার পিছনে। এরমাঝে দুর্নীতিবাজরা যদি শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রও করে, মানুষকে সংযুক্ত করলে তারা কামিয়াব হতে পারবেনা। তাদের সামাজিক ট্রায়াল দেখেই তারা পালাবে। নয়বা মারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা পড়বে। প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনার ভাই বলছি, অভিযান চলুক। আপনার সেকেন্ড লাইফ অবিস্মরনীয় হোক। এমন সাহস খালেদা এরশাদ করতে পারেনি। কারন তারা জানতো তারা সৎ মানুষ না। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।