সিডনির বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে বেড়িয়ে গেলেন মা দুর্গা।

সিডনির বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে বেড়িয়ে গেলেন মা দুর্গা।

অজয় দত্ত: হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় আনন্দ আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশাল জনগোষ্ঠীর অনেক আনন্দ, উল্লাস এবং বিনোদনের আনুষ্ঠানিকতা লক্ষ করা যায় এমন উৎসবে। বাংলাদেশের মত এবার মা দুর্গা সিডনির বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে গেলেন গত ৪ঠা অক্টোবর থেকে ৮ই অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত। সম্পূর্ণ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের সাথে সারাম্বরে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সিডনির সব পূজা প্রাঙ্গনে। অস্ট্রেলিয়াতে সব সংগঠনই সপ্তাহিক ছুটির দিনের সাথে মিল রেখেই পূজার আয়োজন করে। এইবারের দুর্গা পূজার তিথী যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ছিল তাই সিডনির বেশির ভাগ সংগঠন একই দিনে পূজা উদযাপন করে।

সিডনিতে এবার ১৬টি মণ্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয় তার মধ্যে একমাত্র আগমনী অস্ট্রেলিয়া হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ৫ দিন পূজার আয়োজন করে থাকে। এইবারও তার বাতিক্রম ঘটেনি। তিথি অনুযায়ী গত ৪ঠা অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার মহা ষষ্টির মাধ্যমে শুরু হয়ে ৮ই অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার দশমীর মাধ্যমে আগমনীর দুর্গা পূজা সফল ভাবে সম্পন্ন হয়। ষষ্টি থেকে দশমী পর্যন্ত তিথি অনুসারে পূজা, আরতি এবং বিভিন্ন আচার আচরণ পালন করা হয়।বিভিন্ন সংগঠনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মধ্যে লক্ষ করার মত ছিল সুসজ্জিত বিশাল পূজা মণ্ডপ, সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মঞ্চ, অতিথি পরিবেশনা এবং দশমীর সিধুর খেলা। এইবারের পূজা উপলক্ষে সিডনির সংগঠন গুলো ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দুর্গা পূজা উদযাপন করে। বাংলাদেশ পূজা অ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করে তাদের ২৫তম বার্ষিকী পূজা। বিভিন্ন রকম আয়োজনের মাধ্যমে তারা তাদের এই ২৫তম পূজা আয়োজন সফল করার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। আভা নামে বাংলাদেশি আর একটি সংঘটন তিন দিন এর পূজার আয়োজন করে। অন্যদিকে শঙ্খনাদ নামে একটি নুতন সংগঠন প্রথমবারের মত ৪ দিন ব্যাপী দুর্গাপূজার আয়োজন করে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের আদলে। এছাড়া বিএসপিসি, ভক্ত মন্দির, নবরুপ এবং আরও কয়েকটি বাংলাদেশি এবং পশ্চিমবঙ্গ সহ ইন্ডিয়া এবং নেপাল ভিত্তিক হিন্দু সংগঠন এবার দুর্গাপূজার আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করে সিডনিতে।
দুর্গা পুজা আসলেই চারিদিকে একটা সাজ সাজ রব এবং সবার মনে একটা অন্যরকম আনন্দ-উত্তেজনা কাজ করে। উৎসব উৎসব পরিবেশ বিরাজ করে। পূজার সময় মন উদ্বেলিত হয় না এমন বাঙালি হিন্দু পাওয়া মশকিল। ঘরের ভিতর থেকে বাহির সবখানে সব কিছুতেই কেমন যেন সবার মধ্যে একটা প্রয়াস থাকে ভাল কিছু করার, ভাল কিছু দেওয়ার এই দুর্গা পুজাকে ঘিরে।

সাত সমুদ্র তের নদী পেড়িয়ে সব বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে সেই উত্তেজনা কাজ করে। ইনটারনেট,ফেসবুক এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন ফেসবুক খুললেই দেখা যায় পূজার নিত্য নূতন কোন সংবাদ বা ভিডিও। যেমন কেউবা শাড়ি কাপড় বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে আবার কেউবা কিনবার জন্যও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, আবার কেউবা অথবা কোনো সংঘটন তাদের পূজার প্রস্ততি বা অন্য কোনো সংবাদ দিচ্ছে, এমন কি কেউ কেউ লাইভও শেয়ার করছে তাদের চেষ্টা বা প্রয়াস কে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবার জন্য।

অতীত বা বর্তমানেও দেখা যায় পুজা আসলে রীতিমত একটা প্রতিযোগিতা হয়-ই। পূজা সংশ্লিষ্ট সবাই ব্যস্ত থাকে বা সবারই চাওয়া থাকে যেন তার বাড়ির বা সংঘটনের পূজাটা সবচেয়ে সুন্দর হয়, তদ্রুপ কারও বাড়ির মণ্ডপ সুন্দর, কারো ঠাকুর সুন্দর, কারো ডেকোরেশন, কারো ভাল প্রসাদ বিতরণ করার প্রয়াস থাকে।

বাংলাদেশের দুর্গা পূজার সময় অনেকেই পূজার দিন সকালে ফুল তুলার প্রতিযোগিতা যেমন বেড়িয়ে যেতেন বেশি ভাল করার প্রয়াসে যা ছিল আনন্দের এবং ভালোবাসার। তারই ছোঁয়া সিডনির বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে লেগেছিল একটু ভিন্ন ভাবে।

অস্ট্রেলিয়া এর মত জায়গায় দুর্গা পূজা আয়োজন করা চাট্টি খানি কথা নয়। মা দুর্গা আগামী বছর আবারও সিডনির সবগুলো মণ্ডপেও বেড়াতে আসবেন। জয় হোক মানব ধর্মের, জয় হোক সনাতন ধর্মের, জয় হোক পৃথিবীর সকল ধর্মের সেই কামনা করেই পরিশেষে এই উৎসবের পরিসমাপ্তি হয় ।